নবান্নর প্রবেশপথের ভোল বদল সাড়ে তিন ঘণ্টায়
ঠেলার নাম বাবাজি।
চাপে পড়লে যে লাল ফিতের ফাঁস কেটেও কাজে গতি আনা যায়, উদ্বোধনের ২৪ ঘণ্টা আগে ‘নবান্ন’-কে ঘিরে চরম তৎপরতা সেটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল। লালদিঘির পাড়ের মহাকরণ থেকে গঙ্গার ও পারের নবান্ন-এ সপার্ষদ চলে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ, শনিবার বেলা সাড়ে ১২টায় নতুন ভবনে গৃহপ্রবেশ করবেন তিনি। শুক্রবার তুলির শেষ টান দিতে প্রায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় নবান্ন-র চেহারা বদলে গেল ঘণ্টায় ঘণ্টায়।
কী রকম?
দুপুর দেড়টা। ফটকের সামনে পায়ের পাতা ডোবা জল। কোনও রকমে দু’-একটি ইঁট পেতে তার উপর দিয়ে ভারসাম্য বজায় রাখার খেলা দেখিয়ে চলছে যাতায়াত।
বেলা তিনটে। বালতি করে জল তুলে ফেলা হচ্ছে একটু দূরে। বাড়ানো হয়েছে ইঁটের সংখ্যাও।
মহাকরণ থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে স্ক্যান মেশিন।
বিকেল পাঁচটা। সাড়ে তিন ঘণ্টা আগের ছবিটা ভোজবাজির মতো অদৃশ্য! জল, ইঁট উধাও। সিমেন্ট দিয়ে বাঁধিয়ে দেওয়া হয়েছে ফটকের প্রবেশদ্বার। সেই পথে একের পর সরকারি কর্তাদের গাড়ি ঢুকছে।
সকালে যা ছিল বাস্তব, বেলা গড়াতেই তা অতীত! কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হবে কী? কারণ, এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত নতুন প্রশাসনিক ভবনের প্রস্তুতির কাজ অনেকটাই বাকি ছিল। নবান্নের দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্তারা অবশ্য আত্মবিশ্বাসী, রাত পোহালে বাকি কাজের অনেকটাও শেষ করে ফেলা যাবে। মুখ্যমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য-সহ সকলের আতিথেয়তা রক্ষায়, কিংবা দুপুর ৩টেয় রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক করতে কোনও সমস্যা হবে না।
এ দিন দুপুরেও কিন্তু ভবনের ভিতরের ছবিটা একেবারেই অবিন্যস্ত। কোথাও বস্তাবন্দি হয়ে পড়ে ফাইলপত্র, কোথাও চেয়ার-টেবিল একে-অন্যের ঘাড়ে লাট খাচ্ছে। কোথাও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা নানা রংয়ের সোফা। তারই মধ্যে চলছে রংয়ের কাজ, কাঠের কাজ। মূল প্রবেশদ্বার দিয়ে ঘন ঘন গাড়ি ঢুকছে তা থেকে নামছে ঘড়ি, মুখ্যমন্ত্রীর ছবি, বাক্সবন্দি বিভিন্ন জিনিসপত্র। ভবনের সামনের চত্বর সাজানো হচ্ছে গাছের চারা ও ঘাস লাগিয়ে।
যে পথে মুখ্যমন্ত্রী-সহ অন্যান্য মন্ত্রীরা ঢুকবেন, তার দু’ধারে বসছে ইঁটের মতো দেখতে নীল-সাদা রংয়ের টাইলস। এক জন শ্রমিক বালি ফেলে রাস্তা মসৃণ করার কাজ করছেন, আর এক জন বসাচ্ছেন টাইলস। তার পাশে দাঁড়িয়েই কয়েক জন সদ্য পোঁতা গাছের চারপাশে পাঁচিল তোলার কাজ করে চলেছেন একমনে। রাস্তায় ইঁট গাঁথা, তার উপর সিমেন্টের প্রলেপ, তাতে মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দের নীল-সাদা রং ঘড়ির কাঁটা ধরে চলছে কাজ।
