মুখমন্ত্রী বলার পরেও সেই আগের মতোই বেহাল দুই জাতীয় সড়ক
রোগের ওষুধ বাতলেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। কিন্তু তাতে কাজ হল কই?
পুজোর সময়েও দিল্লি রোড এবং জি টি রোড দু’টি জাতীয় সড়কেরই বেহাল দশা ঘুচল না। দু’টি সড়কেই প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটছে। যাতায়াত করতে নাজেহাল হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। যানজট লেগেই রয়েছে। সমস্যা বেড়েছে রাস্তার গর্তে বৃষ্টির জল জমে যাওয়ায়। সেই সব গর্তে পড়ে গাড়ির যন্ত্রাংশও ভাঙছে। কিন্তু, কবে থেকে রাস্তা মেরামত শুরু হবে, তা নিশ্চিত ভাবে বলতে পারছে না পূর্ত দফতর। ইতিমধ্যে অবশ্য দু’টি রাস্তার কিছু অংশে পাথরকুচি ফেলা হয়েছে। বর্ষায় সে-সব উঠে গিয়ে আরও বিপজ্জনক হয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, সব সারানোর কাজ বর্ষার সময়ই কেন হবে?
এই দুই জাতীয় সড়ক দেখভালের দায়িত্ব রাজ্য পূর্ত (সড়ক) দফতরেরই। গত ২০ সেপ্টেম্বর সিঙ্গুর ব্লক অফিসে হুগলি জেলার উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রশাসনিক বৈঠক করতে যাওয়ার পথে দিল্লি রোডের জোড়াতালি চোখে পড়ে মুখ্যমন্ত্রীর। বৈঠকে তিনি এ নিয়ে জবাবদিহি চান। উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, “সরকার টাকা খরচ করছে। কিন্তু, ঠিকমতো কাজ হচ্ছে না। যে ঠিকাদাররা সঠিক মান অনুয়ায়ী কাজ করছেন না, প্রয়োজনে তাঁদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হোক!” জেলা পূর্ত (সড়ক) কর্তারা আমতা আমতা করে বলেন, ঠিকমতো কাজ না করলে ঠিকাদারদের আর্থিক জরিমানা করা হয়। যেমন, বৈদ্যবাটি-তারকেশ্বর রোডের ক্ষেত্রে ঠিকাদার সঠিক মানের কাজ না করায় ১৩ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী তখন বলেন, ঠিকাদারদের আর্থিক সামর্থ্য বেশি হওয়ায় জরিমানা দেওয়াটা আদৌ তাঁদের পক্ষে বড় ব্যাপার নয়।
বদলায়নি অবস্থা। খানাখন্দে ভরা দিল্লি রোড ও জিটি রোডের সংযোগস্থল। ছবি: তাপস ঘোষ।
ফৌজদারি মামলা করার যে পরমার্শ মমতা দিয়েছেন, সে প্রসঙ্গে জেলা পূর্ত (সড়ক) দফতরের মুখ্য বাস্তুকার পার্থপ্রতিম সিংহ বলেন, “আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি তো সরকার প্রণয়ন করবে! এ বিষয়ে আমরা হস্তক্ষেপ করতে পারি না।”
মুখ্যমন্ত্রী ওই বৈঠকেই দ্রুত রাস্তা মেরামতের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ঘটনা হল, দু’সপ্তাহের বেশি কেটে গেলেও দু’টি সড়কের চেহারা বদলায়নি। উল্টে অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। ডানকুনি থেকে মগরা পর্যন্ত দিল্লি রোডের (প্রায় ৪০ কিমি) কোথাও কোথাও অবশ্য ইট দিয়ে গর্ত ভরাট করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তাতে হিতে বিপরীত হয়েছে। সেই ইট গাড়ির চাকায় ভেঙে গিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে।
একই ছবি হাওড়ার সালকিয়া, বেলুড় বা হুগলির উত্তরপাড়া, কোন্নগর, চুঁচুড়া বা মগরার জি টি রোডেরও। সম্প্রতি উত্তরপাড়ায় তিন পর্যায়ে ২১ লক্ষ টাকায় জি টি রোড সংস্কারের কাজ হয়েছে বলে পূর্ত দফতর দাবি করলেও ইতিমধ্যেই সেই অংশেও বহু জায়গায় পিচ উঠে গিয়েছে।
দু’টি রাস্তার বেহাল দশার জন্য টানা বৃষ্টিকেই দায়ী করেছে পূর্ত দফতর। পার্থপ্রতিমবাবুর কথায়, “রাস্তা যে সারাব, ‘ড্রাই স্পেল’ (বৃষ্টিহীন দিন) কোথায়? রাস্তার পাশে মালপত্র ফেলে রেখেও বর্ষার জন্য কাজ শুরু করতে পারেনি।” দিল্লি রোড খারাপের কারণ হিসেবে জেলা পূর্ত (সড়ক) দফতরের সহকারী বাস্তুকার কাশীনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “দিল্লি রোডে মালবাহী গাড়ির গাড়ির চাপ অত্যন্ত বেশি। তাপ্পি মেরে ঠিক রাখা যাচ্ছে না। বৃষ্টিতে তাপ্পি উঠে যাচ্ছে। রাস্তা দীর্ঘমেয়াদি ঠিক রাখতে আরও ভাল কাজ হওয়া দরকার।”
কেন বর্ষাতেই নমো নমো করে রাস্তা সারানোর কাজ হবে, তা নিয়ে সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের দাবি, বর্ষার আগে রাস্তা সারানো হলে তা দীর্ঘস্থায়ী হয়। পূর্ত দফতরের দাবি, টেন্ডার প্রক্রিয়া ও নানা নিয়মের জটিলতায় সময়ে রাস্তা মেরামত করা যায় না। দফতরের কর্মীদের একাংশ অবশ্য বলছেন, আসলে এ সবই ঠিকাদারকে পাইয়ে দেওয়ার খেলা। রাস্তা যতবার খারাপ হবে, ততবারই ঠিকাদার রাস্তা সারানোর বরাত পাবেন। আবার পূর্ত দফতরের কিছু কর্তা মনে করেন, দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের মতো দিল্লি রোড এবং জিটি রোড রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ‘টোল’ নেওয়া হলে রাস্তা এত দ্রুত খারাপ হত না।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.