মুখ খুললেই শাস্তি মেহতাবদের
বিশ্রাম-বিতর্কে ময়দান এখন ফালোপার পাশে
ই লিগ নয়, এই মুহূর্তে এএফসি কাপকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত ইস্টবেঙ্গলের। আর সেটা করে কোচ মার্কোস ফালোপা কোনও ভুল করেননি। এই যুক্তি থেকেই মেহতাবদের বিশ্রাম দেওয়া নিয়ে বিতর্কে ফুটবলারদের নয়, ফালোপার পাশে দাঁড়াচ্ছেন দেশের সফলতম কোচ থেকে সেরা ফুটবলারদের একটা বড় অংশ।
এমনকী লাল-হলুদ কর্তারাও মনে করছেন, ফালোপা ভুল করেননি। ইস্টবেঙ্গলের অন্যতম প্রধান কর্তা দেবব্রত সরকার এ দিন বলছিলেন, “আমরা কোচের পাশেই আছি। ক্লাবের সদস্য-সমর্থক থেকে প্রত্যেক ভারতবাসী চাইছে এএফসি কাপের ফাইনালে উঠুক ইস্টবেঙ্গল। বিভিন্ন মহল থেকে ফোন পাচ্ছি। ফুটবল সচিব সন্তোষ ভট্টাচার্য আগেই বলেছিলেন, আজ আমিও বলছি, দেশ ও ক্লাবের সুনামের কথা ভেবে আমরা কোচের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি।” এর পর তিনি যোগ করলেন, “আমাদের শক্তিশালী রিজার্ভ বেঞ্চ আছে কী করতে? এই সুযোগে তাদেরও দেখে নেওয়া যাবে।”
বিতর্ক থামাতে লাল-হলুদ ফুটবলারদের মিডিয়ার সামনে মুখে কুলুপ এঁটে থাকার কড়া নির্দেশও জারি করেছে ক্লাব। দেবব্রতবাবু বললেন, “ফুটবলাররা নিয়ম ভেঙে কথা বললে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
আসিয়ান কাপ জয়ী কোচ সুভাষ ভৌমিক অবশ্য ফুটবলারদের বাদ দেওয়া নিয়ে কোনও বিতর্কে ঢুকতে রাজি নন। এ বিষয়ে তাঁর মতামত জানতে এ দিন যোগাযোগ করা হলে বললেন, “ফুটবলারদের বিশ্রাম দেওয়া ঠিক হয়েছে কি না, সেই প্রসঙ্গে ঢুকব না। এটুকু বলতে পারি, এই পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা যে কোনও কোচের পক্ষে যথেষ্ট কঠিন কাজ। কোন টুর্নামেন্টকে গুরুত্ব দেওয়া হবে আর কোনটাকে নয়, এটা কোচের একেবারে ব্যক্তিগত ভাবনা।”
গত বারই যেমন চার্চিলের সামনেও এএফসি কাপে ভাল ফল করার সুযোগ ছিল। কিন্তু সুভাষ ভৌমিক আই লিগকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন এবং গোয়ার দলকে চ্যাম্পিয়নও করেন। রবিবার ইস্টবেঙ্গল প্রসঙ্গে তিনি অবশ্য বলেন, “এ বছর ইস্টবেঙ্গলের যা টিম হয়েছে, তাতে ওদের আই লিগ জেতার বেশ ভাল সম্ভাবনা। কিন্তু তার জন্য একদম প্রথম ম্যাচ থেকে টুর্নামেন্টকে গুরুত্ব দিতে হবে। না হলে পরের দিকে সমস্যা হতে পারে। অবশ্য ইস্টবেঙ্গল এএফসি কাপের ফাইনালে উঠলেও সেটা বড় ব্যাপার হবে। ঠিক ঠাক ব্যালেন্স করে চলতে হবে কোচকে।”
২০০৮-এ ভারতের প্রথম ক্লাব হিসেবে এএফসি কাপের সেমিফাইনালে পৌঁছেছিল আর্মান্দো কোলাসোর ডেম্পো। সে বার শেষ চারেই থেমে গিয়েছিল কোলাসোর স্বপ্নের রথ। এ বার যেন ইস্টবেঙ্গলের মধ্যে দিয়েই নিজের স্বপ্নপূরণ চাইছেন তিনি। গোয়ায় পাঁচ বারের আই লিগ জয়ী কোচকে ফোনে ধরা হলে বলে দিলেন, “মিস্টার ফালোপার সিদ্ধান্ত একেবারে সঠিক। ইস্টবেঙ্গল যদি ফাইনালে যেতে পারে, তবে সেটা দেশের কাছে গর্বের হবে। যে কাজটা আমরা পারিনি, সেটা ইস্টবেঙ্গল করুক এই প্রার্থনাই করি। আর ফাইনালে পৌঁছানোর জন্য যদি আই লিগের দু-একটি ম্যাচকে কম গুরুত্ব দেন ফালোপা, কোনও ক্ষতি নেই।”
সুভাষ ভৌমিক: কোন টুর্নামেন্টকে গুরুত্ব দেওয়া হবে আর কোনটাকে নয়, এটা কোচের একেবারে ব্যক্তিগত ভাবনা।...অবশ্য ইস্টবেঙ্গল এএফসি কাপের ফাইনালে উঠলেও সেটা বড় ব্যাপার হবে। ঠিক ঠাক ব্যালেন্স করে চলতে হবে কোচকে।

