হাসপাতালের পরিকাঠামো নিয়ে অসন্তোষ সভাধিপতির |
মহকুমা হাসপাতাল পরিদর্শন করলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু। মঙ্গলবার দুপুরে এই হাসপাতালের বেহাল পরিকাঠামো দেখে সুপারের সামনেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
এ দিন সভাধিপতির সঙ্গে ছিলেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণব রায়, অতিরিক্ত জেলাশাসক হৃষিকেশ মোদি, কালনা ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ও হাসপাতালর সুপার।
গত দু’বছরে এই হাসপাতালে সরকারি প্রতিনিধি দলের পরিদর্শন এই প্রথম নয়। কিন্তু পরিকাঠামোর কোনও উন্নতি হয়নি। আড়াই বছর আগে প্রথম এই হাসপাতাল পরিদর্শন করেছিলেন সরকারি কমিটির সদস্য হুগলির সাংসদ রত্না দে নাগ। সঙ্গে ছিলেন সরকারি প্রতিনিধিরা। তারপর থেকে কখনও রাজ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, কখনও চিকিৎসক সুব্রত মৈত্রের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ কমিটি, কথনও জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক এই হাসপাতাল পরিদর্শনে এসেছিলেন। এই মহকুমা হাসপাতালটির বেহাল দশা দেখে তাঁরা প্রত্যেকেই বিভিন্ন ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। হাসপাতালের খোলনলচে বদলে ফেলার দাবি উঠেছিল। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বর্তমান জেলা সভাধিপতির এ দিনের কালনা হাসপাতাল ঘুরে দেখা হল সেই পরিদর্শন ফিরিস্তির শেষ সংযোজন। |
সাড়ে ১০টা নাগাদ পরিদর্শনকারী দলটি হাসপাতালে প্রবেশ করেন। পৌনে এগারোটা নাগাদ তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প প্রতিমন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। বর্হিবিভাগের সামনে জড়ো থাকা সাইকেল দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাঁরা। হাসপাতালের ভিতরে ঢোকার পরে সমস্যা আরও স্পষ্ট হয়। হাসপাতালের আনাচে কানাচে জমে থাকা জল ও আগাছা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করে সরকারি প্রতিনিধি দলটি। এক্স রে বিভাগের এক কর্মী জানান, ঘণ্টা দুয়েকের বৃষ্টি হলেই এক্স রে ঘরের ভিতর জল জমে যায়। এরপর ওই ঘরে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয়। তিনি অভিযোগ করেন, বার বার জানানো সত্ত্বেও পরিস্থিতি বদলায়নি। নার্সেরা হাসপাতালের মেডিসিন ও সার্জিক্যাল ওয়ার্ড দুটিকে এক করে দেওয়ার দাবি করেন। হাসপাতালে ভর্তি হতে আসা রোগীদের সামান্য কারণেই অন্যত্র স্থানান্তরিত করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন হাসপাতাল চত্বরে উপস্থিত স্থানীয় বাসিন্দারা। কেউ কেউ সুপারের বদলির দাবিও করেন।
পরিদর্শন শেষে হাসপাতালের সুপারের ঘরে প্রায় ঘণ্টাদেড়েক বৈঠক করেন সভাধিপতি। হাসপাতাল সূত্রে খবর, বৈঠক চলাকালীন দেবুবাবু সুপারকে জানান,সরকার ভেঙে পড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে নানা প্রকল্প এনেছে। কিন্তু এই হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে গেল গেল রব উঠছে। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হাসপাতালে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রোপ্রচারের হার কমা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।
বৈঠকের শেষে দেবু টুডু বলেন, “হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরিষেবার অবিলম্বে উন্নতি ঘটাতে হবে। চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতি নজরে এলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” রাজ্যের মন্ত্রী ও জেলা তৃণমূল সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথ জানান, অকারণে রোগীকে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা যাবে না। এই বিষয়ে ‘কড়া বার্তা’ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
কালনা মহকুমা হাসপাতালের স্বাস্থ্য পরিষেবা বদলানোর জন্য প্রশাসনিক ‘বার্তা’ আগেও অনেক বার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তেমন কাজ হয়নি। এ বার হবে কী? কালনা মহকুমার মানুষ এই উত্তরটাই খুঁজছে।
|