পুজোয় টানা ঝড়বৃষ্টি কেড়ে নিল ছ’টি প্রাণ
ষ্টমীর বিকেলের পর থেকে টানা বৃষ্টি, ঝড়ে বহু ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে। মারা গিয়েছেন ছ’জন। সপ্তমীর দুপুর পর্যন্ত আসানসোল তেমন ঝড়বৃষ্টি না হলেও অষ্টমীর বিকেলের পর থেকেই ছন্দপতন হয়। ক্ষয়ক্ষতি বিশেষ না হলেও আসানসোল দক্ষিন থানার বস্তিন বাজার এলাকায় ঝড়ে বহুপ্রাচীন একটি দালান বাড়ি ভেঙে পড়ে মৃত্যু হয় দু’জনের। গুরুতর জখম হয়েছেন আরও চার জন।
জল থইথই আসানসোল রেলপাড়। ছবি: শৈলেন সরকার।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম সবিতা দেবী (৪৫) ও কপিল সাউ (১১)। এছাড়াও আসানসোল উত্তর থানার গাড়ুই নদীতে কাজল কর্মকার (২৬) নামে এক যুবক তলিয়ে যায়। পরে রেলপাড় এলাকার হাজিনগরের কাছে এক নদী থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার করা হয়। আসানসোলের মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষয়ক্ষতি আটকাতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রায় ৩৬ ঘণ্টা ধরে বিপর্যয় মোকাবিলাকারী দল বিভিন্ন এলাকায় উদ্ধারকাজ চালায়। বস্তিন বাজার এলাকার দালানবাড়ি ভেঙে পড়ার খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে বাড়ি চাপা পড়ে থাকা ছ’জনকে উদ্ধারও করে। তাঁদের মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হলে দু’জনকে মৃত বলে জানান চিকিৎসকেরা। বাকিদের ভর্তি করে নেওয়া হয়।
ফুঁসছে দুর্গাপুর ব্যারাজ। ডুবেছে নলকূপও।
এছাড়াও অষ্টমীর রাতে মোটরবাইকে সেনর্যালে রোড ধরে বাড়ি ফিরছিলেন লাউদোহার বাসিন্দা কাজল কর্মকার। কণ্যাপুরের কাছে গাড়ুই নদীর জল উপচে সেতুর উপর দিয়ে বয়ে যাওয়ায় তিনি বুঝতে না পেরে মোটরবাইক সমেত জলের তোড়ে ভেসে যান। পরের দিন রেলপাড় এলাকা থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার করা হয়।
জামুড়িয়াতেও প্রবল বৃষ্টি ও ঝড়ে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে দুই দোকানীর। জামুড়িয়ার পড়াশিয়া জন কল্যাণ সমিতির পুজোর মেলায় দোকান করেছিলেন তাঁরা। মৃতদের নাম বুদ্ধেশ্বর হাজরা (২৫) ও সুরেশ বাদ্যকর (১৯)।
টানা বৃষ্টি সঙ্গে ডিভিসি-র ছাড়া জলে প্লাবিত বড়জোড়ার সীতারামপুর কলোনি।
প্রথম জনের বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনা এবং দ্বিতীয় জন কুলটির বরাকরের বাসিন্দা। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার দুপুর ২টো নাগাদ ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই মণ্ডপ ভেঙে পড়ে। পাশেই মেলায় জনা পঞ্চাশ দোকানি পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন। মণ্ডপের বাঁশ ভেঙে বিদ্যুৎবাহী তার সমেত ওই দোকানের উপর পড়ে। তাতেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ওই দুই ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছেন আরও আট জন। তবে আপাতত তাঁরা সুস্থ। ওই দিনই অন্ডালের ভাদুর গ্রামের কাছে একটি পেট্রোল পাম্পের শেড উড়ে এক কর্মী আহত হন। পাম্পের অদূরে দু’টি বাড়ির চালা ও একটি বন্ধ গুমটিও উল্টে যায়।
কাটোয়ায় ঝড়ে ধসেছে বাড়ির চাল।
প্রবল বৃষ্টিতে একটি মাটির বাড়ির দেওয়াল চাপা পড়ে কাঁকসার ঘুটগড়িয়ায় মৃত্যু হয়েছে এক বৃদ্ধের। ভৈরবচন্দ্র দাস (৭০) নামে ওই বৃদ্ধ মন্দিরে যাচ্ছিলেন। তখনই গ্রামেরই এক বাড়ির দেওয়াল ভেঙে পড়ে তাঁর উপর। কাঁকসার বসুধা গ্রামেও কয়েক মিনিটের প্রবল ঝড়ে বেশ কিছু বাড়ি ভেঙে পড়ে। স্থানীয়রা জানান, ঘরের চাল উড়ে, মাটির বাড়ি ধসে জখম হন জনা ১২ বাসিন্দা। গাছ পড়ে একাধিক জায়গায় বিদ্যুতের তারও ছিঁড়ে যায়। প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রায় ৭০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত। মারা গিয়েছে বেশ কিছু গবাদি পশু। জেলা পুলিশ সুপার এসএমএইচ মির্জা জানান, পুলিশের পক্ষ থেকে ছ’বস্তা চাল, এক ক্যুইন্টাল চিড়ে, দু টিন গুড়, চল্লিশটি ত্রিপল ইত্যাদি ত্রাণ পাঠানো হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামে দুর্গতদের রান্না করা খাবার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। জামাকাপড়, কম্বলও দেওয়া হয়েছে। সোমবার গ্রামে গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে এসেছেন জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন।
জল জমেছে কালনা শহরের নানা জায়গায়। আউশগ্রামের বনকুল গ্রামে ঝড়ে উপড়েছে গাছ।
প্লাবিত হয়েছে কাঁকসার সিলামপুর এলাকার কিছু অংশ ও সীতারামপুর মানা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শ’দুয়েক পরিবার। দুর্গাপুর পুরসভার পক্ষ থেকে মেয়র পারিষদ প্রভাত চট্টোপাধ্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য রান্না করা খাবারের ব্যবস্থা করেন। মেয়র অপূর্ব মুখোপাধ্যায় জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির হাতে ত্রিপল তুলে দেওয়া হয়েছে। সিলামপুর এলাকায় দামোদরের জলে প্রায় ৩০টি বাড়ি প্লাবিত হয়েছে। তাঁদের স্থানীয় একটি প্রাথমিক স্কুলে থাকার ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। ত্রাণ সামগ্রীও পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
তবে আচমকা ডিভিসি-র জল ছাড়ার প্রতিবাদ জানিয়ে তৃণমূলের পক্ষ থেকে দুর্গাপুরের ডিভিসি কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখানো হয় এ দিন। তৃণমূল নেতা প্রভাত চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “আগাম না জানিয়ে ডিভিসি জল ছেড়েছে। ফলে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। বিপাকে পড়েছেন শ’দুয়েক পরিবার। এর দায় ডিভিসি কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে।” ডিভিসির এক আধিকারিক জানিয়েছেন, বিষয়টি তাঁরা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন।

ছবি তুলেছেন বিকাশ মশান, মধুমিতা মজুমদার, অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় ও উদিত সিংহ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.