|
|
|
|
যুবকের আত্মহননে প্ররোচনা, অভিযুক্ত পুলিশকর্মী |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
এক যুবককে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। শনিবার সকালে ওই যুবকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হওয়ার পরে তিলজলা থানা এলাকার নোনাডাঙা রেল কলোনির ক্ষিপ্ত বাসিন্দারা ও মৃত যুবকের বাড়ির লোকজন অভিযুক্ত পুলিশকর্মীর শাস্তির দাবিতে প্রায় তিন ঘণ্টা মৃতদেহ আটকে রাখেন। পরে বেলা ১১টা নাগাদ বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে দেহটি উদ্ধার করে ময়না-তদন্তে পাঠায়।
এলাকার মানুষের অভিযোগ, পারিবারিক বিবাদের অভিযোগ পেয়ে ওই যুবককে শুক্রবার স্থানীয় ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। রাতের দিকে পুলিশ তাঁকে বাড়িতে দিয়ে যায় এবং তাঁকে এই মর্মে মুচলেকা লিখিয়ে নেওয়া হয় যে, তিনি স্ত্রীকে আর মারধর করবেন না। শনিবার সকালে উত্তম মণ্ডল (৩০) নামে ওই যুবকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়। পেশায় গাড়িচালক ওই যুবক আত্মঘাতী হয়েছেন বলেই প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের ধারণা। তবে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে গিয়ে ওই যুবককের উপরে মারধর ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত এএসআই অমলেন্দু পাঁজার বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত পুলিশকর্মী কলকাতা পুলিশের সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত। তিনি ছাড়া মৃত যুবকের স্ত্রী-সহ শ্বশুরবাড়ির পাঁচ জনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ করেছেন ওই মৃত যুবকের মা দেবলা মণ্ডল।
উত্তমের দেহ উদ্ধার হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর স্ত্রী সোমাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে সোমার মা হাসি মণ্ডল, মাসি পুষ্পা বাগ এবং সোমার মামা কানু মণ্ডলকেও গ্রেফতার করা হয়। এএসআই-এর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে কলকাতা পুলিশের ডিসি (এসইডি) দেবব্রত দাস বলেন, “তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তে যা বেরোবে, সেই মতোই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” অভিযুক্ত এএসআই-কে জেরা করা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শুক্রবার বিকেলে উত্তমের সঙ্গে সোমার বচসা ও হাতাহাতি হয়। স্বামী তাঁকে মারধর ও নির্যাতন করছেন, ওই অভিযোগ করে স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে ফোন করেন সোমা। স্থানীয়দের অভিযোগ, এর পরেই অমলেন্দু পাঁজা ঘটনাস্থলে আসেন এবং উত্তমকে মারতে মারতে ফাঁড়িতে নিয়ে যান। উত্তমের বাবা পাঁচু মণ্ডলের অভিযোগ, ছেলের খোঁজে ফাঁড়িতে গেলে ওই এএসআই মামলা তুলে নেওয়ার বিনিময়ে ২৫ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে উত্তমকে ফাঁসানো হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয় তাঁকে।
ওই ঘটনায় লিখিত অভিযোগ না পাওয়া সত্ত্বেও পারিবারিক বিবাদে পুলিশ কেন হস্তক্ষেপ করতে গেল ও জোর করে উত্তমকে দিয়ে মুচলেকা লিখিয়ে নিল, প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের একাংশের মধ্যেই। এ দিন নোনাডাঙা রেল কলোনিতে নিজেদের ফ্ল্যাটে বসে উত্তমের মা বলেন, “মুচলেকা লেখানোর পরেই ভেঙে পড়েছিল উত্তম। এক পুলিশকর্মী আমাকে বলেন, ‘দেখেছেন আপনার ছেলের কাজকর্ম!’ এর পরেই ছেলে আমাকে বলে, ‘আমার জন্য তোমাদের এই অপমান সহ্য করতে হচ্ছে।” মুচলেকা লেখানোর সময়ে সোমা ছাড়া তাঁর মা, মাসি, মামা এবং আরও এক জন ছিলেন বলে এলাকার মানুষ জানান।
স্বামী ও স্ত্রী দু’জনেই পুলিশের সামনে মুচলেকা দেওয়ার পরে রাতেই সোমা তাঁর পাঁচ বছরের মেয়েকে নিয়ে লেক গার্ডেন্সের কাছে গোবিন্দপুর রেল কলোনিতে তাঁর বাড়িতে চলে যান। উত্তমের ভাই গৌতমের অভিযোগ, “বৌদি যখন মেয়েকে নিয়ে চলে যাচ্ছে, তখন দাদা বলেছিল, ‘ওরা চলে গেলে আত্মহত্যা করবে। বৌদি কোনও কথাই শুনল না।” পুলিশ জানায়, এ দিন সকালে উত্তমের মা তাঁকে ডাকতে গিয়ে জানালা দিয়ে ঝুলন্ত দেহটি দেখতে পান।
অভিযুক্ত এএসআই এ দিন তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। অমলেন্দু পাঁজার বক্তব্য, “শুক্রবার আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে মিটমাটের চেষ্টা করি।” অমলেন্দুবাবুর দাবি, “আমি কাউকে মারধর করিনি। পরে স্বামী-স্ত্রী দু’জনই মুচলেকা দিয়ে ব্যাপারটা মিটিয়ে নেন।” সোমার ভাই অমিত মণ্ডলের দাবি, “কয়েক বছর ধরে দিদিকে জামাইবাবু মারধর করছিল, অত্যাচার চালাচ্ছিল। শুক্রবারও একই ঘটনা ঘটে।” |
|
|
|
|
|