স্কুল নির্বাচনকে ঘিরে গণ্ডগোলের জেরে খুন হলেন এক সিপিএম কর্মী। আশাদুল শেখ (৩০) নামে ওই ব্যক্তিকে রবিবার সকলের সামনে রাস্তায় ফেলে কুপিয়ে ও পিটিয়ে খুন করা হয়েছে। আশাদুলের বাড়ি নদিয়ার চাপড়ার বেদবেড়িয়ায়। আশাদুলের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। তাতে জখম হয়েছে তাঁর পরিবারের চার বালিকা। তাদের চাপড়া গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। সিপিএম সোমবার ১২ ঘণ্টার জন্য চাপড়া ব্লকে বন্ধ ডেকেছে।
এ দিন বেদবেড়িয়া হাইস্কুলেই অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচন ছিল। সেখানে আশাদুলের দাদা রমজান শেখ প্রার্থী ছিলেন। ভোটগ্রহণ মিটে যাওয়ার পরে গণনার আগে তৃণমূলের এক স্থানীয় নেতা আসরফ শেখকে মারধর করা হয়। তারপরেই একদল যুবক রমজানের বাড়িতে চড়াও হয়। রমজান পালিয়ে যান। তখন তাঁর বাড়িতে বোমা ছোড়া হতে থাকে। পাশাপাশি অনেকগুলি মাটির বাড়ি রয়েছে সেখানে। সেখানে থাকেন রমজান-আশাদুলদের অন্য ভাইরা। তারই তিনটি বাড়িতে আগুনও লাগিয়ে দেওয়া হয়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় একটি মোটরবাইকও। রমজানদের বাড়ির লোকজন কোনও মতে বাইরে বেরিয়ে আসেন। কিন্তু চারটি বালিকা আগুনের হাত এড়াতে পারেনি। তাঁদের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, আশাদুলের এক ভাইও ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ।
আশাদুল ছুটতে ছুটতে আশ্রয় নেন তাঁর এক প্রতিবেশী লালচাঁদ শেখের বাড়ি। ওই যুবকেরা তাঁর পিছু নিয়ে সেই বাড়িতে গিয়ে হাজির হয়। ঘর থেকে বার করে তাঁকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। মারধর করা হয় লালচাঁদকেও। তিনিও চাপড়া গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি। তবে লালচাঁদ ও ওই বালিকাদের কারও অবস্থাই আশঙ্কাজনক নয় বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। প্রত্যেকেই অবশ্য প্রবল আতঙ্কে ভুগছেন।
স্কুলে নির্বাচনের সময়ে পুলিশের থাকার কথা। তা হলে কী করে ওই গ্রামে সেই সময়েই এ দিন এমন কাণ্ড ঘটতে পারে? নদিয়ার পুলিশ সুপার সব্যসাচী রমণ মিশ্র বলেন, “পুরো ঘটনাটাই আমরা খতিয়ে দেখছি।” ওই স্কুলে ৬-০ ভোটে জিতে গিয়েছে তৃণমূল।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে-র দাবি, “তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরাই আমাদের কর্মী আশাদুলকে খুন করেছে।” তাঁর বক্তব্য, “ওই এলাকায় তৃণমূলের সন্ত্রাসের জন্য পঞ্চায়েত ভোটে সিপিএমকে শেষ পর্যন্ত প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিতে হয়। কিন্তু এলাকায় ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য আমরা স্কুল নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছিলাম। সন্ত্রাস জিইয়ে রাখতেই প্রার্থীর ভাইকে খুন করা হল।”
তৃণমূলের অবশ্য বক্তব্য, আশাদুল গণরোষের শিকার। জেলা তৃণমূলের সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের দাবি, “সন্ত্রাসের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আশাদুলের খুনের ঘটনার সঙ্গে আমাদের দলের কোনও সম্পর্ক নেই।” তাঁর কথায়, “আশাদুল আমাদের নেতা আসরাফকে এই দিন ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপায়। আসরাফ তাতে গুরুতর জখম হয়েছেন। এরপরেই এলাকার লোক ক্ষুব্ধ হয়ে আশাদুলের বাড়িতে চড়াও হন।” আসরাফ স্থানীয় তৃণমূল প্রধানের স্বামী।
আশাদুলের স্ত্রী সাবিনা জানান, ভোটগ্রহণ পর্বের পরে তাঁর স্বামী বাড়ি ফিরে সবে খেতে বসেছিলেন। তিনি বলেন, “তখনই আমাদের বাড়ির উপরে হামলা হয়।”
বিকেলে ওই গ্রামে যায় বিরাট পুলিশ বাহিনী। জেলা পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। |