পুজোয় বৃষ্টিই যেন অসুর, সমস্যায় কুমোরপাড়া
ই আশ্বিনে কুমোরপাড়ার কলসি, হাড়ি বোঝাই গরুর গাড়ির দেখা মিলছে না। গোটা বর্ষার মরসুম জুড়ে বৃষ্টি আর খারাপ আবহাওয়ার জন্য উৎসবের সময়ে প্রয়োজনীয় মাটির জিনিস সেভাবে তৈরি করে উঠতে পারেননি কুমোররা। তাই পুজোর ভরা বাজারে মঙ্গলঘট থেকে মাটির ভাঁড় সবেতেই টান পড়েছে। চাহিদা মতো মাটির হাঁড়ি, প্রদীপ, ধুনুচি, মালসা বা থালা যোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছেন কুমোররা। দিন এগিয়ে আসছে আর কপালে ভাঁজ বাড়ছে পুজোর উদ্যোক্তা থেকে পাইকারি ব্যবসায়ী সকলের।
নবদ্বীপ-মায়াপুরের গঙ্গার দু’পাড়ে পুরুষানুক্রমে বাস করেন মাটির জিনিস তৈরির কুমোরেরা। পশ্চিম পাড়ের দণ্ডপানিতলার ঘাট, ফাঁসিতলার ঘাট কিংবা পোড়াঘাট বা অন্য পাড়ের স্বরূপগঞ্জ, ব্রহ্মনগর প্রভৃতি এলাকার কুমোরেরা রোদ, বৃষ্টির সঙ্গে কার্যত লুকোচুরি খেলছেন শেষ একমাস ধরে। নদীর দু’ধারে, রাস্তার পাশে শুকোতে দেওয়া রয়েছে মাটির থালা, ঘট, হাঁড়ি, ভাঁড় প্রভৃতি। আর তার চার পাশে বড় বড় লাঠি আর পলিথিনের চাদর নিয়ে সতর্ক প্রহরায় বাড়ির ছোট এবং মহিলারা। যদি বৃষ্টি নামে!
রোদ উঠলেই শুকোতে দেওয়া হচ্ছে মাটির সামগ্রী।—নিজস্ব চিত্র।
সোমবার সকালে প্রবীণ কারিগর সুনীল পাল মাটির জিনিস পোড়ানোর কাঠের চুল্লি বা ‘পোণ’ থেকে সদ্য পোড়ানো কিছু মাটির জিনিস বের করতে করতে বললেন, “এই ক’টাতে আর কী হবে! এবার বৃষ্টি সেই আষাঢ় মাস থেকে পিছু ছাড়ছে না। খুব যে জোরালো বর্ষা হচ্ছে তেমন নয়, কিন্তু ভিজে এই জোলো বাতাস আর রোদ্দুরহীন দিন মাটির কাজের চরম শত্রু। ব্লু ল্যাম্প দিয়ে তো প্রদীপ, মঙ্গলঘট শুকোনো যায় না। অন্যান্যবারের তুলনায় এবার অর্ধেক মালও তৈরি করতে পারিনি।”
একবারে ওই চুল্লিতে পোড়ানো যায় প্রায় চার হাজার ভাঁড়, এক হাজার হাঁড়ি এবং দেড় হাজার থালা। আর এই পরিমাণ জিনিস তৈরি করতে সময় লেগে যায় পনেরো দিন। সঞ্জয় পাল বলেন, “আবহাওয়ার কারণে এবার এক ‘পোণ’ জিনিস তৈরি করতে তিন সপ্তাহের বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। আবহাওয়া বদলের কোনও লক্ষণও তো দেখছি না। সব মিলিয়ে বাজারে চাহিদা মতো মাল এবার মিলবে না।”
অথচ সামনে দুর্গা পুজো, লক্ষ্মী পুজো, কালী পুজো, জগদ্ধাত্রী পুজো, কার্তিক পুজো এবং রাসের মতো বিরাট বিরাট উৎসব। শুধু আবহাওয়াই নয়, তার সঙ্গে রয়েছে কাঁচা মালের দাম বাড়ার সমস্যাও। কুমোরপাড়ার এসব জিনিস তৈরি হয় গঙ্গা মাটি দিয়ে। গত বছর পর্যন্ত এক নৌকা গঙ্গা মাটির দাম ছিল ১২০০ টাকা। এক নৌকায় প্রায় ৫০ ঝুড়ি মাটি হয়। এ বছর বৈশাখ মাসেই সেই মাটির দাম বেড়ে হয় দেড় হাজার টাকা। আর বর্ষা নামতেই নৌকা পিছু মাটির দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে দু’ হাজার টাকায়। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে জ্বালানির কাঠ এবং মজুরিও। ফাঁসিতলার নারায়ণ পাল বলেন, “এক সময় আমরা এখানে ৩৫ ঘর কুমোর এ কাজ করতাম। এখন কোনও রকমে ছয়টি পরিবার টিঁকে আছি। সামান্য লাভে এ কাজ আর কেউ করতে চাইছে না। ফলে বছরের কোনও সময়েই চাহিদা মতো যোগান দেওয়া যায় না। আর এখন তো পুজোর মরসুম। আকাল তো হবেই।”
এ অবস্থায় সব থেকে সমস্যায় পড়েছেন বিক্রেতারা। নবদ্বীপ বড় বাজারের পাইকারি বিক্রেতা মলয় পাল বলেন, “যে কোনও দুর্গা পুজোয় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার মাটির জিনিসপত্র লাগে। আর বড় পুজোয় তা প্রায় হাজার পাঁচেক টাকা লেগে যায়। অথচ এবারে কুমোররা এখনও চাহিদা মতো জিনিস দিতে পারছেন না। অথচ আমাদের কাছে ক্রেতারা ক্রমাগত চাপ দিচ্ছেন। আবহাওয়ার যা মতিগতি তাতে এই ক’দিনে অবস্থা খুব একটা বদলাবে বলে তো মনে হয় না। ইতিমধ্যে মাটির জিনিসের দাম কুড়ি শতাংশ বেড়ে গিয়েছে।”
তাহলে উপায় কী? উপায় অবশ্য নিজেরাই খুঁজে নিয়েছেন উদ্যোক্তারা। নবদ্বীপের বড় উদ্যোক্তাদের অনেকেই প্রসাদ বিতরণ থেকে ভোগ নিবেদন এ সব কাজে বিকল্প হিসাবে শাল পাতার থালা বাটিকে বেছে নিয়েছেন। উদ্যোক্তাদের একজন দীপু মোদক বলেন, “আমাদের পুজোয় তিন দিনে কয়েক হাজার ভোগ বিতরণ করি। এসবই মাটির থালায় দেওয়া হয়। যদি মাটির থালা নিতান্তই না পাওয়া যায় তখন শালপাতা বা থার্মোকলের কথা ভাবতে হবে। এছাড়া তো আর কোনও উপায় নেই।” কিন্তু মহাষ্টমীর ভোগ মাটির ‘তবকের’ বদলে থার্মোকলের থালায় মানানসই হবে তো? ধন্দ কাটছে না উদ্যোক্তাদেরই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.