মণ্ডপসজ্জার কাজ থেকে দলবল নিয়ে চাঁদা সংগ্রহ করতে বের হওয়া, মূর্তি শিল্পীদের প্রতিমায় তুলির টান দেওয়ার কাজ থেকে পরিবারের কোনও সদস্যদের কেনাকাটা বাকি থেকে গেল কিনা তার হিসেব, পুজোকর্তাদের নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠকসব কিছুতেই এখন শেষ মুহূর্তের তোড়জোড় চলছে, যেন পুজোর প্রস্তুতিতে কোনও খামতি না থাকে! নির্বিঘ্নে প্রতিমা দর্শন করা থেকে পুর-নাগরিকরা বঞ্চিত না হন, সেজন্য যান নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে বহরমপুুর থানার পুলিশ ও প্রশাসন। সেই সঙ্গে নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যবস্থা নিয়েছে বহরমপুর পুরসভা।
বহরমপুর বাসস্ট্যান্ড মোড় থেকে পুর-এলাকার গুরুত্বপূর্ণ সমস্ত মোড়ে যানজট লেগেই রয়েছে। পুজোর মুখে এই যানজট পুজোকর্তাদের দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে। যদিও বহরমপুর থানার আইসি মোহায়মনুল হক বলেন, “পুজোর দিনগুলোতে যানজট রুখতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যাতে স্বচ্ছন্দে নাগরিকরা প্রতিমা দর্শন করতে পারেন। পুজোকর্তা থেকে প্রশাসন, ট্র্যাফিক পুলিশ প্রশাসন সকলের সঙ্গে বৈঠক করে যানজট মুক্ত করতে যান নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি রুট ম্যাপ তৈরি হয়েছে।” |
প্রতিমা দর্শনে ভোগান্তি না হয়, এজন্য দর্শনার্থীদের স্বার্থে পুরসভার রাস্তায় যান চলাচলে বেশ কিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে পুলিশ প্রশাসন। ষষ্ঠী থেকে নবমী পর্যন্ত বিকেল ৫টা থেকে রানিবাগান থেকে ইন্দ্রপ্রস্থ মোড়, জলট্যাঙ্ক মোড় থেকে খাগড়া চৌরাস্তা, কান্দি বাসস্ট্যান্ড থেকে নতুনবাজার, গোপালঘাট থেকে খাগড়া, বান্ধব প্রেস মোড় থেকে ডানদিকে ও বামদিকে, ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে বিষ্ণুপুর কালীবাড়ি রোডে ঝাউখোলা, ঝাউখোলা মোড় থেকে বিষ্ণুপুরের দিকে, ওয়াইএমএ মোড় থেকে বিবেকানন্দ মূর্তি এবং নাটাতলা থেকে নিমতলা মোড় পর্যন্ত কোনও যানবাহন চলাচল করবে না।
সেই সঙ্গে মোটরবাইক চালকদের গাড়ির ও ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং রিকশা চালকদের সচিত্র পরিচয়পত্র রাখা বাধ্যতামূলক করেছে পুলিশ প্রশাসন। পুলিশের সাফ কথা, অন্যথা হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে মোটা অঙ্কের জরিমানা করা হবে। এর পাশাপাশি পুজোর মণ্ডপে সকাল ৭টা থেকে ১১টা এবং বিকেল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মাইক ব্যবহার ও শব্দের তীব্রতা নির্দিষ্ট ডেসিবেলের মধ্যে রাখতে হবে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
যদিও এই নিয়ম মানা হয় না বলে পুজোকর্তাদের বিরুদ্ধে পুরবাসীদের ক্ষোভ। তাঁদের কথায়, দুপুরে বিশ্রামের সময়েও মণ্ডপ থেকে লাগামহীন শব্দে মাইক বাজানো হয়। প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও ফল হয়নি। তবে খাগড়া চৌরাস্তা মোড় থেকে গলি রাস্তায় যান চলাচলে বিধি-নিষেধ থাকায় পায়ে হেঁটে প্রতিমা দর্শন করতে হয় দর্শনার্থীদের। গলি রাস্তা, তার উপরে রাস্তার ডান ও বাম দিক ঘেঁষে বড় নর্দমা থাকায় যে কোনও সময়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। পুজোর চার দিন খোলা নর্দমাগুলির উপরে অস্থায়ী কংক্রীট ঢালাই বা কাঠের পাটাতন দিয়ে ঢেকে দেওয়া হলে রাস্তা চওড়া হওয়ার পাশাপাশি স্বচ্ছন্দ্যে যাতায়াতও করতে পারেন দর্শনার্থীরা। কিন্তু এ ব্যাপারে পুরসভার কোনও নজরদারি নেই বলেও অভিযোগ।
তবে পুজোর দিকে তাকিয়ে পুরসভা বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেযে সমস্ত পুজো মণ্ডপে দর্শনার্থীদের ভিড় হয়, সেই সব জায়গায় বোতলে পানীয় জলের বন্দোবস্ত থাকবে। সেই সঙ্গে পুজোর সময়ে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে পুরসভার অ্যাম্বুলেন্স জরুরি ভিত্তিতে থাকবে। নীলরতনবাবু বলেন, “আচমকা কোনও দর্শনার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে ২৫০০১২/ ২৫১২৯৯ নম্বরে ফোন করলে দ্রুত পুরসভার অ্যাম্বুলেন্স ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাবে। সেই সঙ্গে শহরের যানজট রুখতে ৪০ জন পুরকর্মী পথে নামবেন। যান নিয়ন্ত্রণে প্রতিটি পুজো কর্তাদের দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে স্বেচ্ছাসেবী পথে নামানোর নির্দেশ রয়েছে।” এদিকে ভাগীরথীর ১৭টি ঘাট প্রতিমা নিরঞ্জনের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। দশমীর দিন ওই ঘাটগুলিতে পর্যাপ্ত আলোর বন্দোবস্ত করার পাশাপাশি বেশ কিছু ঘাটে জেনারেটরের মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে আলো দেওয়া হবে বলেও পুরপ্রধান জানান। |