|
|
|
|
শত্রু
যেমন
বেড়েছে
পাগলুও
বেড়েছে |
আজ ‘মিশর রহস্য’ মুক্তির দিন পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়-য়ের কথাতেও রহস্যের ঘনঘটা। সমাধানে ইন্দ্রনীল রায় |
আপনি তো সবার প্ল্যান ভেস্তে দিচ্ছেন দেখছি!
কেন? আমি আবার কী প্ল্যান ভেস্তে দিলাম?
ভেস্তে দিচ্ছেন কারণ, সপ্তমীর সকালটা না-হয় নতুন জামা পরে আড্ডা মেরে কাটিয়ে দেবে বাঙালি, কিন্তু বিকেলে ঠাকুর দেখবে, না ‘মিশর রহস্য’, এই নিয়ে তো আলোচনা তুঙ্গে।
হা হা হা, ঠাকুর দেখবেন তো বটেই, কিন্তু তার আগে কাকাবাবু আর সন্তু, মিশরে কী করল সেটাও দেখে আসুন। পুজোর আড্ডাটা তো তা হলে আরও জমবে।
কেন যাব বলুন তো বালিগঞ্জ কালচারাল কী সুরুচি সংঘ ছেড়ে কাকাবাবুকে দেখতে?
যাবেন এই কারণে, কাকাবাবু দেখলে গত তিরিশ বছরের সব পুজো আপনার দেখা হয়ে যাবে। সেই পুজোর সময়ের প্রেমের কথা মনে পড়বে। কাকাবাবু তো আমাদের সবার ফেলে-আসা নস্টালজিয়া। সেই কারণেই কাকাবাবু দেখবেন।
সপ্তমীর সন্ধেবেলা সৃজিত মুখোপাধ্যায়কে কোনও প্যান্ডেলে দেখা যাবে?
আমার কাছে এই পুজোতে দুটো প্যান্ডেল সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। একটা প্রিয়া, আর একটা আইনক্স সাউথ সিটি মল। এই দু’টো প্যান্ডেলে, আজকে বিকেল থেকে গেলেই আমাকে দেখতে পাবেন।
শুনলাম কাকাবাবু নিয়ে আপনি খুব রিল্যাক্সড। এই তো সে দিন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের জন্মদিনের পার্টিতে অনেক রাত অবধি ছিলেন, নাচানাচি করলেন।
অনেক রাত নয় তো। দু’টো অবধি ছিলাম। তার পর যে যার ঘরে চলে যাই।
আপনি কার ঘরে গেলেন?
(হেসে) নিজের।
সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের মিডল নেম ‘নকটারনাল’ এটা কিন্তু অনেকেই বলেন।
ঠিক বলেন। রাত জাগার অভ্যেসটা আমার বহু দিনের। সেই যখন চাকরির সঙ্গে সঙ্গে থিয়েটার করতাম সেই সময় থেকেই আমার বডি ক্লক চেঞ্জ হয়ে গেছে। আজকে আমি পাক্কা ইনসোমনিয়াক।
তা, রাতে কী করেন?
স্ক্রিপ্ট লিখি। বই পড়ি। পরের ফিল্মের বিষয় নিয়ে ভাবি। পড়াশোনা করি। টিভি দেখি।
এ বার তা হলে ‘মিশর রহস্য’-এ ফিরি?
বলুন।
|
|
মিশরের মরুভূমিতে সৃজিত |
|
প্রথম দিন থেকে এই ছবি নিয়ে নানা আলোচনা। কখনও শোনা গিয়েছিল ছবিটা হবে না। তার পর প্রসেনজিতের সঙ্গে আপনার ভুল বোঝাবুঝি...
হ্যাঁ, কত কিছু হয়েছিল ছবিটা শুরু হওয়ার আগে। আজকে কিন্তু ফিরে তাকালে মনে হয় আমরা একটা ‘ওয়ান্স ইন আ লাইফটাইম’ ছবি বানিয়ে ফেলেছি। এই ছবিটার সঙ্গে যারা যারা জড়িত, তারা কিন্তু তাদের নাতি-নাতনিদের এই ছবিটা বানানোর পেছনের গল্পটা সারা জীবন বলতে পারবেন।
কেন বলছেন?
