সুভাষ ভৌমিকের উলটো পথে হেঁটে লাল-হলুদ তাঁবুতে হঠাৎই বিতর্কের ঝড় তুলে দিলেন মার্কোস ফালোপা! মুখে কিছু না বললেও এই সিদ্ধান্ত ঘিরে ক্ষোভে উত্তাল ফুটবলারদের একাংশ। বিরক্তও।
গত বছরের চার্চিলকে আই লিগ জিতিয়েছিলেন সুভাষ ভৌমিক। তাঁর সামনেও এসেছিল এএফসি কাপে ভাল ফল করার সুযোগ। কিন্তু আন্তর্জাতিক টুনার্মেন্টকে পিছনে ফেলে আই লিগকে পাখির চোখ করেছিলেন সুভাষ। নিজে তো দলের সঙ্গে বাইরে যানইনি। পাঠাননি বেটো, হেনরি-সহ দলের কোনও তারকা ফুটবলারকেই।
মার্কোস ফালোপা অবশ্য এই মুহূর্তে আই লিগ নয়, এএফসি কাপের ফাইনালে ওঠাকেই পাখির চোখ করেছেন। আর সেটা করতে গিয়েই ৯ অক্টোবর শিলং লাজংয়ের বিরুদ্ধে আই লিগের প্রথম ম্যাচে ছেঁটে ফেলেছেন প্রথম একাদশের পাঁচ গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলারকেই। এঁরা হলেন অধিনায়ক মেহতাব হোসেন, সৌমিক দে, অর্ণব মণ্ডল, নওবা সিংহ, গুরপ্রীত সিংহ। ক্লাব সূত্রের খবর, বাদ যেতেন এডে চিডিও। কিন্তু বলজিৎ সিংহ সাইনির চোট না সারায় শেষ পর্যন্ত চিডিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ দিন অনুশীলনের পর লাল-হলুদের ব্রাজিলিয়ান কোচ বলে দিয়েছেন, “আমাদের এএফসি ফাইনালে যাওয়ার সুযোগ আছে। সে জন্যই ফুটবলারদের বিশ্রাম দিচ্ছি। ওরা খুব ক্লান্ত।”
কুয়েত থেকে ফিরে বেশ কয়েক জন ফুটবলার প্রকাশ্যেই জানিয়েছিলেন, ম্যাচ খেলে এবং বারবার আসা-যাওয়ার ধকলে তাঁরা ক্লান্ত। এ দিন শিলং লাজংয়ের বিরুদ্ধে ফুটবলার তালিকা জানার পর তাঁদের অনেকেই অবশ্য বিস্মিত। প্রকাশ্যে কেউ কিছু না বললেও একাধিক ফুটবলার এ দিন অনুশীলনের পর ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন। টিম থেকে বাদ যাওয়ায়। গুমরেছেন আড়ালে। নওবা-গুরপ্রীতরা মুখে কিছু না বললেও তাদের মনের কথা সম্ভবত বলে দিয়েছেন টিমের সব থেকে সিনিয়র অ্যালভিটো ডি’কুনহা। বললেন, “শিলংয়ের বিরুদ্ধে আই লিগের প্রথম ম্যাচে পুরো টিম নিয়ে গেলেই ভাল হত। কারণ, শিলংয়ে গিয়ে ম্যাচ জিতে আসা কঠিন। তবে এটা একেবারেই কোচের সিদ্ধান্ত।” বাদ যাওয়া মেহতাব এবং সৌমিক দে বলছিলেন, “কোচ যেটা ভাল বুঝেছেন সেটাই করেছেন।” মেহতাব অনুশীলনে আসেননি। ব্যক্তিগত কাজে আটকে যাওয়ায়। এ দিকে, কুয়েতে গিয়ে বিশ্রী গোল খেয়েছিলেন গুরপ্রীত সিংহ। ফুটবলারদের অনেকেরই মত, গুরপ্রীত দু’টি বাজে গোল না খেলে ম্যাচটা ড্র রেখেই ফিরে আসতে পারত ইস্টবেঙ্গল। গুরপ্রীতের বাদ যাওয়া প্রসঙ্গে ফালোপা অবশ্য বলছেন, “ওকে মানসিক ভাবে আরও চাঙ্গা করার চেষ্টা হচ্ছে। সে জন্যই দলের বাইরে রাখা হয়েছে।” |