আধুনিকতা ও আভিজাত্য যদি নতুন ভবনের অভিজ্ঞান হয়, তার নিরাপত্তা ব্যবস্থাতেও অন্য মাত্রা দিতে চাইছে কলকাতা পুলিশ। উদ্বোধনের আগে এ দিন প্রায় চিরুনি তল্লাশির মতো গোটা চত্বর পরীক্ষা করা হল স্নিফার ডগ আর মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে। বিকেলে পরিস্থিতি সরেজমিন দেখতে যান কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ। মূল প্রবেশদ্বারের সামনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে প্রস্তুতি ও নিরাপত্তার ব্যাপারে খোঁজখবর নেন তিনি। তার পরে ভবনের ভিতরে ঢুকে বিভিন্ন তলার হাল হকিকত ঘুরে দেখেন।
ব্যস্ততা ছিল মহাকরণেও। সেটা অনেকটা ভাঙা মেলার শেষ দিনের মতো। সরকারি ভাবে শনিবার মহাকরণ থেকে ১১টি দফতর চলে যাচ্ছে নতুন ভবনে। তাই বিভিন্ন দফতরের ফাইল, চেয়ার-টেবিল-সহ আসবাবপত্র ম্যাটাডোরে করে পাঠানো হয়েছে। ৬০০ কেজি ওজনের স্ক্যানার মেশিন নিয়ে গিয়েছে কলকাতা পুলিশের বিশেষ ক্রেন। মুখ্যমন্ত্রীর ঘরের দরজা থেকে খুলে নেওয়া হয়েছে ‘মমতা ব্যানার্জী’ লেখা ইংরাজি ও বাংলা নামের ফলকও।
রাতের নবান্ন।
মহালয়া উপলক্ষে এমনিতে এ দিন ছু’টি ছিল মহাকরণ। তবু মন্ত্রী-আমলাদের ঘর থেকে মালপত্র টানাটানির শব্দ আর ঠিকা শ্রমিকদের কথাবার্তায় ছুটির নিস্তব্ধতা চাপা পড়ে যায়। চেনা মহাকরণের করিডর আটকে গিয়েছে ছেঁড়া ফাইল, পুরনো কাগজ, চায়ের ভাঁড়, ইলেকট্রিক তার ও দড়ির বান্ডিলে। এর মধ্যেই সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বিকেলের দিকে এক বার ঘুরে যান। আসেন পুলিশের অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল (প্রশাসন) অধীর শর্মা।
পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার রাত থেকেই কড়া পুলিশি পাহারায় মুখ্যমন্ত্রীর ঘর থেকে সমস্ত জিনিসপত্র, চেয়ার-টেবিল বের করা হয়েছে। এ দিন বেলা পৌনে বারোটা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রীর ঘরের অ্যাকোরিয়াম, ছবি আঁকার ক্যানভাস, ঘড়ি, টেলিফোন এক এক করে খুলে নিয়ে যান ঠিকাদারের কর্মীরা।
মহাকরণের যাবতীয় ঘড়ি রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেন প্রদ্যুৎ দত্ত। তাঁর কথায়, “বিধান রায়ের আমল থেকে মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে ব্রিটিশ আমলের ঘড়িটি ছিল। আজ খুলে নিলাম। খারাপ লাগছে।” মহাকরণের দোতলায় সংরক্ষিত এলাকার মন্ত্রী-আমলাদের ঘরের তালা খোলেন সজল সিংহ। পূর্ত দফতরের এই কর্মীও নস্টালজিক, “পনেরো বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রী-সহ দোতলার সব ঘরের দরজার তালা খুলেছি ও লাগিয়েছি। কাল থেকে আর সেটা করতে হবে না ভেবে মন খারাপ লাগছে।”

শুক্রবার দেবাশিস রায় ও দীপঙ্কর মজুমদারের তোলা ছবি।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.