আর্মান্দো কোলাসো: মিস্টার ফালোপার সিদ্ধান্ত একেবারে সঠিক। ইস্টবেঙ্গল যদি ফাইনালে যেতে পারে, তবে সেটা দেশের কাছে গর্বের হবে। যে কাজটা আমরা পারিনি, সেটা ইস্টবেঙ্গল করুক এই প্রার্থনাই করি।

প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়: দেশের সম্মান যেখানে জড়িয়ে, তাকেই সবার আগে গুরুত্ব দিতে হবে। এএফসি কাপের কথা ভেবে ফালোপা যদি আই লিগের ম্যাচে মেহতাবদের বিশ্রাম দেন তা হলে সেই সিদ্ধান্ত নির্ভুল।

হোসে ব্যারেটো: আই লিগ তো সবে শুরু হল। এখনও অনেক ম্যাচ বাকি। এএফসি কাপের ফাইনালে যাওয়ার সুযোগ কিন্তু বার বার আসবে না।
কোলাসোর সঙ্গে এক মত জাতীয় দলের অন্যতম সফল কোচ প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বললেন, “দেশের সম্মান যেখানে জড়িয়ে, তাকেই সবার আগে গুরুত্ব দিতে হবে। এএফসি কাপের কথা ভেবে ফালোপা যদি আই লিগের ম্যাচে মেহতাবদের বিশ্রাম দেন তা হলে সেই সিদ্ধান্ত নির্ভুল। আই লিগ অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এএফসি কাপ তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। সব থেকে বড় কথা, এ বার ফাইনালে যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে ইস্টবেঙ্গলের সামনে।”
এক সময়ে ময়দান কাঁপানো চিমা ওকোরিও সোজাসাপটা বলে দিলেন, “এএফসি কাপের জন্য ফালোপা যদি চার-পাঁচ জন ফুটবলারকে বিশ্রাম দেন তবে এত বিতর্কের কী আছে? আর এএফসি কাপের ফাইনালে যদি ইস্টবেঙ্গল ওঠে, তার থেকে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে!”
কালো চিতার মতোই ব্রাজিলীয় কোচের সমর্থনে আর এক ব্রাজিলীয় হোসে ব্যারেটোও সরব। বললেন, “আই লিগ তো সবে শুরু হল। এখনও অনেক ম্যাচ বাকি। এএফসি কাপের ফাইনালে যাওয়ার সুযোগ কিন্তু বার বার আসবে না। ২২ অক্টোবর দ্বিতীয় সেমিফাইনাল হয়ে যাওয়ার পরও আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য ঝাঁপানো যায়। আর যদি ইস্টবেঙ্গল ফাইনালে যায়, তবে তো ইতিহাস হবে। ফুটবলারদের ফিট রাখতে কোচ যদি কয়েক জনকে আই লিগের ম্যাচে বিশ্রাম দেন, কোনও ক্ষতি আছে বলে মনে করি না।”
২২ অক্টোবর ইস্টবেঙ্গল নতুন ইতিহাস গড়তে পারবে কি না, সে কথা সময়ই বলবে। আপাতত লাল-হলুদ ফুটবলারদের মুখ বন্ধ করে বিতর্ক চাপা দেওয়া যায় কি না, সেটাই দেখার।

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.