বলছি কারণ, আমরা একটা আসল রেভোলিউশনের মধ্যে একটা সিনেমা বানিয়ে ফেলেছি। সারাক্ষণ এই ছবির শ্যুটিং চলাকালীন ট্যুরিজম পুলিশ থাকত। আপনি তো ছিলেন শ্যুটিংয়ে। আপনি তো জানেন। পদে পদে বাধা ছিল, এমনকী দু’ দিন শ্যুটিং বন্ধ রাখতে হয়েছিল। আমাদের শ্যুটিং কোঅর্ডিনেটরকে মিনিস্ট্রি লেভেলে কথা বলতে হয়েছিল। আর যেহেতু কেউ ভাষা বুঝত না, বেশির ভাগ শ্যুটিং ‘ডাম্বশ্যারাড’য়ে হয়েছিল। সব কিছু নিয়েই ব্যাপারটা হাইলি মেমরেবল।
অনেকে তো বলেছিল ছবিটা হবে না!
হ্যাঁ, প্রথম দিন থেকেই লোকে স্নিগার করেছে। টিটকিরি মেরেছে যে, এমন ছবি করা অসম্ভব।
প্রসেনজিতের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি নিয়ে আপনি কোনও দিন কথা বলেননি। আজ বলুন তো ঠিক কী হয়েছিল?
কিছু মানুষ বুম্বাদাকে গিয়ে বলেছিল, আমি কাকাবাবু করতে খুব একটা আগ্রহী নই। বুম্বাদা চাইছে বলে আমি ছবিটা করছি। কী বলব এদের কে জানে? যদি দেখেন ‘হেমলক...’য়ের পর ছ’মাস কিন্তু আমি বাড়িতে বসে ছিলাম। আমি অ্যাডামেন্ট ছিলাম কাকাবাবু করলে বুম্বাদাকে নিয়েই করব। আমি বুম্বাদাকে ভেবেই স্ক্রিপ্ট লিখেছিলাম। সেই সময় অনেক হিতাকাঙ্ক্ষী মানুষ আমাকে এসে বলেছিলেন, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় যখন করছে না, মিঠুন চক্রবর্তীকে নিয়ে নাও। আমি কারও কথা শুনিনি, কারণ আই হ্যাড আ ভিশন, আর সেটা থেকে আমি এক চুলও নড়িনি।
এই ছবির বাজেটও তো প্রচুর?
হ্যাঁ, ইট’স আ বিগ বাজেট ফিল্ম। আর শ্রীকান্ত মোহতা কোনও দিন আমাকে বাজেট কমাতে বলেওনি। আমি যে ভাবে শ্যুট করতে চেয়েছিলাম, যে ভাবে ছবির মাউন্টিংটা ভেবেছিলাম, ঠিক সে ভাবেই বানিয়েছি। কেউ আমাকে বলেনি, মিশরের মরুভূমিতে যেতে হবে না, রাজস্থানে শ্যুটিং করে নাও।
প্রায় সবাই বলে ভেঙ্কটেশের সবচেয়ে প্যাম্পার্ড পরিচালকের নাম সৃজিত মুখোপাধ্যায়।
(খুব হেসে) না না, ভেঙ্কটেশ ফিল্মস্ তাদের সব পরিচালককেই খুব প্যাম্পার করে। সেটা সৃজিত হোক, কী বিরসা, কী কমলদা, কী কৌশিকদা। একবার শ্রীকান্তদা কী মণিদার স্ক্রিপ্ট পছন্দ হয়ে গেলেই ওরা অন্য লেভেলে প্যাম্পার করে। আর একটা জিনিসও এখানে বলতে চাই...
কী?
