|
|
|
|
ছ’বছরের শিশুকে দেওয়ালে পিষে দিল গাড়ি, ধৃত ১ |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
পাড়ার গলির কাছে পৌঁছেই বাড়ি ফেরার আনন্দে বাবার হাত ছেড়ে দৌড়তে শুরু করেছিল বছর ছয়ের শুভম শর্মা। ঠিক তখনই, গলির মুখ থেকে বেরিয়ে এল একটি গাড়ি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই শুভমের বাবা দেখলেন, গাড়িটির ধাক্কায় দেওয়ালে পিষে গেল একরত্তি ছেলেটা। পরপর দু’বার।
পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার বেলা এগারোটা নাগাদ লেকটাউনের ক্যানাল স্ট্রিটের ঘটনা। অচেতন অবস্থায় শুভমকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। গাড়িটি চালাচ্ছিলেন শ্রেয়া সর্বাধিকারী নামে এক তরুণী। তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এলাকার একটি বেসরকারি স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত শুভম। এ দিন বাবা আনন্দ শর্মার সঙ্গে বাড়ি ফিরছিল সে। ক্যানাল স্ট্রিটে আনন্দবাবুদের বাড়ি যাওয়ার রাস্তা খুব সরু। একপাশে রয়েছে দেওয়াল। ওই গলির মুখেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস কমিউনিকেশনের ছাত্রী শ্রেয়াদের তিনতলা বাড়ি। তিনিই গাড়ি চালাচ্ছিলেন। সরু গলি বলে আগুপিছু করে গ্যারাজে গাড়ি ঢোকাচ্ছিলেন। এবং তা করতে গিয়েই ছোট্ট শুভমকে গলির দেওয়ালে ঠেসে দেন। সেখানে তখন গাড়ির চালক দাঁড়িয়ে ছিলেন। আনন্দবাবু ছিলেন পঞ্চাশ মিটার দূরে। |
|
|
নাতির মৃত্যুর পর কান্নায় ভেঙে পড়েছেন সোহমের আত্মীয়।
ডান দিকে সোহম। ছবি: শৌভিক দে। |
|
পুলিশ সূত্রের খবর, দুর্ঘটনা ঘটতেই আশপাশের বাসিন্দারা চলে আসেন। গোলমালের খবর পেয়ে বেরিয়ে আসেন শ্রেয়ার পরিবারের লোকজনও। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। হাজির হন স্থানীয় বিধায়ক সুজিত বসু। শুভমের বাবা আনন্দবাবু পেশায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। বললেন, “চোখের সামনে ছেলেটা মরে গেল। বাঁচাতে পারলাম না। সব হারিয়ে ফেললাম। আমার হাত ধরেই রোজ স্কুল থেকে বাড়ি ফেরে। গলির কাছে এসে দৌঁড় দেয়। গাড়ি গ্যারাজ করার সময় পিছন দিকে খেয়ালই করল না মেয়েটি!”
শ্রেয়ার বাবা পুলিশকে জানান, তাঁর মেয়ের দু’বছরের ড্রাইভিং লাইসেন্স রয়েছে। শ্রেয়া নিয়মিত গাড়ি চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত করেন। গাড়ির চালক পাশেই বসে থাকেন। এর আগে কখনও দুর্ঘটনা ঘটেনি তাঁর। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, গাড়ির চালক পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি ঠিক মতো খেয়াল করলে এই ঘটনা ঘটত না।
লেকটাউন এলাকায় গাড়ি চালানো শিখতে গিয়ে এর আগেও দুর্ঘটনা ঘটেছে। মাসখানেক আগেই লেকটাউনের কাছে সার্ভিস রোডে সন্ধ্যাবেলা গাড়ি চালানো শিখতে গিয়ে আর এক তরুণী দুর্ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। তাতে মারা যান এক পথচারী। সেই ঘটনায় অবশ্য গাড়ির চালককে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। এ দিন ফের একই ধরনের ঘটনায় এলাকার পথ নিরাপত্তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাসিন্দারা।
এ দিন ঘটনার পরে শুভমদের পাড়ায় শোকের ছায়া নেমে আসে। গলি ধরে কিছু দূর এগোতেই শুভমদের টালির বাড়ি। বাড়িতে শুভমের বাবা-মা ও দাদু থাকেন। খবর পাওয়ার পর থেকে মাঝে-মাঝেই জ্ঞান হারাচ্ছেন মা। দাদু কোনও কথা বলার মতো অবস্থার মধ্যে নেই। অভিযুক্ত শ্রেয়া এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। |
|
|
|
|
|