করিম বেঞ্চারিফাও কি এখন প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো ‘ভোকাল টনিক’ দিচ্ছেন? না হলে আই লিগের প্রথম দু’ম্যাচে বেঙ্গালুরু এবং চার্চিলের বিরুদ্ধে অতি-সাধারণ পারফর্ম করা এরিক মুরান্দা শহরে ফিরেই গোলের পর গোল করে যাচ্ছেন কী ভাবে?
এরিক কোচকে দেখিয়ে বলছেন, “কোচের নির্দেশ ভুলিনি। আর অনুশীলনে ফলো করেছি কাতসুমিকে। তাই বোঝাপড়া গড়ে উঠেছে। ও বল পেলেই আমি গোল করার মতো জায়গায় চলে যাচ্ছি।” আর তাঁর কোচ করিম বেঞ্চারিফা বলছেন, “এরিককে নির্দেশ দেওয়া আছে একটা নির্দিষ্ট জায়গা জুড়ে খেলতে। সেটা করছে বলেই গোল পাচ্ছে।”
যদিও গঙ্গাপারের তাঁবুর ভিতরের খবর, এরিককে নিয়ে বিস্তর খেটেছেন করিম। হাওড়া স্টেডিয়ামে অনুশীলনের সময় এক ঘণ্টা আগে কিনিয়ার এই স্ট্রাইকারকে নামিয়ে বিশেষ অনুশীলন করিয়েছেন। গোয়াতেও অনুশীলন শেষে এরিকের জন্য আলাদা ট্রেনিং শিডিউল বরাদ্দ থাকত। সেখানেই করিম এরিককে বলেন, “খেলার সময় উইংয়ের দিকে সরে যাচ্ছ কেন? আক্রমণভাগে একদম সামনে থাকো। তা হলে গোল পাবেই।” আর এতেই দুরন্ত ফর্ম ঝরে পড়ছে মুম্বই থেকে দুরন্ত এক্সপ্রেসে চেপে বাগানে ট্রায়াল দিতে আসা এই ফুটবলারের। কভার ভাল। বলের জন্য শেষ পর্যন্ত দৌড়োন। এবং পায়ে গোলার মতো শট ইউএসপি এই কিনিয়ানের। তাঁকে নিয়ে শুরুতে মনে হাজারো দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল সবুজ-মেরুন জনতার। তিনিই এ দিন পুলিশের বিরুদ্ধে জোড়া গোল করে যুবভারতী ছাড়লেন সমর্থকদের ‘এরিক’, ‘এরিক’ ধ্বনির মাঝে। যা দেখে করিমের টিপ্পনী, “অনেকে এরিকের সমালোচনা করছিল। এ বার তাঁরা চুপ করে ওর খেলা দেখুক।” এ সবের নিটফল ইচে, ওডাফা, আদিল, মণীশ, সাবিথ, আইবর প্রথম একাদশের ছ’জনকে বাইরে রেখেই পুলিশ এসিকে ৪-০ হারাল বাগান। ঘরোয়া লিগে পাঁচ ম্যাচ শেষে ১১ পয়েন্ট নিয়ে আপাতত দু’নম্বরে করিমের ছেলেরা। এরিয়ানের এক পয়েন্ট পিছনে। ষষ্ঠীর দিন আই লিগে পুণে ম্যাচের আগে যা কিছুটা হলেও স্বস্তি দিচ্ছে সবুজ-মেরুন শিবিরকে। |
খুশির চুম্বন
গোল করে এরিক। রবিবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস। |
লিগের চূড়ান্ত পর্বের একদম শেষ ধাপে স্বরূপ দাসের ছেলেরা। রক্ষণও তাদের কমলা জার্সির পিছনে ফ্যাকাশে নম্বরের মতোই। এদের বিরুদ্ধে ৪-৩-৩ ছকে দল সাজিয়েছিল মোহনবাগান। তাঁর ‘মিনি কাতসুমি’ জৌগ্রামের রাম মালিককে করিম রেখেছিলেন দুই স্ট্রাইকার শঙ্কর এবং এরিকের কিছুটা পিছনে। যদিও আক্রমণের সময় রাম ডান দিকে সরে গিয়ে মাঠটাকে বাড়িয়ে নিচ্ছিলেন। আর ডান পায়ের ড্রিবলার কাতসুমিকে কোচ রেখেছিলেন মাঝমাঠের বাঁ প্রান্তে। উদ্দেশ্য, গোলমুখ খোলা। আর বক্সে ভাসিয়ে দেওয়া আসল কাতসুমির বিষাক্ত ইনসুইঙ্গারে পুলিশ গোলকিপারকে বিব্রত করা। এই প্রচেষ্টাতেই জাকিরের গোল। গোলের পর অহেতুক জার্সি খুলে হলুদ কার্ড দেখা মালয়ালি মিডিও-র উচ্ছ্বাসে ক্ষুব্ধ টিম ম্যানেজমেন্ট। বাগানের দ্বিতীয় গোলে যতটা না কৃতিত্ব রাম মালিকের, ততটাই ব্যর্থতা পুলিশের গোলকিপার প্রদীপ এবং স্টপার সমীর বসুর।
দু’গোল হয়ে যেতেই করিম জঘন্য ফর্মে থাকা শঙ্করকে তুলে নামালেন অর্ঘ্যকে। আক্রমণে কাতসুমি চলে এলেন রাম-এরিকের পিছনে। তার পরেই পুলিশ রক্ষণে আছড়ে পড়া শুরু একের পর এক গোলের বল। সেখান থেকেই গতিতে পুলিশ ডিফেন্সকে হার মানিয়ে জোড়া গোল এরিকের।
তবে ৪-০ জিতে ‘সুপার সানডে’ সেলিব্রেশনের দিনেও বাগানের কাঁটা কিন্তু রক্ষণ এবং মাঝমাঠ। সাইডব্যাক ওয়াহিদ, নিকোলাওরা ওভারল্যাপে গেলে দুই উইং হাফ কিন্তু তাঁদের কভার দিতে পারলেন না এ দিনও। পুণে ম্যাচের আগে এই বিষয়টায় কিন্তু চোখ দিতে হবে করিমকে।
মোহনবাগান: শিল্টন, ওয়াহিদ, রোয়িলসন, কিংশুক, নিকোলাও, কাতসুমি, ডেনসন (পঙ্কজ), জাকির (রাজীব), শঙ্কর (অর্ঘ্য), এরিক, রাম। |