ক্রিকেটকে চিরবিদায় জানিয়েছেন ২৪ ঘণ্টাও হয়নি। তাঁর দ্বিতীয় ইনিংস নিয়ে আগ্রহ তুঙ্গে। ধারাভাষ্যে আগ্রহ নেই আগেই বলেছেন। তা বলে রাহুল শরদ দ্রাবিড় অবসরের পর ভারতীয় ক্রিকেটের আকাশ থেকে একেবারে সরে যাবেন, ভাবলে ভুল হবে। একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাহুল বলছেন, “আপাতত পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর উপরই জোর দেব ঠিক করেছি। ক্রমাগত দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়ানোর চাপটা বাদ দিলে আইপিএল কিন্তু দারুণ লেগেছে। রাজস্থান রয়্যালসের সঙ্গে এর পরেও কাজ করার প্রস্তাব পেলে ব্যাপারটা ভেবে দেখা যেতেই পারে। নতুনদের নিয়ে কাজ করতে পারলে ভাল লাগবে। সেটা রয়্যালসেই হোক, বা অন্য কোনও ভাবে।”
উঠে এল আইপিএল সিক্সে রাজস্থানের তিন ক্রিকেটারের স্পট ফিক্সিং-এ জড়িয়ে পড়ার ঘটনাও। টিমের অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার কথা মনে হয়েছিল? “না, সেটা মনে হয়নি। তবে প্রচণ্ড হতাশ হয়েছিলাম। আঘাতটা বাইরের থেকেও বেশি ছিল ভিতরে। যে প্লেয়ারদের পিছনে এত সময়, এত পরিশ্রম দিয়েছি তারা কী ভাবে জড়িয়ে পড়ল বুঝতে পারছিলাম না। তখন মনে হয়েছিল হয়তো আমি ওদের জন্য আরও কিছু করতে পারতাম। হয়তো আগেই বুঝতে পারতাম।”
কী ভাবে টিমের অন্যদের মোটিভেট করলেন তখন? “পরে টিমের অন্য প্লেয়ারদের দেখে মনে হয়েছিল যাই ঘটে থাকুক, এরা একটা জায়গায় যাওয়ার দাবি রাখে। এদের পরিশ্রমের মূল্য দিতেই হবে। তবে এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়ারও রয়েছে। ক্রিকেট কি কখনও আবার পরিচ্ছন্ন হবে? জানি না। তবে এই ঘটনা কিন্তু আমাদের শিক্ষা দিয়ে গেল, কখনও ব্যাপারটা হালকা ভাবে নিলে চলবে না। যারা ক্রিকেটে দুর্নীতি আনতে চায় তারা কিন্তু বারবার চেষ্টা চালিয়ে যাবে। তাই সব সময় সতর্ক থাকতে হবে,” বলেন দ্রাবিড়। |
এত বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার পর এক জন প্লেয়ার উঠতি প্রতিভা তুলে আনছেন। মোটিভেট করছেন। টিম তৈরি করছেন। কী ভাবে তিনি এত কিছু সামলাতেন সেটা নিয়ে কৌতুহল কম নয়। দ্রাবিড় বলেন, “সত্যি কথা বলতে রয়্যালসে অচেনা প্রতিভা তুলে আনার সংস্কৃতিটা টিমে আমার যোগ দেওয়ার আগে থেকেই ছিল। আমি শুধু সেটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। আমাদের ফোকাসটাই ছিল, যারা এত দিন প্রতিভার দাম পায়নি তাদের সুযোগ দেওয়া।” সঙ্গে ভারতীয় ক্রিকেটের ‘দ্য ওয়াল’ আরও যোগ করেন, “আমরা শুধু প্ল্যাটফর্মটা দিয়েছি। সঞ্জু স্যামসনের কথাই ধরা যাক। ট্রায়ালে ও তিনটে বল ফেস করার পরই আমি ওর প্রতিভা দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।” আর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ উইকেট (১২) নেওয়া প্রবীণ তাম্বেকে তুলে আনার পিছনে রহস্য? রাহুল বলেন, “প্রবীণের ব্যাপারটা একটু অন্য রকম। আমরা এক জন লেগস্পিনারের খোঁজ করছিলাম। কিন্তু নিয়মিত রঞ্জিতে খেলা লেগস্পিনাররা সবাই আইপিএলের কোনও না কোনও টিমের সদস্য হওয়ায় দ্বিতীয় পর্যায়ের স্পিনারের খোঁজ করি। তাম্বেকে দেখে বুঝেছিলাম ওর মধ্যে স্কিল রয়েছে। ব্র্যাড হজ, শেন ওয়াটসনদের সঙ্গে একই টিমে থাকার ব্যাপারটা ওর আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছিল।”
তাঁর সঙ্গে রবিবার রঙিন জার্সি চিরদিনের মতো খুলে রেখেছেন আর এক মহারথী। সচিন তেন্ডুলকর। একই মঞ্চ থেকে এত দিনের সতীর্থের সঙ্গে ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর অনুভূতি কী রকম? দ্রাবিড় বলেন, “আমরা দু’জনেই একটা লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছিলাম। মাথায় অবশ্য একই মঞ্চ থেকে বিদায় নেওয়ার ব্যাপারটাও ছিল। তবে দু’জনেরই টার্গেট ছিল ম্যাচটা জেতা। গার্ড অফ অনার দেওয়ার সময় একটু লজ্জাই করছিল। ব্যক্তিগত ভাবে আমার কাছে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানানোটা আরও আবেগের ছিল। তবে এটাও ভোলবার নয়।”
|
রাজস্থান রয়্যালসের সঙ্গে এর পরেও কাজ করার প্রস্তাব
পেলে ব্যাপারটা ভেবে দেখাই
যেতে পারে। নতুনদের নিয়ে
কাজ করতে পারলে ভাল লাগবে।
রাহুল দ্রাবিড় |
|