আমি আর বুম্বাদা এই নিয়ে আলোচনা করেছি। ‘মিশর রহস্য’ যদি সুপার-ডুপার হিটও হয়, তবু কিন্তু এটা ব্রেকইভেন করবে। তার কারণ পশ্চিমবঙ্গে একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক দর্শক আছে। তার থেকে বেশি লোক তো দেখতে পারবে না ছবিটা। কারণ তার থেকে বেশি মানুষই নেই। তত
হলও নেই। তাই বলছি, ‘মিশর রহস্য’ কিন্তু কমার্শিয়ালি ফিজেবল প্রোজেক্ট নয়। হয়তো পরে স্যাটেলাইট রাইটস্ বিক্রি হলে টাকা কামাবে ছবিটা বা পরের ফ্র্যাঞ্চাইজিটা হলে আরও বেশি রেভিনিউ জেনারেট হবে।
|
|
‘কাকাবাবু’ প্রসেনজিৎ |
|
একটু অন্য প্রসঙ্গে যাই। লোকে বলে ইন্ডাস্ট্রিতে মাত্র তিন বছরে সবচেয়ে বেশি শত্রু বানিয়েছে সৃজিত মুখোপাধ্যায়। কেন বলুন তো?
হা হা হা। সেটা তো আপনারা বলবেন। তবে কী জানেন, ‘শত্রু’ যেমন বেড়েছে, তেমন ‘পাগলু’ও তো বেড়েছে আমার। তাই না?
ভেরি স্মার্ট অ্যানসার।
আর শত্রু বাড়া ভাল। যদি আপনার শত্রু না বাড়ল, তা হলে বুঝবেন আপনি তেমন ভাল কাজ করছেন না। আমি খুশি শত্রু বাড়ায়।
অনেকে মনে করে আপনি যেমন একটা অমায়িক ভাবমূর্তি নিয়ে ঘুরে বেড়ান, তত অমায়িক আপনি নন।
(হেসে) কী বলি বলুন তো...
মানে যতটা ক্যাজুয়াল, সাধু সাধু একটা ভাব নিয়ে ঘোরাফেরা করেন, সেটা ঠিক নয়।
আদতে আপনি সাঙ্ঘাতিক কম্পিটিটিভ।
ইয়েস, দ্যট ইজ ট্রু। আমি সাঙ্ঘাতিক কম্পিটিটিভ। তবে আমার কম্পিটিটিভ হওয়ার মধ্যে কোনও নেগেটিভিটি নেই। একটা উদাহরণ দিই। ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’ দেখে, ‘মেঘে ঢাকা তারা’ দেখে, কী ‘শব্দ’ দেখে মনে হয়েছিল বাক্স-পত্তর গুছিয়ে আমার চলে যাওয়া উচিত। সত্যি ভেবেছিলাম ছবি বানানো ছেড়ে দেব।
এটা সত্যি সত্যি অনুভব করেছিলেন? না ফেক ছিল? অনেকেই মনে করে আপনার এই অন্যকে প্রশংসা করাটা ফেক।
একেবারে সত্যিই সেটা মনে হয়েছিল। সেটা সব চেয়ে ভাল বলতে পারবে আমার আশেপাশের মানুষেরা। এই কাজগুলো দেখে আমি সেই পরিচালকদের স্যালুট জানিয়ে নিজে আরও ভাল কাজ করার অনুপ্রেরণা পাই। যেমন, ‘শব্দ’ দেখতে দেখতে মনে হয়েছিল, ইস্ এই ছবিটা যদি ডিরেক্ট করতে পারতাম, যদি টাইটেল কার্ডে আমার নাম থাকত। এটাও বলি, আমি তাদেরকে হিংসেও করি। কিন্তু আমার হিংসের মধ্যে কোনও নেগেটিভিটি নেই। আমার হিংসে আছে, হিংসা নেই।
মানে কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে আপনি ইনসিকিওর্ড নন বলছেন?
