সীমান্ত সুরক্ষা নিয়ে এ বার চিনের সঙ্গে চুক্তি
ব্রিটিশদের চাপিয়ে দেওয়া সীমান্ত-বিরোধের উত্তরাধিকার থেকে বেরিয়ে আসতে উদ্যোগী এ বার ভারত ও চিন। ১৪টি দেশের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে চিনের। ১৩টির সঙ্গেই সীমান্ত-সমস্যা মিটিয়ে ফেলেছে তারা। নয়াদিল্লির সঙ্গেও এ বার সীমান্ত নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ, অস্থিরতা ও কূটনৈতিক উত্তেজনা সামলানোর একটা উপায় বার করতে চায় বেজিং। এবং সেই লক্ষ্যে আগামী ২৩ তারিখ একটি নতুন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (বর্ডার ডিফেন্স কো-অপারেশন প্রপোজাল বা সীমান্ত প্রতিরক্ষা সহযোগিতা প্রস্তাব)-এ সই করতে চলেছে দু’দেশ।
মনমোহন সিংহ তাঁর দ্বিতীয় দফার প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রায় শেষ পর্বে এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপটি করতে চলেছেন বলে বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর। চলতি সপ্তাহে রাশিয়া যাবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে চিন। ওই সফরেই সই হওয়ার কথা নতুন প্রতিরক্ষা মেকানিজমে। যা বাস্তব রূপ পেলে ভারত-চিন সীমান্ত পরিস্থিতিতে বদল আনার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবেই চিহ্নিত হতে পারে বলে বিদেশ মন্ত্রকের আশা। তবে এখনই পুরোপুরি নিশ্চিত হতে নারাজ সাউথ ব্লক। চিনের প্রশ্নে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তারা সতর্ক থাকতে চাইছে।
চলতি বছর মে মাসে ভারতে এসেছিলেন চিনা প্রধানমন্ত্রী লি খ্যছিয়াং।
তাঁরই আমন্ত্রণে এ মাসে বেজিং যাবেন মনমোহন।
মনমোহনের এই সফরের আগে, গত কয়েক মাসে ভারত এবং চিনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা স্তরে কম পক্ষে চারটি বৈঠক হয়েছে বিষয়টি চুড়ান্ত করতে। বেজিং সীমান্ত নিয়ে মেকানিজমের এই প্রস্তাবটি দিয়েছিল প্রায় আট মাস আগে। তাদের প্রাথমিক খসড়াটি সম্পর্কে যথেষ্ট আপত্তি ছিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের। কারণ তাতে বলা হয়েছিল, সীমান্তে টহলদারির বিষয়ে সমস্ত তথ্য জানাবে দিল্লি। যা ভারতের অধিকারে হস্তক্ষেপ। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, বেশ ক’বার বিষয়টি চালাচালির পর দু’পক্ষের কাছেই গ্রহণযোগ্য খসড়া তৈরি হয়েছে।
গত ছ’মাস ধরেই সীমান্তে একের পর এক সমস্যা তৈরি করে আসছে ড্রাগনের দেশ। বছরের গোড়ায় চিনা সেনার অনুপ্রবেশ এবং টানা কুড়ি দিন এ দেশের ভূখণ্ডে ঘাঁটি গেড়ে বসে থাকায় যার সূত্রপাত। দীর্ঘ দৌত্যের পর রক্তপাতহীন ভাবে চিনা সেনাকে ফেরানো গেলেও তার পরেও বারবার ঘটেছে অনুপ্রবেশ, এমনকী ভারতের জমিতে চিনা পতাকা উড়িয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা। দু’দেশের বর্তমান নেতৃত্ব আলোচনার পথে এই জাতীয় ঘটনা মেটানোর স্থায়ী ব্যবস্থা গড়তে চায়।
চিনে নয়া নেতৃত্ব দায়িত্বে আসার পরে প্রথমে ভারত সফরে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী লি খ্যছিয়াং। তখন পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত ছিল যে হায়দরাবাদ হাউসের বৈঠকে বসে কোনও চটজলদি সমাধানের চেষ্টা করেননি কোনও পক্ষই। শুধু তৈরি করা হয়েছিল ভবিষ্যতের কৌশল। খ্যছিয়াং নিমন্ত্রণ করেন মনমোহনকে। খ্যছিয়াংয়ের সঙ্গে বৈঠকের পরে প্রধানমন্ত্রী শুধু বলেছিলেন, “ওয়েস্টার্ন সেক্টরে সাম্প্রতিক ঘটনা থেকে যে শিক্ষা পাওয়া গিয়েছে, তা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। সীমান্তে শান্তি ও সুস্থিতি বজায় রাখার জন্য আরও ব্যবস্থা নিতে আমাদের বিশেষ প্রতিনিধিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দু’দেশের মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে যে বিশেষ প্রতিনিধিরা দ্রুত বৈঠকে বসে আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাবেন।”
সেই ঐকমত্যকে সম্বল করেই চিনে যাচ্ছেন মনমোহন। বেজিংয়ের নতুন নেতৃত্বের তরফেও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার ধারণাকে আরও স্বচ্ছ করে তোলার ক্ষেত্রে খানিকটা তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। বেজিং সূত্রে বলা হচ্ছে, ভারত বাদে আর সব দেশের সঙ্গে সীমান্ত-সমস্যা মিটে গিয়েছে চিনের। সে দেশের ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ-এর ডিরেক্টর গাও ঝিকাই জানিয়েছেন, “রাশিয়া-সহ চিনের ১৪টি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে ১৩টির সঙ্গেই সীমান্ত বিবাদ মিটিয়ে ফেলা গিয়েছে। বাকি শুধু ভারত। ব্রিটিশদের চাপিয়ে দেওয়া এই জটিলতা থেকে বেরিয়ে আসতে ভারত ও চিনকে পদক্ষেপ করতে হবে।” কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, সম্প্রতি সীমান্ত বরাবর ভারতের পরিকাঠামো তৈরি করার প্রবণতা যতই বাড়ছে, ততই অস্বস্তি বাড়ছে বেজিংয়ের। চিনা সীমান্তের ধারে বিমানবন্দরের আধুনিকীকরণ, সুখোই-স্কোয়াড্রন গড়ে তোলা, কোর মাউন্টেন গ্রুপ তৈরি করার মতো বিষয়গুলিতে রক্তচাপ বাড়ছে ড্রাগনের। সেই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সুসম্পর্কে বারবার কাঁটা হয়ে ওঠা বিষয়গুলিকে মিটিয়ে ফেলার একটা ব্যবস্থা গড়ে রাখতে চায় বেজিং। সব ঠিকঠাক এগোলে আসন্ন মনমোহন-খ্যছিয়াং বৈঠকেই সেই পদক্ষেপ করা হবে বলে আশা করছে বিদেশ মন্ত্রক।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.