মমতার হাত ধরে আশ্বিনে বোধন নবান্নের
বান্নের সদর দরজার দু’ধারে বসানো হয়েছিল কাশ ফুলের গুচ্ছ। দমকা হাওয়ায় সেখান থেকে কাশের রেণু ছড়িয়ে পড়ছে এ-দিক, ও-দিক। উপস্থিত মন্ত্রী-সান্ত্রী-আমলারা পোশাক থেকে কাশ ঝাড়তেই ব্যস্ত। তখন বেলা সাড়ে বারোটা। সদর দরজায় এলেন কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ইন্টেলিজেন্স) পার্থসারথি ঘোষ। পরিবহণসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এসে জিগ্গেস করলেন, “স্যার, এ তো বিপদ হয়ে গিয়েছে! এ ভাবে কাশ ফুল উড়ছে। সমস্যা হয়ে যাবে। ম্যাডামের তো অ্যালার্জি আছে। এগুলো সরাতে হবে।” পরিবহণসচিব ফোনে ধরলেন নবান্ন তৈরির মূল কর্তা, পূর্তসচিব ইন্দিবর পাণ্ডেকে। ব্যস্ত হয়ে পড়লেন সবাই। কিন্তু তার মাঝেই একটা প্রশ্নও উঠে গেল কাশ ফুল বসেছে কার হুকুমে? ম্যাডামই বলেননি তো!
এই আলোচনার মধ্যেই দমকা হাওয়ায় ছড়িয়ে পড়তে লাগল কাশের রোঁয়া। উড়ল খানিক। সরানোও হল কিছুটা। এ সব করতে করতেই পেরিয়ে গেল মিনিট পনেরো। হঠাৎ পুলিশের বাঁশি। নবান্নে পা রাখছেন ‘ম্যাডাম’।
তত ক্ষণে অবশ্য কাশের গুচ্ছে ফুল নেই, রয়েছে শুধু কাশ-কাঠি।
ঠিক বারোটা পঞ্চাশেই এলেন ম্যাডাম, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গী মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র এবং স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্ন-চত্বরে তখন মুহুর্মুহু শঙ্খধ্বনি। মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে এগিয়ে গেলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থ, হাওড়ার জেলাশাসক শুভাঞ্জন দাস ও হাওড়ার পুলিশ কমিশনার অজেয় রানাডে। নবান্নের দরজায় দাঁড়িয়ে অমিত মিত্র, ফিরহাদ হাকিম-সহ একাধিক মন্ত্রী। তবে সেই দলে ছিলেন না সুব্রত মুখোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অরূপ বিশ্বাস, ব্রাত্য বসু-সহ কয়েক জন।
উঠল জাতীয় পতাকা, বাজল জাতীয় সঙ্গীত। মুখ্যমন্ত্রী ঢুকে পড়লেন নবান্ন’য়, সরকারের নতুন সদর দফতরে। গত ২৩ অগস্ট মহাকরণে ঘোষণা করেছিলেন, সচিবালয় সরবে গঙ্গার পশ্চিম পাড়ে। তার দেড় মাসের মাথায়, মহালয়ার পরের দিন সচিবালয় যখন নবান্নে উঠে এল, পুব পাড়ের মহাকরণে সে দিন খুলল না অধিকাংশ ঘরের দরজাই।
নতুন দিগন্ত
‘নবান্ন’র জানলা থেকে শহরে চোখ মুখ্যমন্ত্রীর। শনিবার এইচআরবিসি ভবনে। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
পনেরো তলা বাড়ির ‘টপ ফ্লোর’-এ হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর অফিস। তার দক্ষিণ-পূর্ব পুরোটাই খোলা। মুখ্যমন্ত্রী বসছেন উত্তর দিকে মুখ করে। ঠিক হয়েছে, সেখান থেকে দেখা যায়, এমন এলাকায় কোনও বেসরকারি হোর্ডিং থাকবে না। জায়গাটিকে ‘গ্রিন জোন’ করতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী নিজে।
মহাকরণের অফিসের আসবাবপত্রই তুলে আনা হয়েছে নবান্নে। সেই চেয়ার-টেবিল এমনকী, রবীন্দ্রনাথের ছবিও। দক্ষিণের বারান্দায় কিছু ক্ষণ পায়চারি করলেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “ভীষণ খোলামেলা। বেশ ভাল হয়েছে।”
তবে শুধু পনেরো তলাই নয়, বৈঠকের পরে মুখ্যমন্ত্রী ঘুরে দেখেছেন নবান্নের এ-দিক, সে-দিক। দেখে এসেছেন মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি ও মন্ত্রিসভার বৈঠকের ঘর। সেই ঘরে ঢুকে খোঁজ নিলেন, কতগুলি বসার জায়গা রয়েছে? মুখ্যসচিব জানান, ৪৮টি। এ ছাড়া, প্রয়োজনে পিছনে পরিষদীয় সচিবদের বসার বন্দোবস্তও করা হয়েছে। যা দেখেশুনে তৃপ্ত মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, “খুব সুন্দর হয়েছে।” এর পরেই প্রশ্ন, মন্ত্রিসভার বৈঠকে আমার মুখ্যসচিব কোথায় বসবেন? পূর্তসচিব জানালেন, “ম্যাডাম, আপনার ঠিক পাশেই।”
এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী সোজা গেলেন কনফারেন্স রুমে। ডেকে নিলেন সচিবদের। মিনিট পনেরোর বৈঠক সেরে নিলেন রাজ্যের প্রশাসনিক শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে। সেখানে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় তিনি বলেন, “বাংলার মর্যাদা ফেরাতে হবে। সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি। আমিও পরিশ্রম করছি। আপনারাও করুন।” যে ভাবে অতি দ্রুত কাজ করে হাওড়ার মন্দিরতলার এইচআরবিসি-র ভবনটিকে সচিবালয়ের চেহারা দিয়েছে পূর্ত দফতর, তার ভূয়সী প্রশংসা করেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকে উপস্থিত মন্ত্রী-সচিবেরা দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে পূর্ত দফতরের কর্তাদের অভিনন্দন জানান। এ ছাড়া, পূর্তসচিব ইন্দিবর পাণ্ডে এবং সিটি ডিভিশনের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার কনকেন্দু সিংহকে মুখ্যমন্ত্রী ব্যক্তিগত ভাবে স্মারক দিয়ে পুরস্কৃত করেন। পূর্ত দফতরের এত বড় কর্মকাণ্ড চললেও নবান্নের উদ্বোধনে অবশ্য দেখা যায়নি পূর্তমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদারকে।
এ দিন একটি ফাইলই সই করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেটি হল, পূর্ত দফতরের যে সব কর্মী দিন-রাত পরিশ্রম করে গঙ্গার পশ্চিম পাড়ের নতুন সচিবালয় তৈরি করেছেন, তাদের বিশেষ পুরস্কার দেওয়ার সরকারি আদেশনামা। আগামী কয়েক দিনের পুজো-উদ্বোধনের সূচিও এ দিন চূড়ান্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী। নবান্ন সূত্রের খবর, পুজো অবধি খুব কম সময়ের জন্যই দফতরে আসবেন মুখ্যমন্ত্রী। দুপুর থেকেই পুজো উদ্বোধনে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। এ সবের ফাঁকেই মুখ্যসচিবের সঙ্গে একটি বৈঠকও সেরে ফেলেন মমতা।
নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী প্রবেশ করলেও যে এগারোটি দফতর এখানে এসেছে, তাদের কাজ শুরু হতে আরও দিন সাতেক লাগবে বলে জানান সরকারি কর্তারা। ২৩ সেপ্টেম্বর সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর প্রথম উঠে এসেছিল এই বাড়িতে। এখনও এই দফতরের ফাইলপত্র খুলে অফিস সাজানো সম্পূর্ণ হয়নি। আর যে সমস্ত দফতর গত দু’তিন দিনে নবান্নে এসেছে, তাদের অফিস গুছিয়ে নিতে আরও সময় লাগবে। শুধু অর্থ দফতরের বাজেট শাখাটি সচল হয়েছে। চালু হয়েছে অর্থ দফতরের গুরুত্বপূর্ণ সার্ভারটিও। কিন্তু এখনও কর্মী-অফিসারদের বসার জায়গা অগোছাল। এমনকী, অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের ঘরও কাজকর্ম অসম্পূর্ণ। মুখ্যসচিব এবং স্বরাষ্ট্রসচিবের ঘরেও টেলিফোন সংযোগ আসেনি। তবে বিকেলে টেলিফোন সংযোগ এসে গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে। দফতরে দফতরে স্তূপ হয়ে রয়েছে বাক্সবন্দি ফাইলপত্র।
নজরদারির দায়িত্বে থাকা এক কর্তার কথায়, “শুরুটা এ দিন হয়ে গেলেও কালীপুজোর আগে গুছিয়ে বসা যাবে না।” তা মুখ্যমন্ত্রীর পরখ করে গিয়েছেন ‘প্রেস কর্নার’-এ এসেও। তিনি চেয়েছিলেন, সাংবাদিকদের সঙ্গে দু’চার কথা বলতে। কিন্তু স্থানাভাব আর হুড়োহুড়িতে মুখ্যমন্ত্রীর আর আড্ডা মারা হয়নি। নিজের দফতরেই অধিকাংশ সময় কাটান তিনি। নবান্ন ছাড়েন ঠিক সওয়া পাঁচটা নাগাদ। যখন গেট থেকে মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় বেরোচ্ছে, সামনেই বিশালাকার ব্যানার টাঙিয়েছেন মধ্য-হাওড়ার বিধায়ক তথা মন্ত্রী অরূপ রায়। তাতে লেখা, ‘শরতের এই আগমন, যেন মহামায়ার পদধ্বনি’। রাজ্যবাসীর পায়ের শব্দ এর পর শোনা যাবে নতুন সচিবালয়ে, যার ঠিকানা এর মধ্যেই লেখা হয়ে গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী নামাঙ্কিত প্যাডের পাতায়। এ দিন সেই পাতায় কয়েকটি পুজোকে শুভেচ্ছাপত্র লেখেন তিনি। যেখানে ঠিকানা লেখা: নবান্ন, ৩২৫, শরৎ চ্যাটার্জি রোড, থানা-শিবপুর, জেলা হাওড়া।

এই সংক্রান্ত অন্য খবর...

পুরনো খবর:





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.