|
পুজোর মুখে টাকা পেল রাজ্যের
দুই রেল প্রকল্প
অনমিত্র সেনগুপ্ত • নয়াদিল্লি |
|
রাজ্যের জন্য জোড়া শারদীয় উপহার দিল্লির।
প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর জন্য একশো কোটি টাকা মঞ্জুর ও কাটোয়া-নিউ ফরাক্কা লাইনের বিদ্যুদয়নের কাজ শুরু করার সবুজ সঙ্কেত দিল রেল বোর্ড। পুজোর ঠিক মুখে রাজ্যের মানুষের জন্য এই জোড়া উপহার দেওয়ার পিছনে সলতে পাকানোর কাজটি অবশ্য করেছেন বহরমপুরের সাংসদ তথা রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী। গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বাংলার ওই দু’টি প্রকল্পের জন্য তদ্বির করেন অধীর। রেল মন্ত্রক সূত্রের খবর, তার পরেই বিষয়টিতে গতি আসে।
তৃণমূল কর্মীকে খুনের অভিযোগে সম্প্রতি বহরমপুর জেলা ও দায়রা আদালত রেল প্রতিমন্ত্রীকে ফেরার ঘোষণা করে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল। সে সময়ে প্রধানমন্ত্রী বিদেশে ছিলেন। মনমোহন গত সপ্তাহে দেশে ফেরার পরেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে গোটা বিষয়টি জানানোর জন্য তাঁর সঙ্গে দেখা করেন অধীর। রেল প্রতিমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ শিবিরের দাবি, সেখানেই নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করার পাশাপাশি বাংলার থেমে থাকা রেল প্রকল্পগুলি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দরবার করেন অধীর। তাই বাংলার ভাগ্যে পুজোর আগে শিঁকে ছিড়ল বলে জানাচ্ছেন রেল কর্তারা।
বর্তমানে ইস্ট-ওয়েস্ট নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে রেল (৭৬%) ও কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রক (২৪%)। রাজ্যের শেয়ার রেলের হাতে চলে আসার পর থেকে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজকেই বিশেষ প্রাধান্য দিতে চাইছিল রেল বোর্ড। ইতিমধ্যেই গোটা প্রকল্পটি মেট্রো রেলের জোনের আওতায় আনার ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রক। ওই প্রকল্পের অগ্রগতির ক্ষেত্রে জমি জটের পাশাপাশি টাকার অভাবও বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। টাকার অভাবে কার্যত থমকে গিয়েছিল ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ। পুজোর ঠিক আগে সেই কাজে গতি আনতে বাজেট ঘোষিত একশো কোটি টাকা দেওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই।
অর্থাভাবে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজের গতি কমে যাওয়ায় কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকারকেই দায়ী করেছে রাজ্যের তৃণমূল সরকার। এবং সেই সূত্রে অধীর চৌধুরীকেও বিঁধতে ছাড়েনি তারা। যদিও রেলের তরফে বলা হচ্ছিল, বাজেটে বরাদ্দ করা হলেও জমি জটের কারণে কাজ আটকে যাওয়ায় গত বার বিপুল পরিমাণ অর্থ ফেরৎ যায়। সে কারণে এ বারে বরাদ্দ হয়েছে নামমাত্র অর্থ। এই অবস্থায় রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণেই এই প্রকল্পের জন্য টাকা আনতে মরিয়া ছিলেন রেল প্রতিমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী তাঁর আর্জিতে সাড়া দেওয়ায় এখন যথেষ্টই স্বস্তিতে বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ।
