ডিসেম্বরের মহাযুদ্ধ
ডিসেম্বরের শেষে কলকাতায় খুব গরম পড়তে চলেছে। এটা কোনও আবহাওয়ার পূর্বাভাস নয়। এটা বাংলার বক্স অফিসের আগাম পূর্বাভাস।
কারণ?
এখনও অবধি পাওয়া খবর ডিসেম্বরের শেষে নাকি মুক্তি পেতে চলেছে বাংলার দুই ম্যাগনাম ওপাস। শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের ‘চাঁদের পাহাড়’ আর রিলায়্যান্স এন্টারটেনমেন্টের ‘জাতিস্মর’। হয়তো ধীরেসুস্থে কাজ করলে দুটি ছবি পরের বছর মুক্তি পেতে পারত। কিন্তু হঠাৎ ডিসেম্বরের শেষেই দুই মেগা বাজেটের ছবি আসায় চড়চড় করে বাড়ছে টালিগঞ্জের তাপমাত্রা।
ইন্ডাস্ট্রি সূত্রের খবর ‘বস’য়ের সাফল্যের পর থেকেই চাপা উত্তেজনা ছিল ভেঙ্কটেশ আর রিলায়্যান্সের মধ্যে। আজ মুক্তি পেতে চলেছে সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ভেঙ্কটেশ প্রযোজিত ‘মিশর রহস্য’। এ ছবির প্রচার যখন তুঙ্গে ঠিক সেই সময়ই প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় অভিনীত, সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘জাতিস্মর’য়ের মুক্তির দিন ঘোষণা করে দেয় রিলায়্যান্স। সেই ছবি মুক্তি পেতে চলেছে ২০ ডিসেম্বর। যদিও কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘চাঁদের পাহাড়’য়ের মুক্তির দিনক্ষণ এখনও নির্দিষ্ট হয়নি, তবে ডিসেম্বরের ২০ বা ২৭ তারিখে তা মুক্তি পাবে বলে ঠিক হয়েছে।
দুটোই বড় মাপের বাংলা ছবি। তার সঙ্গে আমির খানের ‘ধুম থ্রি’ মুক্তি পাচ্ছে ২০ ডিসেম্বর। সত্যি কি বাংলার বক্স অফিস এই রকম একটা টক্করের জন্য প্রস্তুত?
‘জাতিস্মর’ আর ‘চাঁদের পাহাড়’দুটো ছবির জন্য দর্শকের উত্তেজনার শেষ নেই। তা বলে এই ভাবে জেদাজেদি করে একই সময় দু’দুটো বড় মাপের ছবি রিলিজ করার কারণটা কী? বক্স অফিস সংঘাতটা কি শুধুমাত্র কাকতালীয় একটা ঘটনা? নাকি দুই প্রযোজকের ক্ষমতা দেখানোর লড়াই?
ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের কর্ণধার শ্রীকান্ত মোহতার বক্তব্য, ‘চাঁদের পাহাড়’ তৈরির সময়ই তাঁরা ঠিক করেছিলেন যে ছবি ডিসেম্বরে মুক্তি পাবে। আর সেটা মাথায় রেখেই পোস্ট প্রোডাকশনের কাজে তাঁরা হাত দেবেন বলে ঠিক করেছেন। ও দিকে রিলায়্যান্স এন্টারটেনমেন্টের অর্থ দফতরের মুখ্য অধিকর্তা শিবাশিস সরকারের বক্তব্য, তাঁরাও নাকি দিনটা ভেবেচিন্তেই ঠিক করেছিলেন। বলছেন, “প্রায় পনেরো বছর আগে বলিউডে শুধু ইনডিপেন্ডেন্ট প্রযোজক ছিলেন। যেমন সুরজ বরজাতিয়া, মুকেশ ভট্ট প্রমুখ। কিন্তু এখন প্রচুর কর্পোরেট এসে গিয়েছে। ইউটিভি, ইরস, ভায়াকম এইট্টিন এরা প্রত্যেকেই সিনেমা বানাচ্ছে। বলিউডে রিলায়্যান্সও সিনেমা প্রযোজনা করছে। আমরা যখন ছবির কাজ করি, তখন এক বছরের প্ল্যান করে এগোই। ‘জাতিস্মর’ বানানোর সময় ঠিক করেছিলাম যে ছবিটি ২০ ডিসেম্বর মুক্তি পাবে। ‘জাতিস্মর’ একটা বড় বাজেটের সিনেমা। তাই যে কোনও শুক্রবার আমরা ছবিটিকে রিলিজ করতে পারি না। ক্রিসমাস আর নববর্ষের উইকএন্ড-এর মার্কেটটা ধরতে চেয়েছিলাম আমরা।”



