বিদ্যুৎ নেই। প্রচণ্ড গরমে শিশুদের কান্নায় বিচলিত চিকিৎসকরা। কিন্তু, কিছু করার নেই তাঁদের। তেলঙ্গানা-বিরোধী আন্দোলনে বিদ্যুৎকর্মীরা যোগ দেওয়ায় আপাতত বিদ্যুৎহীন অন্ধ্রের বিস্তীর্ণ এলাকা। হাসপাতালের মতো জরুরি পরিষেবাকেও ছাড় দিতে রাজি হননি ধর্মঘটীরা।
বিশাখাপত্তনমের এক মাত্র সুপার-স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল কিং জর্জ। সেখানে ঠিক মতো চলছে না ইনকিউবেটর। হাসপাতালে দাঁড়িয়ে এক সদ্যোজাতের বাবার আবেদন, “অন্তত হাসপাতালগুলিকে কাজ করতে দিন। বাচ্চাদের বাঁচান।”
হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, প্রতি দিন ২০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে জেনারেটর চালাতে। কিন্তু, তাতে পুরোপুরি পরিষেবা দেওয়া সম্ভব নয়। দু’টি শিশু ভেন্টিলেটরে রয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকলে তাদের বাঁচানোর জন্য প্রয়োজনীয় ইঞ্জেকশন দেওয়াও কঠিন।
গরমে ভয়ঙ্কর কষ্ট পাচ্ছেন আগুনে পুড়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীরাও। বিভিন্ন হাসপাতালের মর্গে পড়ে পচছে মৃতদেহ। কারণ, করা যাচ্ছে না ময়না তদন্ত। পাওয়া যাচ্ছে না জল। ফলে, হাসপাতাল থেকে চলেই যেতে চান অনেক রোগী।
অন্ধ্র ভাগের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলনে অসুবিধায় পড়েছেন সীমান্ধ্রের সরকারি কর্মীরাও। অগস্ট মাস থেকে ধর্মঘট করছেন তাঁরা। দু’মাস ধরে বেতন পাননি ৪ লক্ষ কর্মী। ফলে, বাড়িভাড়া, ইএমআই, ছেলেমেয়ের স্কুলের খরচ দেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁদের কাছে। এই পরিস্থিতিতে ধর্মঘট তুলেই নিতে চাইছেন কর্মীরা। বাণিজ্যিক কর দফতরে চাকরি করেন কে নারাসা রেড্ডি। তাঁর বক্তব্য, “সামনেই দিওয়ালি-দশেরা। কিন্তু, আমরা কেউ উৎসবে মাততে পারব না। ব্যাঙ্ককে তো আর বলতে পারছি না আমরা ধর্মঘট করছি। তাই ইএমআই দিতে পারছি না।”
রেড্ডির মতো কর্মীদের মতে, তাঁরা অন্ধ্র ভাগের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে যথেষ্ট কষ্ট করেছেন। এ বার আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব রাজনৈতিক দল ও আমজনতার। তাঁদের কাজে যোগ দেওয়া উচিত।
ধর্মঘট তুলে নিতে কর্মীরা যে চাপ দিচ্ছেন তা মেনে নিয়েছেন সীমান্ধ্র এমপ্লয়িজ ফোরামের নেতা ইউ মুরলীকৃষ্ণ। কিন্তু, অন্ধ্র নন-গেজেটেড অফিসার্স সংগঠনের নেতা পি অশোক বাবু এখনও আগের অবস্থানে অনড়। তাঁর বক্তব্য, “যত ক্ষণ না অন্ধ্র ভাগের প্রস্তাব রদ হচ্ছে তত ক্ষণ ধর্মঘট তোলার প্রশ্নই নেই।”
তবে নেতারা যা-ই বলুন, কর্মীদের চাপে তাঁদের পিছু হটতে হবে বলেই ধারণা অনেকের। নিজে অন্ধ্র ভাগের বিরোধী হলেও সরকারি কর্মীদের ধর্মঘট নিয়ে কড়া অবস্থান নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী কিরণকুমার রেড্ডি। বুধবার ধর্মঘটীদের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা তাঁর। সেই বৈঠকের ফল কী হয় তা জানতে আগ্রহী সংশ্লিষ্ট সব শিবিরই।
অন্ধ্রপ্রদেশে অরাজকতা বাড়ায় সেই রাজ্যে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল দিল্লি ও হায়দরাবাদে। কিন্তু, আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে সেই সম্ভাবনা খারিজ করে দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে।
অন্ধ্র ভাগের বিরুদ্ধে গত কালই ইস্তফা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী এম এম পল্লম রাজু। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এখনও তাঁর ইস্তফা গ্রহণ করেননি। কিন্তু, সব সরকারি কাজকর্ম থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছেন রাজু। আজ মন্ত্রিসভার বৈঠকেও ছিলেন না তিনি।
ফলে, অন্ধ্র বিভাজনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য গঠিত মন্ত্রিগোষ্ঠী থেকে রাজুকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিগোষ্ঠীর সদস্য হয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি। সদস্যের সংখ্যা ১০ থেকে কমিয়ে ৭ করা হয়েছে।
কেন্দ্রের ‘ষড়যন্ত্রেই’ অন্ধ্রে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে আজও অনশন মঞ্চ থেকে দাবি করেছেন তেলুগু দেশম নেতা চন্দ্রবাবু নায়ডু। চন্দ্রবাবুর কথায়, “পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার দায়িত্বও তাই কেন্দ্রেরই।” মন্ত্রিগোষ্ঠী সেই কাজ কী ভাবে করে সে দিকেই এখন তাকিয়ে রয়েছে সবাই। |