|
|
|
|
বাগান বন্ধ, তবু পুজো করবেন চা শ্রমিকেরা
নিজস্ব সংবাদদাতা • বানারহাট |
পঞ্চমীর দিন সন্ধ্যায় প্রতিমা এনে বাগানের কারখানার সামনে স্থায়ী মণ্ডপে রাখা হয়েছিল। কথা ছিল ষষ্ঠীর সকালে মায়ের মুখ খুলে দেওয়া হবে। কিন্তু বৃহস্পতিবার, ষষ্ঠীর সকালে বাগানে পাতা তোলার কাজে যাওয়ার প্রস্তুতির সময় কয়েক জন শ্রমিক লক্ষ করেন কারখানার গেটে তালা ঝুলছে। তাতে ঝুলছে সাসপেনশন অব ওয়ার্কের নোটিশ। শ্রমিকেরা জানতে পারেন, ম্যানেজার থেকে সহকারী ম্যানেজার গভীর রাতে বাগান ছেড়ে চলে গিয়েছেন। দাবানলের মতো বাগানে ছড়িয়ে যায় সে খবর। পুজোর বোধনের দিন মাথায় ছাদ ভেঙে পড়ে ডুয়ার্সের বানারহাটের তোতাপাড়া বাগানের ৮৭৯ জন শ্রমিকের। প্রথমে পুজো না করার সিদ্ধান্ত নিলেও পরে অবশ্য কোনওক্রমে পুজো সারার সিদ্ধান্ত নেন শ্রমিকেরাই। এর পরে বিকালে দলে দলে শ্রমিকরা মিছিল করে বানারহাট থানার সামনে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান।
কলকাতাতে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর ডুয়ার্স ও তরাই-এর চা বাগানগুলিতে ২০ শতাংশ বোনাস দেবার সিদ্ধান্ত হয়। তবে ওই হারে বোনাস দেওয়ার কথা অস্বীকার করেন মালিকপক্ষ। তাঁরা বাগানের শ্রমিকদের জানিয়ে দেন, দুই দফায় পুজোর বোনাস ১৫ শতাংশ দেওয়া হবে। এতেই শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। গত দশ দিন বাগানের কারখানার সামনে গেট মিটিং করা হয়। ঘেরাও করা হয় ম্যানেজারকে। বিষয়টি নিয়ে উত্তরবঙ্গের যুগ্ম শ্রম আধিকারিক মহম্মদ রিজওয়ান দুই দফায় বৈঠক ডাকেন। তবে তা ফলপ্রসূ হয়নি। তিনি বলেন, “মালিকপক্ষ বাগান বন্ধ করে দিয়েছেন। পুজোর পর বাগান চালু নিয়ে বৈঠক ডাকা হবে।” বাগান মালিক সংগঠন ইন্ডিয়ান টি প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের মুখ্য উপদেষ্টা অমিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, “বাগানটির আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। তাই মালিকপক্ষ ১৫ শতাংশ হারে বোনাসের কথা বলেছিলেন। শ্রমিকদের আন্দোলনে বাগানে ক্ষতি হচ্ছিল। শ্রমিক অসন্তোষ ও লোকসানের জেরে মালিকপক্ষ বাগান বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন।”
শ্রমিকরা জানান, শুধু বোনাস নয়, ৩১ সপ্তাহের রেশন বকেয়া। প্রায় ৩ কোটি টাকা পিএফ জমা পড়েনি। ৫০ লক্ষ টাকা গ্র্যাচুইটি বকেয়া রয়েছে। শ্রমিক আবাসগুলির অবস্থাও খারাপ। গতবার ১৮ শতাংশ হারে বোনাস হয়েছিল।
সিটুর জেলা সম্পাদক জিয়াউল আলম বলেন, “সরকার কড়া ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। বাগানটিকে কৃত্রিমভাবে লোকসান দেখিয়ে মালিকপক্ষের টাকা না দেওয়ার পরিকল্পনা আপাতত সফল হল।” এনইউপিডব্লুউ-র নেতা মণি ডার্নালের কথায়, “পুজোর সময় শ্রমিকেরা বিপাকে পড়ে গেলেন। প্রশাসনকে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে।” বোনাস মিললে নতুন পোশাক কিনবেন, এই আশায় দিন গুনছিলেন শ্রমিকেরা। বোনাস তো দূরের কথা, উল্টে বাগান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন সংসার চলবে কী ভাবে তা ভেবে পাচ্ছেন না শ্রমিকেরা। তবে পুজো হবে বলে শ্রমিকেরা জানিয়েছেন। বুধনি ওঁরাও এবং ফুলচাঁদ মহালির কথায়, “মাকে যখন মণ্ডপে এনেছি তখন পুজো হবে। প্রার্থনা করব দ্রুত যাতে অবস্থা পাল্টে যায়।” |
|
|
|
|
|