সারদা কাণ্ড
ক্ষতে প্রলেপ ক্ষতিপূরণ, ছোট এজেন্টরা স্বস্তিতে
ড় অঙ্কের বিনিয়োগ করেছিলেন যাঁরা, তাঁদের টাকা ফেরানোর বিষয়টি নিয়ে এখনও অনেক আশঙ্কা। তবে অল্প টাকা রেখেছিলেন যাঁরা, তাঁদের ক্ষতিপূরণ বিলি শুরু হয়েছে সারদা-কাণ্ডে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত কিছু আমানতকারীর মুখে অন্তত স্বস্তির হাসি পুজোর মুখে। এত দিন আত্মগোপন করে ছিলেন যে সব ছোটখাটো এজেন্ট, তাঁদের অনেকে এলাকায় ফিরতে শুরু করেছেন। শারদোৎসবের আগে উত্তর থেকে দক্ষিণ, বিভিন্ন জেলাতেই এই ছবি।
সারদা কেলেঙ্কারির পরে সুদীপ্ত সেনের সংস্থার বিভিন্ন অফিসে ভাঙচুর, এজেন্টদের মারধর, আমানতকারীদের বিক্ষোভ হয়ে দাঁড়িয়েছিল রোজনামচা। কিন্তু সারদা-প্রধান এখন জেলে। তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত ও মামলার কাজ এগোচ্ছে বিভিন্ন থানায়। এর সঙ্গে ক্ষতিপূরণ বিলি শুরু হতেই ছবিতে একটা বদল লক্ষ করা যাচ্ছে। যেমন কয়েক মাস আগে গ্রাহকদের আক্রমণ থেকে রেহাই পেতে ঘর ছেড়েছিলেন সারদার এজেন্ট কোলাঘাটের দেনান গ্রামের বাসিন্দা রামেশ্বর বিশ্বকর্মা। মহালয়ার আগে তিনি বাড়ি ফিরেছেন। রামেশ্বরবাবুর কথায়, “সারদা-কাণ্ডের পর ভয়ে কয়েক মাস লুকিয়ে ছিলাম। টাকা দেওয়া শুরু হতে বাড়ি ফিরেছি। এখন আর অতটা ভয় নেই।”
বাড়ি না ছাড়লেও গত কয়েক মাস প্রায় ঘরবন্দি ছিলেন পাঁশকুড়ার রঘুনাথবাড়ির সারদা এজেন্ট শিবনাথ বর্মন। তিনি বলেন, “প্রায় দু’বছর ধরে ৪৫ জনের কাছ থেকে টাকা তুলেছিলাম। সারদা কেলেঙ্কারির পর ঘর থেকে বেরোতে পারিনি। টাকা ফেরত চেয়ে আমানতকারীরা বাড়িতে এসে গালিগালাজ করত। সর্বদাই ভয়ে থাকতাম।” সেই ভয় কেটেছে কিছুটা। এখন বেরোচ্ছেন শিবনাথবাবু।
পুজোর আগে সারদার ১ লক্ষ আমানতকারীকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে রাজ্য সরকার। জনগণের টাকায় এ ভাবে ক্ষতি পোষানোর পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। এ সব বিতর্কের মাঝেই চলছে ক্ষতিপূরণের চেক বিলি। পশ্চিম মেদিনীপুরে চেক বিলি শুরু হয়েছে শুক্রবার থেকে। অবস্থা অনুকূল দেখে দাসপুরের বেলেঘাটার এজেন্ট উত্তম মাইতি, ঘাটাল শহরের সুপ্রিয় বেরা, মুক্তিপদ ঘোষ, চন্দ্রকোনার দেবাশিস দাস, অনুপ চক্রবর্তী-সহ শতাধিক এজেন্ট ইতিমধ্যেই বাড়ি ফিরেছেন। বাড়ি ফেরার ভরসা পেয়েছেন কেশপুরের সৌমেন জানা। তিনি বলেন, “পুজোর আগেই আমার অধীনে থাকা ২০ জন আমানতকারী টাকা পাচ্ছেন। বাড়ি ফিরতে আর সমস্যা নেই।” সুদীপ্ত সেন গ্রেফতার হওয়ার পর বনগাঁর অধিকাংশ সারদা এজেন্টই এলাকায় আত্মগোপন করে ছিলেন। সরকারের চেক বিলির পরে তাঁরা স্বস্তিতে। তরুণ দেবনাথ নামে এক এজেন্ট বলেন, “যারা এখনও পাননি, তাঁরাও চেক পাবেন বলে আমরা আশাবাদী। ফলে আমাদের আর কেউ চাপ দিচ্ছেন না।”
সারদার অনেক এজেন্ট আবার আমানতকারীও। যেমন তন্দ্রা সাহা। নিউজলপাইগুড়ির এই বাসিন্দা ক্ষতিপূরণের চেক পেয়ে গিয়েছেন। তন্দ্রাদেবী বলেন, “২০ জন আমার কথায় টাকা রেখেছিলেন। আমার নিজের ৫ হাজার টাকা ছিল। সরকার পাশে না দাঁড়ালে কী যে হত! পুজোয় হয়তো বেরোতেই পারতাম না।”
সারদার ঝাঁপ পড়ার পরে দীর্ঘদিন আত্মগোপন করেছিলেন দিনহাটার এজেন্ট চন্দন সাহা। তিনিও বললেন, “সরকার টাকা ফেরত দিতে শুরু করায় অনেক নিশ্চিন্ত হয়েছি।”
তবে কিছু এজেন্টের স্বস্তির এই ছবিটা এখনও বড় আংশিক। এই স্বস্তির মাঝেও কাঁটা থাকছেই। কারণ, রাজ্য সরকার স্বল্প বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথাই ঘোষণা করেছে। স্থির হয়েছে, যাঁরা ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করেছিলেন, আপাতত তাঁদের চেক দেওয়া হবে। এই সিদ্ধান্তই ভাবাচ্ছে এজেন্টদের।
নদিয়ার তাহেরপুরের পাটুলির বাসিন্দা শ্যামল দাশগুপ্ত সারদার সিনিয়র ম্যার্কেটিং ম্যানেজার ছিলেন। এত দিন শিলিগুড়িতে দিদির বাড়িতে ছিলেন শ্যামলবাবু। সম্প্রতি বাড়ি ফিরেছেন। তিনি বলেন, “টাকা পাওয়ার তালিকায় যাঁদের নাম নেই তাঁরাও আসছেন খোঁজ নিতে। সকলে টাকা না পেলে আমাদের অবস্থা আবার খারাপ হবে।”
একই বক্তব্য তাহেরপুরের বাপুজিনগরের এজেন্ট বিশ্বজিৎ সরকারের। তাঁর অধীনে একশো জন এজেন্ট প্রায় এক কোটি টাকা তুলেছিলেন। বিশ্বজিৎবাবুও বলেন, “মোটা টাকা লগ্নিকারীরা টাকা না পেলে পরিস্থিতি খারাপ হবে।” বীরভূমের দুবরাজপুরের বেশ কিছু এজেন্টও এই আশঙ্কায় ভুগছেন।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.