গ্রামে অন্তত তিনটে কবরস্থান। তবুও সোমবার দুপুরে নদিয়ার চাপড়ায় নিহত সিপিএম কর্মী আসাদুল শেখকে কবর দিতে গ্রামবাসীদের ছুটতে হল দশ কিলোমিটার দূরের কাঠগড়া গ্রামে। সোমবার কৃষ্ণনগর মর্গে ময়নাতদন্তের পরে আসাদুলের দেহটি তাঁর গ্রাম বেতবেড়িয়া থেকে নিয়ে যাওয়া হয় ওই দূর-গ্রামের কবরস্থানে। কেন?
পরিবারের অভিযোগ, খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্তরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। থেকে থেকেই হুমকি দিচ্ছে। এই অবস্থায় গ্রামের কেউ কবর খোঁড়ার সাহসই পাচ্ছেন না। শাসানো হচ্ছে, গ্রামে ঢুকলেই খুন করা হবে। নিহতের ভাইপো মাহাবুল শেখ বলেন, “পুলিশ নিরাপত্তা দেয়নি। কী করে মৃতদেহ নিয়ে গ্রামে ঢুকব! ”
রবিবার ছিল বেতবেড়িয়া হাই স্কুলের অভিভাবক প্রতিনিধির নির্বাচন। বিকেলে ভোট পর্ব মিটে যাওয়ার পরই শুরু হয় গণ্ডগোল। সিপিএমের সমথর্কেরা তৃণমূলের নেতা আশরাফ শেখের উপরে হামলা করে বলে অভিযোগ। সিপিএম কর্মী রমজান শেখের বাড়িতে পাল্টা হামলা করে তৃণমূল। খুন করা হয় আসাদুলকে।
জেলা সিপিএমের অভিযোগ, দিনভর চাপড়ার ওই গ্রামে শাসক দলের কর্মী-সমর্থকদের চোখ রাঙানির সামনে পুলিশ কার্যত ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’ হয়ে থাকায় ওই গ্রামে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন সিপিএম সমর্থকেরা। অনেকেই গ্রাম-ছাড়া। তাঁদের গ্রামে ফেরাতেও পুলিশ বা প্রশাসনের তরফে কোনও উদ্যোগ নেই বলে সিপিএমের অভিযোগ।
এ দিন অবশ্য বেতবেড়িয়া গ্রামের পাশেই একটি হলুদ খেত থেকে উদ্ধার করা হয়েছে গুরুতর জখম আসাদুলের ভাই আলাউদ্দিনকে। রবিবার বিকেলে কোপানো হয়েছিল আলাউদ্দিনকেও। রাতে তাঁর খোঁজও মেলেনি। এ দিন তাঁকে উদ্ধার করে চাপড়া গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে, এ দিন অবশ্য যুব তৃণমূলের চাপড়া ব্লক সভাপতি শুকদেব ব্রহ্ম-সহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ নিয়েছে পুলিশ। শাসকদলের সমর্থকেরাও ১৫ জনের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযুক্তদের মধ্যে আসাদুলের দাদাকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “যারা খুন করল তৃণমূলের সেই সব নেতারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুলিশের ভূমিকাটা আপনারাই বিচার করুন।” জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তর দাবি, “সিপিএমের কিছু দুষ্কৃতী আমাদের কর্মীকে খুন করতে যায়। তাদের মধ্যে একজন জনরোষের শিকার হয়েছে। এখন আমাদের কর্মীদের ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।” |