ফালোপার ‘বাতিল’ পাঁচ: মেহতাব-সৌমিক-অর্ণব-নওবা-গুরপ্রীত
|
ফুটবলাররা প্রকাশ্যে ‘কোচের সিদ্ধান্ত’ বলে ক্ষোভ চেপে রাখলেও ঘনিষ্ঠ মহলে বলছেন, আই লিগের এই ম্যাচটা জেতার জন্য পুরো শক্তি নিয়ে গেলে ভাল হত। কারণ কুয়েত ম্যাচ তো এখনও অনেক দূরে। আর সেখানে সাফল্য পেলে ভাল, না হলে তো সেই আই লিগ জেতার জন্যই ঝাঁপাতে হবে।
ফুটবলারদের মতো কর্তারাও মনে যাই থাকুক না কেন, কোনও বিতর্কিত মন্তব্য করতে চাননি। বরং ফুটবল সচিব সন্তোষ ভট্টাচার্য কোচের সিদ্ধান্তের পাশে দাঁড়িয়েছেন, “এএফসি কাপের জন্য কোচ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাতে আমার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।” ফালোপা এ দিন বলেছেন, “আই লিগ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই মুহূর্তে এএফসি কাপের সেমিফাইনালের দ্বিতীয় পর্ব আমার কাছে অগ্রাধিকার পাবে।’’ মেহতাব, সৌমিক, নওবাদের জায়গায় দলে নেওয়া হয়েছে রাজু গায়কোয়াড়, রবার্ট, সুবোধ, অভিষেক দাস, অভ্র মন্ডলদের।
কোচ এই মুহূর্তে এএফসিকে বেশি গুরুত্ব দিলেও, চিডি-জোয়কিমদের মতো অনেকেই আবার আই লিগকেও সমান গুরুত্ব দিচ্ছেন। লাল-হলুদের নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকার বলছিলেন, “গত বার অল্পের জন্য আই লিগ হাতছাড়া হয়েছে। এ বার চ্যাম্পিয়ন হতে চাই। তাই প্রথম ম্যাচ থেকেই তিন পয়েন্ট পাওয়া দরকার।” ডেম্পো থেকে এ বারই ইস্টবেঙ্গলে সই করা জোয়াকিম আব্রাঞ্চেস বললেন, “এএফসি কাপ অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, তবে আই লিগেরও আলাদা গুরুত্ব রয়েছে অন্তত আমার কাছে।” ফালোপা মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার সময় বলেছেন, “শিলং ভাল দল। কঠিন ম্যাচ হবে।” তা সত্ত্বেও তিনি কলকাতায় রেখে যাচ্ছেন টিমের প্রধান পাঁচ ফুটবলারকেই। ইস্টবেঙ্গল অবশ্য এ দিন ক্লোজ ডোর অনুশীলন করল, কিছুটা বাধ্য হয়েই। সেনাবাহিনীর নিয়মে ১--১৫ অক্টোবর ময়দান বন্ধ। সে জন্যই তাঁবুর সব গেট বন্ধ রেখে অনুশীলন হল। ঢুকতে দেওয়া হল না মিডিয়ার লোকজনকেও।
এ এফ সি কাপে ভারতের যে ক্লাবই খেলার সুযোগ পেয়েছে, কোন টুর্নামেন্টেকে গুরুত্ব দেওয়া হবে তা নিয়ে সেই দলের কোচই সমস্যায় পড়েছেন। আর্মান্দো কোলাসো থেকে সুভাষসবাই তার শিকার। ফালোপা এ এফ সি কাপকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। তাঁর সিদ্ধান্ত সঠিক কিনা, সেটা বোঝা যাবে ২২ অক্টোবর রাতে। |