|
|
|
|
পুজোয় দিন বদলের স্বাদ কোরক হোমে
অনির্বাণ রায় • জলপাইগুড়ি |
গ্রিল দিয়ে ঘেরা দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে রোজ বিকেলে মার কথা ভাবতে চেষ্টা করে ১৩ বছরের সুরেশ। ৭ বছর বয়সে হারিয়ে গিয়েছিল বাড়ি থেকে। হোমের খাতায় ওর পরিচয় অনাথ। শহরেরই একটি স্কুলে পড়ে সুরেশ। হেঁটে স্কুলে যায়। মার মুখটা প্রতিদিনই একটু করে স্মৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। বিকেলে হোমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশ দেখে। মার মুখটা প্রাণপনে মনে করার চেষ্টা করে। ট্রেন থেকে উদ্ধার হয়েছিল ভবঘুরে বিক্রম। পাড়ার এক দাদার সঙ্গে কাজের খোঁজে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল। তার পরে এক স্টেশন থেকে অন্য স্টেশন. একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের হাত ঘুরে ঠাই হয়েছে হোমে। বাড়ির ঠিকানাটাও এখন মনে করতে পারে না। চুরির মামলায় অভিযুক্ত সহদেব আর বাড়ি ফিরতে চায় না। পরিবারের একজনের হাত ধরেই অপরাধে জড়িয়ে পড়েছিল ও। তীব্র অভিমানে বাড়ির কথা ভুলে যেতে যায়। হোমের ঘরের দেওয়ালে ক্যালেণ্ডার কেটে ছবি লাগায়। সুরেশ, বিক্রম, সহদেব (আসল নাম নয়) জলপাইগুড়ির কোরক হোমের আবাসিক। সরকারি অনাথ, ভবঘুরে এবং অভিযুক্ত শিশু কিশোরদের জন্য হোম কোরকের আবাসিকদের প্রকৃত পরিচয় লেখার বিধি নিষেধ রয়েছে। তবে পুজোর দিনগুলিতে ততটা কড়াকড়ি নেই। পঞ্চমীর আগেই হোম কর্তৃপক্ষ ৭২ জন আবাসিকের জন্য নতুন জামা-কাপড়ের ব্যবস্থা করেছেন। হোম কর্তৃপক্ষের অনুরোধে ষষ্ঠীর বিকেলেও ওদের আরও নতুন জামা-কাপড় উপহার দিলেন বিচার বিভাগের এক শীর্ষ আধিকারিক। সাধারণত, সন্ধ্যার পরে হোম থেকে বের হতে দেওয়া হয় না আবাসিকদের। পুজোর দিনগুলিতে ওদের হোম থেকে গাড়িতে করে ঠাকুর দেখার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন জলপাইগুড়ির জেলা পুলিশ সুপার। শহরের বিগ বাজেটের পুজোগুলিতে ওদরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। সেই মতো জেলা পুলিশ সুপারকে অনুরোধ করা হয়। তার পরেই ওদের ঠাকুর দেখার ব্যবস্থা হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “পুজোর দিনগুলিতে সকলেই ঠাকুর দেখার ভিড়ে সামিল হয়। আমরাও কর্তব্যের খাতিরে বিভিন্ন মণ্ডপে যাই। কোরক হোমের আবাসিকদের ঠাকুর দেখানোর প্রস্তাব পেয়ে আর দুবার ভাবনার অবকাশ ছিল না। দেখা যাক ওদের জন্য আর কী করতে পারি।”
আবাসিকদের খাবারের মেনুও পাল্টে যায়। সকারি হোমের আবাসিকদের কোনদিন কী খাওয়ার দেওয়া হবে তার তালিকা রয়েছে। বড় বোর্ডে সে তালিকা টাঙানোও রয়েছে হোমের অফিসে। যদিও পুজোর দিনগুলিতে সেই তালিকায় বাড়তি সংযোজন আইসক্রিম আর মিষ্টি। সেই সঙ্গে পুজোর কদিন মুরগির মাংস, মাছ, ডিমের নানা পদ থাকে। হোমের সুপার জানালেন, সরকারি নির্দেশ মতো আবাসিকদের মেনু তৈরি হলেও পুজোর দিনগুলিতে ব্যতিক্রম। |
|
|
|
|
|