হাওড়ার মন্দিরতলায় শনিবার দুপুরে রাজ্যের নতুন প্রশাসনিক ভবন ‘নবান্ন’-র উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওই বাড়ির উদ্দেশে অভিযানে নামার কথা ঘোষণা করল সিপিএম। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের নেতা ও প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেবের হুঁশিয়ারি, “উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএমের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে দু’লক্ষ মানুষ নবান্ন অভিযান করবে ডিসেম্বরের শেষে বা জানুয়ারির শুরুতে। সিঁথি ও ভিআইপি রোড থেকে মিছিল যাবে নবান্ন অভিমুখে।”
কেন তাঁদের এই সিদ্ধান্ত, তার একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন গৌতমবাবু। তিনি নবান্নকে ‘মমতার জলসাঘর’ বলে কটাক্ষ করে বলেন, “টালির ঘরে থাকা মেয়ের পায়ে হাওয়াই চটি। ভাইরা সব কোটিপতি! তাঁর এই ভাবে বাড়ি সাজাতে কত কোটি সরকারি টাকা খরচ হল, তার হিসেব চাই। কারণ, এটা জনগণের টাকা।” মমতা যাবেন বলে গঙ্গাসাগরে বহু টাকা ব্যয় করে সেগুন কাঠের বাংলো বানানো হয়েছিল বলে দাবি করে গৌতমবাবু বলেন, “এই ভাবে নিজের জন্য কি সরকারি টাকা খরচ করা যায়, যেখানে নাকি সরকারের ঘরে টাকাই নেই!”
সিপিএমের হুঁশিয়ারিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। এ দিন মহাকরণে তিনি বলেন, “কবে যাবেন তা আগে থেকে জানিয়ে দেবেন। তা হলে সেই দিন আমরা বারাসতে সিপিএমের পার্টি অফিস অবরোধ করিয়ে দেব।”
নবান্ন নিয়ে মৃদু কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রও। রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ের সমাবেশে তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী পুজোর সময় নবান্ন উপহার দিয়েছেন। কোটি কোটি টাকা খরচ করে তা সাজানো হয়েছে।” তাঁর প্রশ্ন, “এতে সাধারণ মানুষের কী উপকার হবে?”
রাজ্যের মূল প্রশাসনিক ভবনের খরচ নিয়ে যদি বিরোধী দলের অভিযোগ থাকে, তা হলে তার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডাক না পাওয়ার জন্য ব্যথিত হয়েছেন বিধানসভার সরকার পক্ষের মুখ্য সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কেন তাঁকে দেখা গেল না? শোভনবাবুর জবাব, “সরকারি যে কোনও অনুষ্ঠানে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয় তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের মাধ্যমে। কিন্তু নবান্নের অনুষ্ঠানে যাওয়ার আমন্ত্রণই পাইনি।”
মহাকরণ থেকে যে ভবনে রাজ্য প্রশাসনের সদর কার্যালয় এ দিন সরে গেল, এক সময় তার নির্মাণে বাধা দিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। এক দশকেরও বেশি সময় আগে একটি ‘গার্মেন্ট পার্ক’ তৈরি করার জন্য পনেরো তলা এই নতুন ভবনটি তৈরি করেছিল হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশন বা এইচআরবিসি। নাম দেওয়া হয়েছিল এইচআরবিসি ভবন। কিন্তু বাড়িটি ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে এই অভিযোগে সে দিন পথে নেমেছিলেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।
সে দিনের আন্দোলনের অন্যতম নেতা এবং বর্তমান সরকারের কৃষিবিপণন মন্ত্রী অরূপ রায়ের সাফ কথা, “ওরা বাড়িটি বস্ত্র ব্যবসায়ীদের কাছে বেচে দিচ্ছিল বলে আন্দোলন করেছিলাম। এর পরে বাড়িটি অকেজো হয়ে পড়ে ছিল বলে মুখ্যমন্ত্রী ভবনটিকে কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।” সেই সময় এইচআরবিসি-র চেয়ারম্যান ছিলেন সিপিএম নেতা ও হাওড়া পুরসভার প্রাক্তন মেয়র স্বদেশ চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, “যাঁরা সে দিন আন্দোলন করলেন তাঁরাই আবার ওখানে গিয়ে বসলেন!” তাঁর মন্তব্য, “সে দিন বিরোধিতা করলেও আজ যখন সেই বাড়িটি প্রশাসনের কাজে লাগল, তখন অন্তত বাম সরকারকে কৃতজ্ঞতা জানাতে পারত এই সরকার। তবে এটাও ঠিক যে, কারও অবদান স্বীকার করার মতো শিষ্টাচার বা সংস্কৃতিবোধও এই দলটির নেই।”
স্বদেশবাবুর এই ক্ষোভের কথা শুনে অবশ্য বর্তমান মন্ত্রী বলেছেন, “যে দফতরের অফিসাররা বাড়িটি তৈরি করেছিলেন, তাঁদের তো আগেই ধন্যবাদ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের কী আছে!” |