না না একেবারেই না। আমি একটা জিনিস বুঝি ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’ ভাল চলেছিল বলে ‘শব্দ’ কিছু সংখ্যক মানুষ দেখেছিল। ‘শব্দ’ ভাল চলেছিল বলে ‘মিশর রহস্য’ আরও বেশি কিছু মানুষ দেখবে। বাংলা ছবির টুপিতে প্রত্যেকটা পালক আমাকে গর্বিত করে। এখানে কাউকে নিয়ে ইনসিকিওর্ড হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
মৈনাক ভৌমিক মনে করেন এই যে শহুরে বাংলা ছবির রমরমা, সেটার পথিকৃৎ আপনি। ‘অটোগ্রাফ’য়ের পর থেকেই...
দ্যাট’স ভেরি কাইন্ড অব মৈনাক। হ্যাঁ, ‘অটোগ্রাফ’য়ের পর থেকে একটা জোয়ার নিশ্চয়ই হয়েছিল, কিন্তু দরজাতে টোকা কিন্তু আগে থেকেই মারা হচ্ছিল।
মানে ‘অনুরণন’, ‘বং কানেকশন’ থেকেই
রাইট। এমনকী ‘অন্তহীন’। এমনকী ‘পাতালঘর’ও দরজায় ধাক্কা মেরেছিল। আর একটু পিছিয়ে তাকালে দেখবেন ‘পারমিতার একদিন’, ‘উৎসব’, ‘শুভ মহরৎ’ এই ছবিগুলো কিন্তু মানুষের ভাল লেগেছিল, কিন্তু সামগ্রিক ভাবে বড় ধাক্কাটা মারে ‘অটোগ্রাফ’। ইনফ্যাক্ট বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে আশির দশকে তো একটা সময় এসেছিল যখন একটু অন্য ধরনের বাংলা ছবির কথা বললে দর্শকরা ভয় পেয়ে যেত। থ্যাঙ্ক গড, সেই সময়টা আমরা পেরিয়ে এসেছি। আর তাতে ‘অটোগ্রাফ’য়ের একটা বড় হাত আছে।
আচ্ছা, আপনার আর একটা বদনাম আছে জানেন?
কী?
টালিগঞ্জের অনেকে বলেন, ইউ হ্যাভ বিকাম টু বিগ ফর ইয়োর বুটস্।
(হেসে) এমনি কোম্পানি হলে ১০ নম্বর। বাটা হলে ৯। বিশ্বাস করুন আমার পায়ের সাইজ বাড়েনি।
এটা কি সত্যি আপনি সমালোচনা সহজে মেনে নিতে পারেন না?
না না, অবশ্যই পারি। |
|
তা হলে শুনি যে, আপনার নামে কোনও অ্যান্টি-স্টোরি বেরোলে কী আপনার সমালোচনা করলে কান্নাকাটি করেন। এতটাই সেন্সিটিভ সৃজিত মুখোপাধ্যায়?
হা হা হা, কান্নাকাটি করেছি কয়েক সময়। কিন্তু সমালোচনা নিয়ে আমার কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু আমার অসুবিধা হয় যখন আমার ইন্টিগ্রিটি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। আমার কাছে আমার ইন্টিগ্রিটিটাই আমার ইউএসপি। সেটা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুললে, আই
ফিল টেরিবল।
এটা কি আপনি ‘২২শে শ্রাবণ’য়ের স্ক্রিপ্ট অনুকরণ করার কন্ট্রোভার্সির কথা বলতে চাইছেন?
হ্যাঁ, আজকে আমার কাছে একটা স্ক্রিপ্ট তৈরি আছে। ‘ডজন’। কিন্তু আমি সেই ছবিটা শুরু করতে পারছি না কারণ আমি একটা লাইন ব্যবহার করতে চাই কিন্তু সেটার পারমিশন পাচ্ছি না।
কী লাইন?