রেল মন্ত্রক একশো কোটি টাকা মঞ্জুর করায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি (জাইকা)-র পক্ষ থেকে আরও চারশো কোটি টাকা ম্যাচিং গ্রান্ট পাবেন ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো কর্তৃপক্ষ। মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, “এই একশো কোটি টাকা মেট্রো রেলকে পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রক। সেখান থেকে এই টাকা চলে যাবে ইস্ট-ওয়েস্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। ওই টাকা পাঠিয়ে দেওয়ার পরেই ম্যাচিং গ্রান্টের টাকার জন্য অর্থ মন্ত্রকের কাছে তদ্বির করা হবে। কারণ বিদেশি ঋণ সরাসরি নিতে পারে না কোনও মন্ত্রক। অর্থ মন্ত্রকের মাধ্যমেই তা নিতে হয়।”
রেল বোর্ড সূত্রের বক্তব্য, কলকাতার অন্য মেট্রোগুলির তুলনায় তুলনামূলক ভাবে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর ক্ষেত্রে জমি সমস্যা কম। এই মেট্রোর বেশিরভাগ অংশই যাবে মাটির উপর দিয়ে। কিছটা অংশ যাবে মাটির নীচ দিয়ে। ফলে যেটুকু জায়গায় জমি নিয়ে সমস্যা রয়েছে, সেটা নিয়ে ইতিমধ্যেই দফায় দফায় রাজ্য সরকারের প্রশাসনিক আধিকারিক ও স্থানীয় বিধায়কদের সঙ্গে আলোচনায় চালিয়ে যাচ্ছে রেল মন্ত্রক। আপাতত চলতি বছরের জন্য আর্থিক সমস্যা মিটেছে। মন্ত্রকের বক্তব্য, চলতি বছরে যে কাজের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে, এই টাকায় তা সেরে ফেলা সম্ভব হবে। এখন জমি অধিগ্রহণের বিষয়টিতে সবুজ সঙ্কেত পেলেই ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ জোর কদমে কাজ শুরু হয়ে যাবে।
পাশাপাশি বাজেটে ঘোষিত হয়েও দীর্ঘ দিন ধরেই বরাদ্দের অভাবে আটকে ছিল কাটোয়া থেকে নিউ ফরাক্কা পর্যন্ত বিদ্যুদয়নের কাজ। ১৬০ কিলোমিটার লাইনের বিদ্যুদয়নে খরচ হবে প্রায় ২২০ কোটি টাকা। মন্ত্রকের বক্তব্য ছিল, ওই লাইন পাততে যে টাকা খরচ হবে, যাত্রিভাড়া থেকে সেই টাকা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উঠবে না। ফলে ওই প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ করতে গড়িমসি করছিলেন রেল কর্তারা। কিন্তু অধীরের উদ্যোগে গতকাল ওই প্রকল্পের জন্যও অর্থ বরাদ্দ করতে রাজি হয়েছে রেল বোর্ড।
শুধু অর্থ বরাদ্দই নয়, রাজ্যের একাধিক মহল থেকে দাবি ওঠায় বাড়তি স্টেশন যোগ করা হচ্ছে হাওড়া-রাজধানী ট্রেনের যাত্রাপথে। মন্ত্রক জানিয়েছে, হাওড়া থেকে ধানবাদের মধ্যে রাজধানী কোথাও দাঁড়ায় না। কিন্তু ট্রেনটি যাতে বর্ধমানে দাঁড়ায়, সে জন্য দীর্ঘ দিন ধরেই স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি সরব হয়েছিলেন জেলার সাংসদরাও। দিন দশেক আগেই ওই একই দাবি জানিয়ে রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীর দ্বারস্থ হন সিপিএম সাংসদ সইদুল হক। এই পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে রেল বোর্ডের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন অধীর। রেল প্রতিমন্ত্রীর কথায়, “মন্ত্রক নীতিগত ভাবে রাজি হয়েছে। তবে কবে থেকে ওই সিদ্ধান্ত রূপায়িত হবে, তা এখনও ঠিক হয়নি। চেষ্টা করা হচ্ছে, উৎসবের মরসুমেই যাতে বর্ধমান তথা সংলগ্ন এলাকার মানুষদের ওই পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হয়।”
|