আজ অবধি কখনও সিঁদুর খেলিনি,
এ বার খেলব

নেরো দিনের মধ্যে প্রতিমা ‘রেডি।’ শিল্পী অমর পালের কুমোরটুলির স্টুডিওয় কয়েক জন কারিগর রাখাই ছিল শুধু বায়নার এই প্রতিমাটা সময়ে শেষ করার জন্য। চতুর্থীর দুপুরেই অতএব ১৪৩/সি মসজিদবাড়ি স্ট্রিটে দুর্বার ক্লিনিকে চলে এসেছে লালপেড়ে গরদের শাড়ি পরা একচালার মাতৃমূর্তি। বাইরে তখন ঝিরঝিরে বৃষ্টি, শাঁখের আওয়াজ, উলু, সাউন্ড বক্সে কিশোরকুমারের ‘আমার পূজার ফুল...।’ বরণডালা ছুঁচ্ছে একের পর এক হাত। মূর্তির সামনে ডালা ঘোরাতে-ঘোরাতে উছলে ওঠে কান্না। পূর্ণিমাদি-মিনতিদি-ভারতীদি-শিখাদিরা ধরা গলায় বলেন, “লোকে এত দিন পুজোর সময় আমাদের কাছে ফুর্তি করে পয়সা ছুড়ে দিয়ে চলে যেত। আজ পর্যন্ত জীবনে কখনও সিঁদুর খেলিনি। এ বার খেলব।” ভোগ রাঁধব। ফল কাটব। অঞ্জলি দেব।
পনেরো ফুট বাই সাত ফুটের একটা হলঘর। রংচটা দেওয়াল। নোনাধরা জায়গাগুলোয় অপটু হাতে সাদা চুনরঙের সদ্য-প্রলেপ। এক ধারের দেওয়াল ঘেঁষে প্রতিমার অস্থায়ী বেদি। ওপরে-নীচে লাল কাপড়ের কুচি দেওয়া। চারদিকে উৎসব বাড়ির ব্যস্ততা। তার মধ্যেই মনে করিয়ে দেওয়া “অ্যাই, এখন কয়েক দিন এই ক্লিনিক থেকে কন্ডোম দেওয়া বন্ধ। পুরনো অফিস থেকে পাবে।”
আয় গো উমা
দরজা থেকে প্রতিমার মাটি যেত। এ বার মাকে ঘরেও পেলেন ওঁরা।
শাঁখা-পলা পরিয়ে সাধ মিটিয়ে সাজালেন। বাধা-বিপত্তি ঠেলে সোনাগাছির গলিতেও
এ বার পুজোর রোশনাই। মঙ্গলবার ছবিটি তুলেছেন রণজিৎ নন্দী।
তিন মাস আগেও এই মেয়েরা ভাবতে পারেননি, পুজোটা হবে। প্রতিমা যখন এল, প্রথমটা নিজেরাও যেন সঙ্কোচ কাটাতে পারছিলেন না। আজন্মলালিত পাপ-পুণ্যবোধ মনের ভিতর গেঁথে রয়েছে যে “আমরা মায়ের শরীর স্পর্শ করব?” তার পরই হঠাৎ সম্বিত ফিরল। পুজোর অধিকার চেয়েই তো এত কিছু। কোর্ট-কাছারি। কীসের পাপ? কীসের অপবিত্রতা? “মা এসেছে আমাদের কাছে। আসার ছিলই।”
দুর্গা-লক্ষ্মী-সরস্বতীর হাতের শাঁখা-পলা সব বাগবাজারের শাঁখার দোকানে গিয়ে পছন্দ করে কিনে এনেছেন প্রমীলাদিরা। “নিজেরা তো কোনও দিন পরতে পারিনি। সেই শখটুকু পূরণ করলাম।” ডলিদি বলে রেখেছিলেন, “মা-র অস্ত্রগুলো কিন্তু তোমরা কিনবে না দিদি। আমি বানিয়ে দেব।” দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতি তাঁর অনুরোধ রেখেছে। ডলিদি বলেন, “মা দুর্গার হাতে অস্ত্রগুলো সাজিয়ে দিয়ে প্রার্থনা করব, পরের জন্মে যেন ওঁর মতো লড়তে পারি। কেউ যেন আমাকে নষ্ট করতে না পারে।”
হলঘরটা ছোট। মেরেকেটে জনা পনেরো লোক ধরতে পারে। এ দিকে যৌনকর্মী কয়েক হাজার। দরজার বাইরে ছোট একটা মেরাপ বাঁধা হয়েছে। কিন্তু এ রকম বৃষ্টি চলতে থাকলে সেটাও সম্ভবত যথেষ্ট হবে না। তবু দমছে না সোনাগাছি, “সব ঠিক হয়ে যাবে। যদি হও সুজন, তেঁতুল পাতায় ন’জন।”
ষষ্ঠী-সপ্তমী মণ্ডপে যৌনকর্মীর সন্তানদের বিচিত্রানুষ্ঠান। নবমীতে ভোগ। খিচুড়ি-চচ্চড়ি-পায়েস। রাঁধবেন যৌনকর্মীরাই। সাতটা ঠেলাগাড়ি ভাড়া করা হয়েছে। তাতে ভোগের হাঁড়ি তোলা হবে। প্রত্যেক যৌনকর্মীর বাড়ি গিয়ে ভোগ বিতরণ করা হবে। ঢাকির বায়নাটা শুধু এখনও হয়নি। ষষ্ঠীতে হবে, তাতে একটু খরচ কমবে।
ছুটোছুটির ফাঁকেই দুর্বারের কর্ণধার স্মরজিৎ জানা বললেন, “খুব চেষ্টা করছি, অসুরের বুকের কাছে একটা খাতা রাখার। উপরে লেখা, ইমমরাল ট্র্যাফিকিং প্রিভেনশন অ্যাক্ট। ত্রিশূলের ফলাটা বইয়ের উপরে বিঁধবে।”

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.