ছবিটা শুরুর আগে আমি শুধু লিখতে চাই ‘অ্যাডাপ্টেড ফ্রম রেজিন্যাল্ড রোজ’স টুয়েলভ অ্যাংরি মেন’। আমি সেই পারমিশনটা এখনও পাইনি। সেটার জন্য আমি মেট্রো-গোল্ডউইন-মেয়ার অবধি পৌঁছে গেছি। আমি যদি একটা লাইনের জন্য একটা ছবি করা থেকে তিন বছর বিরত থাকতে পারি তাহলে তার পরেও কেউ আমার ইন্টিগ্রিটি নিয়ে প্রশ্ন তুললে খারাপ তো লাগবেই। এবং জেনে রাখুন আমার কাছে কিন্তু প্রযোজক থেকে অভিনেতা সবাই ছিল, কিন্তু তাও আমি শুরু করিনি ছবিটা।
কিন্তু এই ব্যাপারে টালিগঞ্জের কিছু পরিচালকই তো অভিযোগ তুলেছিল।
হ্যাঁ, জানি।
তাঁদের কারও কারও সঙ্গে তো আপনি আগামী ছবিতে কাজও করছেন?
হ্যাঁ, করছি।
কেন?
কারণ ছবি বানানোর ব্যাপারে আমি রুথলেস। তখন আমি ব্যক্তিগত ভাল লাগা, খারাপ লাগাকে পাত্তা দিই না। আমি শুধু আমার কাজটা ভাল ভাবে করতে চাই। ‘২২শে শ্রাবণ’ রিলিজের পর তো আর কেউ টু শব্দটুকু করতে পারেনি। তার পর সবাই চুপ করে গিয়েছিল। আলটিমেটলি দ্য ট্রুথ উইল প্রিভেইল।
কিন্তু ওই কন্ট্রোভার্সির দরুন আপনার দাঁত-নখ কিন্তু বেরিয়ে গিয়েছিল।
(হাসি)
সংবাদ মাধ্যমকে আপনি হিটলারের প্রোপাগ্যান্ডা মিনিস্টার গোয়েবলসের সঙ্গে তুলনা করতেও ছাড়েননি ফেসবুকে।
ইয়েস। আই ওয়াজ ডিপলি ডিসটার্বড। এমন একটা জায়গায় আঘাত দেওয়া হয়েছিল, যেটা হার্ট মাই ইন্টিগ্রিটি। তুমি বলো আমি স্ক্রিপ্ট লিখতে পারি না। বলো আমি সিনেমা বুঝি না। বলো আমার ক্যামেরা উইক। বলো আমি খারাপ সংলাপ লিখি। আমি সব কিছু মেনে নেব। সেগুলো কোনওটাই তুমি বলতে পারছ না। তা হলে কী করা? ব্যাটাকে সিনেম্যাটিক দিক থেকে যখন আটকানো যাচ্ছে না তখন চলো পার্সোনালি অ্যাটাক করি। দ্যট ইজ স্যাড। তবে এখন আমি পালটে গেছি। কারণ আমি বুঝতে পেরেছি এটা নিন্দুকদের স্ট্র্যাটেজি মাত্র। কাজেই এই সব মিথ্যাচার আর আমায় অ্যাফেক্ট করে না।
এই যে ‘চাঁদের পাহাড়’ হচ্ছে, কখনও মনে হয়, ইস্ ‘চাঁদের পাহাড়’টা যদি আমি বানাতে পারতাম?
মনে আবার হবে না! অবশ্যই হয়। ‘চাঁদের পাহাড়’ তো বাংলা সাহিত্যের অনুরাগী যে কোনও পরিচালকের কাছেই স্বপ্নের প্রোজেক্ট।
আপনি বানালেও কি দেবকে নিতেন?
হ্যাঁ, দেবকে নিতাম। তার কারণ শঙ্করের চরিত্রের ফিজিক্যালিটি।
পরম পারত না?
পরম বোধহয় একটু বেশি সফিস্টিকেটেড হয়ে যেত। শঙ্করের মধ্যে একটা মেঠো ব্যাপার আছে, যেটা দেবের মধ্যে রয়েছে। পরম অনেক শহুরে।
আপনাকে কিন্তু অনেকে হিংসে করেন।
কেন?