‘চাঁদের পাহাড়’ ‘জাতিস্মর’
তবে ‘ধুম থ্রি’ও রয়েছে ওই একই দিনে। তার পরও কেন এই রকম একটা রিস্ক নেওয়া? একটু রয়েসয়ে তো আগামী বছর গোড়ার দিকেও ছবিটা রিলিজ করা যেত। জানুয়ারি মাসের ২৩ থেকে ২৬-এর উইকএন্ড-এ তো অনেক ক্ষেত্রেই বড় ছবি মুক্তি পেয়ে থাকে।
এর উত্তরে শিবাশিস বলছেন, “২৬ জানুয়ারি রবিবার পড়েছে। তাই আমরা এক দিন কম পাব। যদি ২০ ডিসেম্বর রিলিজ না করি, তা হলে পরের বছর পয়লা বৈশাখ বা পুজোতে ফিল্মটা রিলিজ করতে হত। আপাতত যা প্ল্যান রয়েছে, তাতে অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর ‘বুনো হাঁস’ আমরা পয়লা বৈশাখ রিলিজ করতে চাই। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের পরের ছবি ‘চতুষ্কোণ’-এর শু্যটিং শুরু হবে নভেম্বর থেকে। সব ঠিক থাকলে ওটা পরের বছর পুজোতে রিলিজ করব। তাই ‘জাতিস্মর’কে আমাদের ডিসেম্বরের ২০ তারিখ রিলিজ করা ছাড়া উপায় নেই। আরও একটা ব্যাপার আছে। এই রকম একটা বড় ছবির মোশন পিকচার আমরা সব সময় কোনও বড় হিন্দি ছবির সঙ্গে দেখাই। এ ক্ষেত্রে আমরা সারা বাংলাতে ‘বেশরম’-এর সঙ্গে ‘জাতিস্মর’-এর মোশন পিকচারটা দেখিয়েছি।”
তবে শিবাশিস ব্যাপারটা যতই সহজ ভাবে দেখাতে চান না কেন, টালিগঞ্জে গুজবটা আলাদা। অনেকেই মনে করছেন, রিলায়্যান্স-এর তরফ থেকে এসভিএফ-কে একটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া হয়েছে এখন। এটা বোঝাতে যে তাদের মতো কর্পোরেট হাউসের দৌড়ও কম নয়! তারা সাফ বুঝিয়ে দিতে চায় যে, তারাও বাংলা ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম বড় প্লেয়ার। তারা নিজেদের ছবি নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী রিলিজ করবে। অন্য কোনও প্রোডাকশন হাউজের কথা মাথায় রেখে নয়। রিলিজ নিয়ে এই রকম জটলা সম্পর্কে শ্রীকান্ত মোহতাকে জিজ্ঞাসা করায় তিনি সাফ জানিয়ে দেন যে তাঁরা চ্যালেঞ্জ নিতে ভয় পান না। “আমরা তো প্রথম থেকেই ‘চাঁদের পাহাড়’ এই সময় রিলিজ করব বলে ঠিক করেছিলাম। এখন শুনছি ‘জাতিস্মর’য়ের রিলিজ ডেটের কথা,” বলছেন তিনি।
