শরৎ এখন শেয়ার বাজারেও। কখনও ঝলমলে রোদ, নীল আকাশ। কখনও বা মেঘ, বৃষ্টি। সেনসেক্স ঘোরাফেরা করছে উনিশ-কুড়ি হাজারের আঙিনায়। মাঝেমধ্যে আসা কিছু ভাল খবর সূচককে বেশি পড়তে দিচ্ছে না। আবার কিছু খারাপ খবর বেশি ওঠার পথেও বাধা হচ্ছে। এর মধ্যেই সুযোগ বুঝে শেয়ার কিনতে হবে। বিক্রি করে ছোটখাটো লাভও ঘরে তুলতে হবে। গত সপ্তাহের তুলনায় ভাল খবরের প্রাধান্যে ২০ হাজার ছুঁয়েছিল সেনসেক্স। টাকার দামও বেড়েছে। ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কিছু ভাল ইঙ্গিত পাচ্ছে বাজার।
সোমবার শেষ বেলায় দু’টি গুরুত্বপূর্ণ খবর আসে বাজারে। প্রথমটি, চলতি অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাসে চলতি খাতে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন ঘাটতি জাতীয় উৎপাদনের ৪.৯% হয়েছে। দ্বিতীয়টি, অগস্টে মূল (কোর) শিল্পে বৃদ্ধি বেড়ে হয়েছে ৩.৭%। যা গত সাত মাসে সর্বোচ্চ। তার পরের ক’দিনে আসা কয়েকটি খবরেও পাল্লা ভালর দিকে ঝুঁকে পড়ায় কুড়ি হাজার ছোঁয় শেয়ার সূচক সেনসেক্স।
তবে চলতি খাতে ঘাটতি রেকর্ড গড়লেও এর পর থেকে তা কমতে শুরু করবে বলে মনে করা হচ্ছে। রফতানি বাড়ছে। আমদানি নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। ব্যবস্থা হচ্ছে বিদেশি লগ্নি ফেরাবার। আশা, দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে ঘাটতি কমবে। তার উপর অর্থনীতিতে আশা জাগিয়েছে অগস্টে শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধি। জুলাইয়ে ৩.১ শতাংশের জায়গায় অগস্টে উৎপাদন বেড়েছে ৩.৭%।
সেপ্টেম্বরে বেড়েছে গাড়ি ও মোটর বাইক বিক্রিও। সুদ বাড়া সত্ত্বেও গাড়ির বিক্রি বাড়া অর্থনীতির পক্ষে সুখবর। কৃষি ক্ষেত্র এ বার ভাল মদত জোগাবে অর্থনীতিকে। এই সব কথা মাথায় রেখে বৃদ্ধি এ বার ৫.৫% হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের শীর্ষ কর্তা রঘুরাম রাজন। উৎসবের মরসুমে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির হাতে অতিরিক্ত তহবিল দেওয়ার কথা হচ্ছে, যাতে গাড়ি ও মেয়াদি ভোগ্যপণ্য কেনার জন্য বেশি ঋণ দেওয়া যায়। তাই বলাই যায় সব মিলিয়ে পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেকটাই ভাল।
এ দিকে আর কয়েক দিনের মধ্যেই শুরু হবে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের আর্থিক ফল প্রকাশ। ফল মিশ্র হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ফলাফল দেখে কেনা এবং বিক্রির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে। মার্কিন প্রশাসনে তালা পড়ায় কিছু সংস্থার রফতানি যেমন কমতে পারে, তেমনই তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির আশা বেশি বরাত পাওয়ার।
এ বার শস্য উৎপাদনও বাড়বে বলে আশা। ফলে কমতে পারে খাদ্যপণ্যের দাম। সে ক্ষেত্রে প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠবে গ্রামীণ অর্থনীতি। সুদিন দেখছে সেই সব সংস্থা, যাদের পণ্য গ্রামে ও ছোট শহরে ভাল বিক্রি হয়। এই আশায় ভর করে মারুতি, হিরো মোটোকর্প, ইমামি, আই টি সি, মহীন্দ্রা অ্যান্ড মহীন্দ্রা, এম অ্যান্ড এম ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস-এর মতো সংস্থার শেয়ার এখন চাঙ্গা।
ডলারের দামও ৬৮.৮৫ টাকা থেকে নামতে নামতে গত শুক্রবার এসে দাঁড়িয়েছে ৬১.৪৪ টাকায়। দেশের অর্থনীতি ও আমদানি-নির্ভর সংস্থার পক্ষে এটা ভাল। এতে অবশ্য উৎসবের মরসুমে সোনা আমদানি বেড়ে ওঠার আশঙ্কা। তবে টাকার দাম বাড়ায় পেট্রোলের দাম কমেছে বেশ কিছুটা। ডিজেলের দাম অবশ্য বেড়েছে লিটারে কম-বেশি ৫৭ পয়সা। এতে পণ্যমূল্যের উপর চাপ বাড়বে বলে আশঙ্কা।
উৎসবের মরসুমে টাকার জোগান বাড়ে। উদার হাতে খরচও করে মানুষ। ফলে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা শক্ত। অর্থাৎ এখনই সুদ কমার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
অন্য দিকে, জোর কদমে চলছে করমুক্ত বন্ড ইস্যুর মরসুম। এটা উঁচু হারে করদাতাদের লগ্নির সময়। আরইসি ও হাডকোর পর করমুক্ত বন্ড এনেছে আইআইএফসিএল। ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লগ্নিকারীদের ১০, ১৫ এবং ২০ বছর মেয়াদে সুদ দেওয়া হবে যথাক্রমে ৮.২৬%, ৮.৬৩%, ৮.৭৫% হারে। ইস্যুকারী সংস্থার ত্রেডিট রেটিং ‘ট্রিপল এ’। অর্থাৎ লগ্নি যথেষ্ট সুরক্ষিত। |