অক্টোবরে ‘মিশর রহস্য’, ডিসেম্বরে অ্যান্টনি ফিরিঙ্গিকে নিয়ে বানানো ‘জাতিস্মর’। এর মধ্যেই তার পরের ছবি ‘চতুষ্কোণ’য়ের শ্যুটিং শুরু হবে।
বিশ্বাস করুন, আমাকে হিংসে করার কোনও অবকাশ নেই। আমি এমন একটা মানুষ যে তিন বছর কোনও ছুটিতে যাইনি। জন্মদিনের দিন আমাকে প্রথম উইশ করে আমার ডিআই কালারিস্ট। দিনে আমি তিন-চার ঘণ্টার বেশি ঘুমাতে পারি না।
পয়সাকড়ি তো অনেক কামাচ্ছেন?
(হেসে) সত্যি বলছি সেটাও কামাচ্ছি না। সেটা কামালে তো তবু একটা ইনসেনটিভ থাকত। যেটা কামাচ্ছি সেটা হল বহু মানুষের ভালবাসা। একটা জিনিস খুব পরিষ্কার আমার কাছে। আমি এখানে শুধু গল্প বলতে এসেছি। আমি পেজ থ্রি-তে মুখ দেখাতে চাই না। চাঞ্চল্যকর সাক্ষাৎকার দিতে চাই না। গসিপ করতে চাই না। শুধু ভাল গল্প বলতে চাই।
কিন্তু টালিগঞ্জের সব গসিপের খবর তো আপনি রাখেন?
হ্যাঁ, তা রাখি। সেটার কারণ আমার অফিস মানে টালিগঞ্জ হল গসিপ জোন। সব গসিপ আমার কানে আসে। কিন্তু কী বলুন তো। ও সব নিয়ে ভাবতে চাই না। এটুকু বুঝি, আমরা সবাই একদিন মরে যাব। তখন এই রাগ, অভিমান, ঘেন্না, প্রেম, রক্ত, মাংস, হাড় সব পুড়ে, গলে যাবে। থেকে যাবে কিছু সিডি যাতে লেখা থাকবে, ‘আ ফিল্ম বাই সো অ্যান্ড সো’। আমাদের পুরো এগ্জিসটেন্সটা একটা চাকতি মানে ডিভিডি-তে পরিণত হবে। আমি শুধু ওই ডিভিডি-টা, যা মানুষ মনে রাখবে, সেটা মন-প্রাণ দিয়ে বানানোর চেষ্টা করছি।
শুনলাম মুম্বই যাচ্ছেন খুব শিগগিরি।
হ্যাঁ, ইচ্ছে আছে। মুম্বইতে ছবি বানাব, কিন্তু বেস থাকবে আমার কলকাতায়।
বিপাশা বসু নাকি আপনাকে খুব সাহায্য করছেন?
হা হা হা। আবার আপনি শুরু করলেন। বিপাশা ইনিশিয়ালি আমাকে সাহায্য করেছিল কিন্তু ওর সঙ্গে অনেক দিন কথা হয়নি। আর বিপাশা ছাড়াও মুম্বইতে আমার বন্ধু আছে। আমার প্রথম ছবির প্রোডিউসর মধু আছে। সবাই হেল্প করছে।
আচ্ছা, আপনাকে নিয়ে একটা ধারণা আছে, আপনার নাকি সব সময় ক্রাচ লাগে। কখনও সেই ক্রাচের নাম ‘নায়ক’ কখনও ‘অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি’?
‘২২শে শ্রাবণ’য়ে ক্রাচ কী ছিল?
না ‘২২শে শ্রাবণ’য়ে ছিল না কিছু।
তা হলে? দেখুন, আমার ছবির প্রথম দর্শক আমি। কোনও গল্প যদি আমাকেই অ্যাপিল না-করে তবে অন্যকে অ্যাপিল করবে কী করে বলুন তো? আমার প্রত্যেকটা ছবিতে একটা ইউএসপি থাকে।
অনেকেই যাকে বলেন ‘সৃজিত মুখার্জি’স প্যাকেজিং’?