এটা কি তাঁর কাছে রিলায়্যান্সের তরফ থেকে চ্যালেঞ্জ বলেই মনে হচ্ছে? “মনে তো তাই হচ্ছে। দেখুন, এর আগেও রিলায়্যান্স বাংলাতে ছবি করেছে। তার রিলিজ নিয়ে কেউ খোঁজও রাখে না। বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের ছবি ছিল সেটা। তবে এটুকু বলব, এ রকম অনেক চ্যালেঞ্জ দেখেছি আমরা। আমাদের প্ল্যান অনুযায়ী ‘চাঁদের পাহাড়’ রিলিজ করব,” বলছেন তিনি।
তা হলে কি কোনও সমাধান নেই টক্করটা এড়ানোর? “না,” বলছেন শ্রীকান্ত। “আমি যদি রিলিজ ডেট-টা পিছিয়ে দিই, তা হলে আমার অন্য ছবিগুলোর রিলিজের প্ল্যানটা ভেস্তে যাবে। রিলায়্যান্স তাদের ছবি পেছোতে পারে, কিন্তু আমি যত দূর খবর পেয়েছি, ওরা তা করবে না,” জানাচ্ছেন তিনি। ‘চাঁদের পাহাড়’ কি ২৩ জানুয়ারি থেকে ২৬ জানুয়ারির উইকএন্ডে রিলিজ করা যায় না? “ওই সময় তো কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবিটা রিলিজ করার কথা ভাবছি। তার পর আমাদের আরও ৮-১০টা ফিল্ম রয়েছে। সেগুলো তো এক এক করে রিলিজ ডেট ঠিক করতে হবে,” জানাচ্ছেন শ্রীকান্ত।
ডিসেম্বরে আবার মুক্তি পেতে চলেছে প্রসেনজিতের আরও একটা ছবি। আইসল্যান্ডে শ্যুট করা গৌরব পাণ্ডের ‘হনুমান ডট কম’ মুক্তি পাবে ৬ ডিসেম্বর।
তিন মাসের মধ্যে তিনটে বিশাল বাজেটের, চ্যালেঞ্জিং ছবির রিলিজ!
একটু গ্যাপ হলে ভাল হত না? কানাঘুষোতে এও শোনা গিয়েছিল যে, প্রসেনজিৎ নাকি টিম ‘জাতিস্মর’য়ের রিলিজ ডেট নিয়ে এত ক্ষুব্ধ যে ছবিটির ডাবিংও করতে রাজি হননি। “না, সেটা একদম ঠিক নয়। ইন আ ম্যারেজ দেয়ার ক্যান বি সাম মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং। সব ঝামেলা মিটে গিয়েছে,” বলছেন শিবাশিস। কোনও ভাবেই কি তিনি ‘জাতিস্মর’য়ের রিলিজ ডেট পেছোবেন না? “আপাতত পেছোব না। তবে এটাও বলছি যে, কোনও র্যাশনাল মানুষই চায় না অন্য কোনও প্রযোজকের ক্ষতি করতে। কারণ আমরা একই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করি। এই নিয়ে কোনও আলোচনা হলে আমরা নিশ্চয়ই তাতে অংশগ্রহণ করব।”
আর প্রসেনজিৎ? তিনি কী বলছেন? বাংলা মার্কেটটা ছোট। তার মধ্যে এই রকম দুই বড় ব্যানারের টক্কর হলে কি তাতে ইন্ডাস্ট্রির কোনও লাভ হবে? প্রসেনজিৎ বলছেন, “হ্যাঁ, আমি ‘জাতিস্মর’য়ের জন্য ডাবিং করছি।” তবে তার সঙ্গে এটাও বলছেন যে ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যবসা করতে গেলে একসঙ্গে ছবি রিলিজ না করাই ভাল। “এখন তো সবে অক্টোবর। ডিসেম্বর আসতে অনেক দেরি। দেখুন না, কি হয়,” বলছেন তিনি।
মেঘ ঘনিয়ে এলেও প্রসেনজিৎ আশাবাদী। হয়তো টক্করটা এড়ানো যেতেও পারে।
তার মানে কি বলা উচিত, পিকচার আভি বাকি হ্যায় মেরে দোস্ত?



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.