নেই ব্যস্ততার লেশ, স্মৃতি হাতড়ে চলেছে ভাঙা হাট
র দুপুরেও কাজের ব্যস্ততা নেই। ছিল কর্মিবর্গ ও প্রশাসনিক সংস্কার দফতর। এখন তার জানলা হাট করে খোলা। অঝোরে বৃষ্টির জল ঢুকছে হুহু করে। মেঝেতে মুখ থুবড়ে পড়ে রয়েছে চেয়ার-টেবিল। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে একগাদা ধুলোপড়া ফাইল। ভিজছে বৃষ্টির জলে। কারও কোনও উচাটন নেই। খেয়ালও নেই। শনিবারের বারবেলায় ফেলে যাওয়া মহাকরণের নিছকই এক টুকরো ছবি। এমনই বিক্ষিপ্ত ভাঙা হাটের ছবি কার্যত গোটা মহাকরণ ঘিরে।
হাওড়ার মন্দিরতলায় উঠে গিয়েছে ১১টি দফতর, বাকি বেশ কিছুও চলে গিয়েছে কলকাতার বিবিধ সরকারি ভবনে। যে ক’টি থেকে গিয়েছে, সেখানে এ দিন অন্তত চোখে পড়েনি তেমন কোনও ব্যস্ততা। অধিকাংশই মজে রয়েছেন অতীতের স্মৃতিচারণায়। কেউ বলছেন, প্রথম যে দিন চাকরি করতে এই বাড়িটায় এসেছিলাম..., কেউ বলছেন, ভাঙাচোরার আগে এক বার ছেলেমেয়েকে ঘুরিয়ে দেখিয়ে দিয়েছি মহাকরণ, কারও মুখে, এমনি করেই আর ক’টা দিন কাটিয়ে দেওয়া...।


ফাঁকা মহাকরণে পড়ে চাবির গোছা। শনিবার। ছবি: প্রদীপ আদক।
রাজ্যের সচিবালয় অস্থায়ী ভাবে হাওড়ায় চলে যাওয়ায় ভাটা পড়েছে প্রশাসনিক সদর দফতরের নিরাপত্তাতেও। অন্য দিনের মতো বিভিন্ন কাজে আসা সাধারণ মানুষের জন্য নিয়মবিধি মানার বাধ্যবাধকতা নেই। অনেকটাই ঢিলেঢালা পুলিশি নজরদারি। এমনকী, গোটা মহাকরণে পুলিশের সংখ্যাও ছিল হাতে গোনা। মুখ্যমন্ত্রীর ঘরের সামনে, মহাকরণের প্রবেশপথে কিংবা চারপাশের কিয়স্কগুলিতে খুব কম সংখ্যক পুলিশকেই এ দিন পাহারা দিতে দেখা গিয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, মহালয়ার ছুটি থাকা সত্ত্বেও শুক্রবার মহাকরণের নিরাপত্তার দেখভালে ছিল তিনশোর মতো পুলিশ।
শনিবার এক ধাক্কায় তা একশোরও নীচে নেমে গিয়েছে।
এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ মহাকরণে গিয়ে দেখা যায়, সাধারণ মানুষের ঢোকার জন্য বছরখানেক আগে যে ‘ভিজিটর্স গেট’ তৈরি করা হয়েছিল, সেটি বন্ধ। প্রধান ফটক দিয়েই সকলে ঢুকছেন বেরোচ্ছেন। সেখানে কয়েক জন পুলিশ বসে। দু’দিন আগেও যেখানে তাঁদের ওয়াকিটকিতে মহাকরণের বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকদের কাছ থেকে ঘনঘন নির্দেশ আসত, শনিবার তাতেও ভাটা। এমনকী, মুখ্যমন্ত্রীর ঘরের সামনে যে দু’জন পুলিশকর্মী পাহারা দিচ্ছেন, তাঁদের হাতেও নেই ওয়াকিটকি। কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “মহাকরণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা-সহ প্রশাসনিক আদব-কায়দা এতটাই আলাদা যে এখানে টানা কাজ না করলে তা বোঝা যাবে না। তাই এত দিন যাঁরা মহাকরণে ডিউটি করতেন, তাঁদেরই অধিকাংশকে নবান্নে পাঠানো হয়েছে।” ফলে এ দিন যে পুলিশকর্মীদের মহাকরণে ডিউটি করতে দেখা গিয়েছে, তাঁদের অনেকেই নতুন।
মনমরা পূর্ত দফতরের কেয়ারটেকাররাও। এত দিন তাঁদের হাতেই ছিল মহাকরণে মন্ত্রী-সান্ত্রীদের ঘর খোলা-বন্ধের চাবিকাঠি। তবে বহু দিনের সেই অভ্যেস অবশ্য এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি তাঁরা। তাই মন্ত্রী-সচিবদের ঘর থেকে ডাক না পেয়েও দিনভর হাতে চাবির গোছা নিয়ে লম্বা অলিন্দে ঘুরে বেড়াতে দেখা গিয়েছে একাধিক কেয়ারটেকারকে। তাঁদেরই এক জন বলেন, “সকাল ৯টার মধ্যে ঘর খুলে দেওয়ার কাজ করছি ২৫ বছর। কিন্তু এ বার সেই কাজে ছেদ পড়ল।” কেয়ারটেকারদের একাংশের আশঙ্কা, এর পরে হয়তো স্বেচ্ছাবসর নিয়ে একে-একে বিদায় নিতে হবে সকলকে। কারণ, তাঁদের কাউকেই নতুন সচিবালয়ের দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। বেসরকারি সংস্থার হাতে ওই দায়িত্ব তুলে দিয়েছে পূর্ত দফতর।
নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর অফিস-সহ ১১টি দফতর উঠে গেলেও ৮ মন্ত্রীর ঘর অবশ্য রয়েই গিয়েছে মহাকরণে। তাঁরা হলেন, শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র, অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ মন্ত্রী উপেন বিশ্বাস, পর্যটনমন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী, সমাজকল্যাণমন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র, কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায়, আবাসনমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এ দিন মদনবাবু ছাড়া আর কোনও মন্ত্রী পা দেননি মহাকরণে। আর এসেছিলেন পর্যটনসচিব অজিতরঞ্জন বর্ধন। কর্মিবর্গ ও প্রশাসনিক দফতরেরও দায়িত্ব তাঁর হাতে। সেই দফতর অবশ্য চলে গিয়েছে নবান্নে।

এই সংক্রান্ত অন্য খবর...
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.