লিফট-বিভ্রাটে প্রথম দিনেই খাবি খেল নবান্ন
ণ্টাখানেক লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পরে ধৈর্যচ্যুতি ঘটল অর্থ দফতরের এক মহিলা কর্মীর। রাজ্যের নতুন সচিবালয় নবান্নে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বেসরকারি সংস্থার এক কর্মীর উদ্দেশে তিনি চিৎকার করে বলতে লাগলেন, “আমাদের কি মেরে ফেলতে চান? আর কত ক্ষণ এ ভাবে দাঁড়িয়ে থাকব? আমি অসুস্থ। এর পরে তো আমাকে স্ট্রেচারে করে তুলতে হবে।”
লাইনটা লিফটের জন্য। আর সেই লাইনে প্রায় এক ঘণ্টা দাঁড়িয়েই চিৎকার মহিলার। তা শুনে এগিয়ে আসেন নিরাপত্তারক্ষীরা। তাঁরা ওই মহিলাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, সব লিফটই চলছে। কিন্তু একে উঁচু বাড়ি। তার উপরে লিফটের গতি কম বলেই সমস্যা বেড়েছে। মহিলা কর্মীটি এ-সব কথা শুনতে নারাজ। তাঁর কথা, “ব্যারাকপুর থেকে সকাল সাড়ে ৭টায় বেরিয়ে মন্দিরতলায় পৌঁছেছি সাড়ে ৯টায়। তার পরেও এক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। আর পারা যায়?”
লিফটে চড়ার জন্য দীর্ঘ লাইন। সোমবার নবান্ন-চত্বরে। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
এ বার ক্ষুব্ধ মহিলার সমর্থনে এগিয়ে আসেন লাইনে দাঁড়ানো অন্য অনেক সরকারি কর্মীও। তাঁদের বক্তব্য, “নাকেমুখে গুঁজে ট্রেনে-বাসে চেপে হাঁচোড়-পাঁচোড় করে সাড়ে ৯টায় নবান্নে পৌঁছেছি। কিন্তু আধ ঘণ্টার উপরে দাঁড়িয়ে আছি। লিফট নেই। নতুন ভবনে প্রথম কাজের দিনেই হাজিরা খাতায় ঢ্যারা পড়ে গেল!”
কার্যত লিফটকে ঘিরেই সোমবার মন্দিরতলায় এইচআরবিসি ভবনে সাময়িক অব্যবস্থার চিত্রটা প্রকট হয়ে যায়। ওই ভবনের লিফটগুলির গতি এতই শ্লথ যে, প্রায় সব দফতরের কর্মীরাই এ দিন নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে বেশ কিছুটা পরে অফিসে পৌঁছন। বাস্তব পরিস্থিতি বুঝে দফতরের সচিবেরাও অবশ্য কর্মীদের হাজিরা-বিধি অনেকটা শিথিল করে দেন। দেরিতে পৌঁছলেও বহু ক্ষেত্রে কর্মীদের হাজিরা খাতায় ‘লেট মার্ক’ দেননি তাঁরা। তবে লিফট নিয়ে ক্ষোভ গোপন রাখেননি তাঁরাও। একাধিক অফিসার বলেন, “সরকারি কর্মীদের অনেকেরই বয়স পঞ্চাশের বেশি। সিঁড়ি দিয়ে যে উঠবেন, সেই শারীরিক সক্ষমতাও তাঁদের নেই। ফলে কর্মীরা দেরিতে পৌঁছলেও কিছু বলার নেই।”
নবান্নে লিফট নিয়ে যে সমস্যা জটিল হতে পারে, মাসখানেক আগে সেই আশঙ্কার কথা জানিয়েছিল কলকাতা পুলিশ। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে তারা পূর্ত দফতরকে জানিয়েছিল, সকাল ১০টার মধ্যে দফতরে পৌঁছতে হলে অন্তত ৪০ মিনিট সময় হাতে নিয়ে লাইনে দাঁড়াতে হবে কর্মীদের। পুলিশ আগে সতর্ক করে দেওয়া সত্ত্বেও পরিস্থিতির কোনও বদল হল না কেন?
পূর্ত দফতরের এক কর্তা বলেন, “মূলত জামাকাপড়ের পেটি বহনের জন্যই এই ভবনে ধীর গতির লিফট লাগানো হয়েছিল। এখন সেগুলির গতি বাড়াতে গেলে নতুন প্রযুক্তি প্রয়োগ করতে হবে। মাস তিনেকের আগে তা সম্ভব নয়।” অর্থাৎ নবান্নের লিফট নিয়ে যে আরও কয়েক দিন সমস্যা পোহাতে হবে, সেই বিষয়ে কোনও সংশয় নেই সরকারি কর্মীদের।
নবান্নে লিফট পাঁচটি। তার মধ্যে দু’টি ভিআইপি-দের জন্য বরাদ্দ করেছে পূর্ত দফতর। বাকি যে-তিনটি লিফট জনসাধারণকে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে দু’টোরই গতি অতীব শ্লথ। আর তার জেরেই সকাল থেকে উত্তেজনা দেখা দেয় সরকারি কর্মীদের মধ্যে। বেলা পৌনে ১২টা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী নবান্নে ঢুকে যাওয়ার পরে একটি ভিআইপি লিফট সাধারণ কর্মীদের ব্যবহারের জন্য ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন পূর্তসচিব। তাতেও অবশ্য পরিস্থিতির খুব একটা হেরফের হয়নি। শনিবার নতুন সচিবালয়ের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলেও সোমবারেই ছিল ওই ভবনে কাজের প্রথম দিন। সেই জন্য বহু কর্মী সকাল ৯টার মধ্যে নবান্নে পৌঁছে যান। আর তার পরেই বিপত্তি। বেলা যত গড়িয়েছে, লিফটের সামনের লাইন ততই দীর্ঘ হয়েছে। সাড়ে ১০টা নাগাদ লাইন পৌঁছে যায় নবান্নের বাসস্ট্যান্ডের কাছাকাছি।
দিনের শুরুতে লিফট-বিভ্রাটের পরে ফের বিপত্তি দেখা দেয় বিকেলে, অফিস ছুটির ঠিক আগে। বিকেলের অঝোরবৃষ্টিতে জলে ভেসে যায় ভবনের নীচের তলা। ফলে বাড়ি যাওয়ার মুখে সেখানে ভিড় জমে যায়। শেষ পর্যন্ত সাফাইকর্মীরা ঝেঁটিয়ে জল বাইরে ফেলে দেন।

পুরনো খবর:





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.