হ্যাঁ, তা বলতে পারে। তবে আজকের ছবিতে এই ইউএসপি থাকাটা খুব জরুরি। যেমন ধরুন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবি। তার ছবিতে গল্পটা এমন একটা বাঁক নেয়, সেটাই হয়ে ওঠে সেই ছবির ইউএসপি। অপর্ণা সেনের ‘জাপানিজ ওয়াইফ’ ধরুন। পুরো গল্পের প্রেমাইজটাই ছিল বিজার। কিন্তু ওই বিজার কনসেপ্টটাই ওই ছবিটার ইউএসপি। সাধারণ থেকে আলাদা আপনাকে হতেই হবে। তবে ‘ক্রাচ’ কথাটা আমার পছন্দ নয়। ওটার ভিতর একটা নেগেটিভ কনোটেশন আছে। ‘জলসাঘর’য়ের সময় তো কেউ সত্যজিৎ রায়কে বলেননি ছবি বিশ্বাসকে ক্রাচ হিসেবে ব্যবহার করছেন। কী ‘সোনার কেল্লা’র সময় ওঁকে শুনতে হয়নি ফেলুদার জনপ্রিয়তাকে ক্রাচ বানাচ্ছেন।
এ বার আর একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি। সব ইন্টারভিউতে তো আপনি বলেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় আপনার বন্ধু, আর কিছু নয়। তাই সেটা মেনে নিচ্ছি। তাই জন্য কি রাত দেড়টার সময় পাটায়ার বিচে পাওলি দামের সঙ্গে সমুদ্রস্নানে যান?
হা হা হা। এই অশ্বথামা হত, ইতি গজ-টা ব্রিলিয়ান্ট। তা হলে শুনুন, রাত দেড়টার সময় পাটায়ার বিচে সাত জন মানুষ ছিল। তিন জন পাড়েই বসে ছিল, চার জন সমুদ্রে নেমেছিল। এই খবরটাও তারাই ছড়িয়েছে। আমি তাদের নাম করব না কারণ তাদের সবার পরিবার আছে। আজকে ক্লিয়ার করছি, পাওলির সঙ্গে মোটেই ওয়ান টু ওয়ান স্নান হয়নি। ওটা ছিল গণস্নান। (খুব হেসে)
ইন্ডাস্ট্রিতে সবচেয়ে রোভিং আই বলা হয় আপনার।
ইয়েস, আমি চারিদিকে দেখি। জীবন থেকেই তো গল্পের উপাদান পাওয়া যায়।
চারিদিকে কি না জানি না, আপনি মেয়েদের দিকে একটু বেশি দেখেন?
না না, ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে সবাইকে দেখি। এবং প্লিজ আমাকে আন্ডারএস্টিমেট করবেন না। বেশ কিছু বিখ্যাত পুরুষের সঙ্গেও আমার প্রেমএটাও শুনেছি আমি।
কিন্তু রাতে আপনার টয়োটা এটিওসের সামনের সিটে তো বিশেষ ছেলেকে দেখি না?
না না, প্রচুর ছেলে বসে। শেষ তিন বছরে সব চেয়ে বেশি রাত আমি কাটিয়েছি আমার ছবির এডিটর বোধাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায় আর আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট সৌম্যব্রত রক্ষিতের সঙ্গে, যারা ভীষণ ভাবে ছেলে। (হেসে)
বিয়ে করবেন না?
বিয়ে তো করে ফেলেছি।
কাকে?
(হেসে) বাংলা ছবিকে।
প্লিজ এটা কিন্তু একদম ফ্লপ বাংলা কমার্শিয়াল ছবির ডায়ালগ হয়ে গেল। এটা সৃজিত মুখোপাধ্যায় সুলভ একদম হল না।
হা হা হা হা।
|
|
|
|
|
|