প্রতিপদেই বোধনের সুর!
সেই সুর বেজে উঠল গঙ্গার পশ্চিম প্রান্তে রাজ্যের নতুন সচিবালয় ‘নবান্ন’-র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। ঢাকের বাদ্যি থেকে শঙ্খধ্বনি। পুলিশি ব্যান্ড থেকে বিউগল। কাশফুল থেকে ধানের শিস কী ছিল না শনিবারের ওই সংক্ষিপ্ত উদ্বোধনকে ঘিরে।
সব মিলিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে নবান্নর উদ্বোধনকে ঘিরে হাওড়ার মন্দিরতলা কার্যত উৎসবের চেহারা নিয়েছিল। নতুন বাড়িতে মুখ্যমন্ত্রীর পৌঁছনোর কথা ছিল বেলা ১২টায়। তার আগেই মমতাকে অভ্যর্থনা জানাতে চলে এসেছিলেন মন্ত্রিসভার চার-পাঁচ জন সদস্য এবং পুলিশ-প্রশাসনের বেশ কিছু আধিকারিক। তারও আগে থেকে অবশ্য সাতসকালেই এইচআরবিসি ভবনের সামনে জমতে শুরু করেছিল উৎসাহী মানুষের ভিড়। ছিল পুলিশের আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা। মোতায়েন ছিল র্যাফ ও কমব্যাট ফোর্সও। তবে ভবনের ১০০ মিটারের মধ্যে কারওকে
ঘেঁষতে দেয়নি পুলিশ। তা সত্ত্বেও দ্বিতীয় সেতুর অ্যাপ্রোচ রোডের আনাচে-কানাচে কৌতুহলী মানুষের অভাব ছিল না। আশপাশের বাড়িগুলোর জানালা বা বারান্দা থেকেও ক্রমাগত উঁকি মেরেছে উৎসাহী মুখ।
মুখ্যমন্ত্রীর গৃহপ্রবেশকে ঘিরে নবান্নের ভিতরে-বাইরে ছিল এ দিন সাজসাজ রব। তাঁর আগমনকে ঘিরে দিন কয়েক আগেই সেতুর অ্যাপ্রোচ রোডের থামে রং পড়েছে। রাস্তার পাশে জমে থাকা কাদা ও ময়লা সাফাইয়ের কাজে লাগানো হয়েছে দিন-রাতের লোক। মুখ্যমন্ত্রীর যাতায়াতের পথে দু’পাশে সেতুর রেলিং তুলে মাটি ফেলে লাগানো হয়েছে সবুজ ঘাস আর বাহারি গাছ। সেতুর রেলিংয়ে লাগানো হয়েছে কমলা, সাদা ও হলুদ রঙের বেলুন। ঝুলছে মুখ্যমন্ত্রীর কাটআউট এবং তাঁকে স্বাগত জানিয়ে লেখা নানা রকম ব্যানার। |
হাওড়ার বিভিন্ন ক্লাবের ছেলেরা ড্রাম ও ব্যান্ড বাজিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। বাঁশিতে সুর ওঠে ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা.....’। দুপুর ঠিক পৌনে ১টায় চালকের পাশের আসনে বসে গাড়ির কাচ নামিয়ে রাস্তার দু’পাশের জনতাকে হাতজোড় করে নমস্কার জানিয়ে নতুন বাড়িতে ঢোকেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক ঝলকের দেখা, তাতেই ভিড় জমানো মানুষের বাঁধভাঙা উচ্ছাস! কেউ হাত নাড়ছেন, কেউ বা প্রতি-নমস্কার করছেন মুখ্যমন্ত্রীকে। গাড়ি থেকে নেমেই মমতা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের ব্যান্ডে বেজে ওঠে জাতীয় সংগীত। এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী উঠে যান ১৫ তলায় তাঁর নতুন ঘরে।
মুখ্যমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে যেমন লাল পাড় সাদা শাড়ি পরে বাড়ির বউরা হাজির ছিলেন, তেমনই ছিল স্কুলপড়ুয়ারাও। ওই দলে ছিল স্থানীয় সরসীবালা গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রীরাও। এসেছিল স্কুলেরই দিদিমণিদের সঙ্গে, একটি বার মুখ্যমন্ত্রীকে সামনে থেকে দেখতে। তবে সকলেরই যে প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে এমন নয়। তাই উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি খানিকটা আক্ষেপ হাওড়ার চ্যাটার্জিহাটের বাসিন্দা মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায় “মুখ্যমন্ত্রীকে দেখতেই সকাল ১০টা থেকে হাতে শাঁখ নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম।
কিন্তু দেখতে আর পেলাম কই?” একই আপশোস বাকসাড়ার সবিতা পালেরও। সরসীবালা স্কুলের শিক্ষিকা ব্রততী চক্রবর্তী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীকে সামনে থেকে দেখবে বলে অনেক আশা নিয়ে মেয়েরা এসেছিল। না পেয়ে ওরা তো বটেই, আমরাও হতাশ।”
মুখ্যমন্ত্রী নতুন ভবনে ঢুকে যাওয়ার পর থেকে জনতার ভিড় হালকা হতে শুরু করলেও বেলা যত গড়িয়েছে নবান্নমুখী গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে।
এক সময় একাধিক মন্ত্রী, অফিসার ও পুলিশকর্তাদের গাড়িকে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় নতুন ভবনে ঢোকার সংকীর্ণ রাস্তায়।
এ দিন এত গাড়ি নবান্নে পৌঁছয় যে ভবনের ভিতরে ও আশপাশে স্থানাভাব দেখা যায়। পরিস্থিতি সামনাল দিতে শেষ পর্যন্ত সরকারি গাড়িগুলিকে রাখা হয় নবান্ন লাগোয়া নতুন বাসস্ট্যান্ডে। ওই স্ট্যান্ড থেকে এ দিনই প্রথম সরকারি বাস চলাচল শুরু হয়। পরিবহণকর্তারা জানাচ্ছেন,
প্রথম দিন ওই স্ট্যান্ড থেকে ৩০টি বাস চলেছে। পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র জানিয়েছেন, নবান্নে পৌঁছনোর জন্য বিভিন্ন রুটে ৫০০ সরকারি বাস দেওয়া হয়েছে।
|
ছবি: দেবস্মিতা চক্রবর্তী, রণজিৎ নন্দী ও সুদীপ্ত ভৌমিক। |