উত্সবের ঢাকে কাঠি পড়েছিল প্রতিপদেই। চতুর্থীতে শহরে এল পুরোদমে উত্সবের মেজাজ। মেঘলা আকাশ, ঝিরঝিরে বৃষ্টি উপেক্ষা করেই।
উত্সবের মেজাজে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। ফেসবুকে সে কথা জানিয়েছেন তিনি। পুজোর শিল্পকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরার কথা বলে রাজ্য ও বাইরে থেকে পুজো দেখতে আসা দর্শনার্থীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তিনি। বৃষ্টি উপেক্ষা করে গত তিন দিনের মতো এ দিনও পুজো উদ্বোধনে বোরোন। কিন্তু প্রথম কয়েক ঘণ্টা বৃষ্টি তাঁকে ছাড়েনি।
খিদিরপুর ২৫ পল্লির পুজোয় গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “যতক্ষণ না বৃষ্টি থামবে, ততক্ষণ আর কোনও মণ্ডপে চণ্ডীপাঠ করব না। মা দুর্গার সঙ্গে আমার ঝগড়া চলছে। বৃষ্টি না থামলে এই ঝগড়া চলতেই থাকবে।”
এ দিন বিকেলে পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের পুজো একডালিয়া এভারগ্রিনে উদ্বোধন করতে যাওয়ার পথে মুখ্যমন্ত্রী হঠাত্ই নেমে পড়েন লেক কালীবাড়িতে। ঠাকুর প্রণাম সেরে বেরিয়ে বলেন, “মা দুর্গার নামে মা কালীর কাছে নালিশ করে গেলাম।” ঘটনাচক্রে এর পর থেকে বৃষ্টি কার্যত থেমে যায়। মমতার সহাস্য মন্তব্য, “অভিমানে হয়তো কাজ হয়েছে।” |
আজ পঞ্চমী। মঙ্গলবার, চতুর্থীর সন্ধ্যায় শ্রীভূমি স্পোর্টিংয়ে চলছে প্রতিমা সাজানোর পর্ব।—নিজস্ব চিত্র। |
মেঘ-বৃষ্টি সত্ত্বেও দুপুর থেকেই দলে দলে বেরিয়েছেন মানুষ। যার জেরে থমকে গিয়েছে শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ পুরোটাই। যানজট সামাল দিতে নাজেহাল হতে হয়েছে কলকাতা পুলিশকে। পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন দুপুরের পর থেকেই মহানগরের বিভিন্ন রাস্তায় যানজট হতে শুরু করে। নিউ মার্কেট, হাতিবাগান, গড়িয়াহাটে গাড়ি আর মানুষের ভিড়ে পথ চলাই দায়। লালবাজার সূত্রের খবর, বড়বাজারের ভিড় এসে থমকে গিয়েছে মহাত্মা গাঁধী রোডে। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে
মহম্মদ আলি পার্কের সামনে ব্যারিকেডের ফলে রাস্তা সরু হওয়ায় গাড়িঘোড়া আটকে গিয়েছে। নিউ মার্কেটে গাড়ি নিয়ে আসা ক্রেতাদের ভিড়ে হাঁসফাঁস অবস্থা ধর্মতলা, লেনিন সরণি, এস এন ব্যানার্জি রোডে।
ব্যস্ত শপিং মলের ক্রেতাদের ভিড়ে থমকে গিয়েছে প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড। ঘটনাচক্রে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিন কয়েক আগেই
শহরের নতুন একটি শপিং মলের উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের যানজট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিষয়টি দেখতে বলেছেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় ও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে। |
যানজট হয়েছে বেহালাতেও। পুলিশ জানিয়েছে, ডায়মন্ড হারবার রোডের বেহাল দশা। তার উপরে মেট্রোর কাজ। গাড়ি চলাচল করাই দায়। কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ-কর্তার মন্তব্য, “বেহালায় একাধিক বড় পুজো রয়েছে। এই রাস্তায় অষ্টমী-নবমীর সন্ধ্যায় কী দশা হবে, তা বুঝতে পারছি না।” রাস্তার কাজ চলায় এ দিন যান চলাচল থমকে গিয়েছিল পার্ক সার্কাস কানেক্টরেও।
বিকেল গড়াতেই থমকে যায় বৃষ্টি। ভিড় বাড়তে থাকে মণ্ডপে মণ্ডপে। হরিশ মুখার্জি রোডে ৭৬ পল্লির পুজোর উদ্বোধনে এসে বৃষ্টি বন্ধের প্রসঙ্গ টেনে আনেন মমতাও। শহরের বহু পুজো মণ্ডপই এ দিন থেকে খুলে দেওয়া হয়েছে। কোনও কোনও শিল্পী আবার শেষ ছোঁয়া দিতে ব্যস্ত। এ দিন সন্ধ্যাতেই উদ্বোধন হয়েছে হাতিবাগান
সর্বজনীনের। মোষের শিং দিয়ে সাজিয়ে তোলা মণ্ডপ দর্শকদের নজর কাড়বে বলেই ওই পুজোর কর্তা শাশ্বত বসুর দাবি। রাজা দীনেন্দ্র স্ট্রিটের লালাবাগান নবাঙ্কুরে অবশ্য এ দিনও শেষ দফার কাজ চলেছে। পুজোকর্তা তাপসকুমার রায় বললেন, “আজ, পঞ্চমী থেকেই সাধারণের জন্য মণ্ডপ খুলে দেওয়া হবে।” পুলিশ জানিয়েছে, মণ্ডপের ভিড়ের জন্য সন্ধ্যার পর থেকে
যানজট পরিস্থিতি আরও কিছুটা জটিল হয়ে ওঠে।
লালবাজার সূত্রের খবর, পঞ্চমী থেকে পুলিশ মোতায়েন করার কথা থাকলেও এ দিন বিকেলের পরেই অতিরিক্ত বাহিনী নামানো হয়। গত কয়েক বছরে চতুর্থীতে শহর থমকে যাওয়ার নজির থাকলেও কেন পুলিশ সতর্ক হল না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে লালবাজারের অন্দরেই। |
ছবি: বিশ্বনাথ বণিক ও শুভাশিস ভট্টাচার্য। |