রাজসজ্জা ছেড়ে এ বার ঢাকে কাঠি মহারাজের
ত দিন অভিবাদন জানাতেন রাজার সাজেই। এ বার পুজোয় রাজকীয় আবরণ আর আভরণ ছেড়ে মাটির আরও কাছাকাছি নেমে আসছেন তিনি। একেবারে ঢাকির সাজে ঢাক বাজাবেন মহারাজা! তিনি যে তিনিই, অব্যর্থ ভাবে চিনিয়ে দেবে তাঁর গোঁফজোড়া। আদি ও অকৃত্রিম। তাতে বদল নেই। নবরূপে এই মহারাজকে দেখা যাবে কলকাতা বিমানবন্দরের ভিতরে এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিট কাউন্টারের সামনে। কয়েক দশক ধরে এই সরকারি বিমান সংস্থার নানান ওঠা-পড়ার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছেন মহারাজ। সুদিন বা দুর্দিন, সব সময়েই তাঁকে হাসি মুখে সংস্থার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে।
পুরনো মহারাজ পুজোর মহারাজ
মহারাজ আদতে ওই বিমান সংস্থার মুখ, তার লোগো। এয়ার ইন্ডিয়ার ক্যালেন্ডার থেকে শুরু করে বিভিন্ন দফতরে এই মহারাজের বড় কাট-আউট দেখা যায়। বড় বড় গোঁফ, গায়ে লাল জোব্বা, মাথায় লাল পাগড়ি, বুকে ঝুলছে রত্নহার, পায়ে লাল নাগরা জুতো। হাত বুকের কাছে নিয়ে সামান্য ঝুঁকে তিনি অতিথিকে অভিবাদন জানাচ্ছেন। এই অতিথি মানে এয়ার ইন্ডিয়ার যাত্রী। আর আনত ভঙ্গিতে মহারাজের সাদর অভিবাদন আসলে যাত্রীদের প্রতি ওই বিমান সংস্থারই অভ্যর্থনা। এ বার সেই মহারাজকেই দেখা যাবে অন্য রূপে। মহারাজের বেশ ছেড়ে এ বার তিনি ঢাক বাজাবেন। সপ্তমী থেকে নবমী পুজোর এই তিন দিন যাঁরা কলকাতা বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনাল থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার উড়ান ধরবেন, তাঁরা দেখতে পাবেন এই নতুন মহারাজকে। তাঁর মাথায় পাগড়ি নেই। তার বদলে রয়েছে ফেট্টি। পরনে ধুতি-পাঞ্জাবি। গলায় রত্নহার নেই। পায়ে নেই নাগরা জুতোও। খালি পা। নাচের ভঙ্গিতে তিনি কাঁধে ঢাক ঝুলিয়ে সেটি বাজিয়ে চলেছেন নাগাড়ে। তাঁকে চিনিয়ে দিচ্ছে কেবল তাঁর সেই বিখ্যাত গোঁফজোড়া।
শুধু টিকিট কাউন্টার নয়, তাঁর কাট-আউট রাখা হবে সংস্থার চেক-ইন কাউন্টারের সামনেও।
মহারাজের ভোলবদল হলেও পুজোয় যাত্রীদের জন্য ভূরিভোজে কোনও ঘাটতি রাখছে না এয়ার ইন্ডিয়া। কয়েক বছর ধরেই দুর্গাপুজো উপলক্ষে আকাশে খাবারের তালিকায় নতুনত্ব আনছিল তারা। বিশেষ করে কলকাতা থেকে যে-সব বিমান উড়ছিল, সেগুলিতে। জিভে জল আনা খাদ্য-তালিকা রয়েছে এ বারেও। পুজোর এই তিন দিন কলকাতা থেকে ছেড়ে যাওয়া যে-সব বিমান দেড় ঘণ্টার বেশি উড়বে, তার সব ক’টিতেই যাত্রীদের হয় লাঞ্চ-ডিনার বা টিফিন-প্রাতরাশ দেওয়া হবে। এ বারেও কলাপাতার থালা। সেই ‘পুজো স্পেশ্যাল’ লাঞ্চ-ডিনারের মেনুতে থাকছে কষা মাংস, মুরগির কোর্মা, রাই-মুরগি, সর্ষে-মাছ, দইমাছ, পটলের দোর্মা, এঁচড়ের কোপ্তা, ধোঁকার ডালনা। থাকবে নারকেল ঘুগনি, ঝিঙে-আলু-পোস্ত, রাজভোগ আর মিষ্টি দই। টিফিন-প্রাতরাশে থাকছে মাংসের ঘুগনি অথবা কাটলেট বা শিঙাড়া, কড়াইশুঁটির কচুরি, রাধাবল্লভি, মোচার কাটলেট। রয়েছে সীতাভোগ, মিহিদানা, বোঁদে, কালাকাঁদ, দরবেশ, ছানার জিলিপি। প্রত্যেক যাত্রী বিশেষ মেনু কার্ড পাবেন। পছন্দের খাবার বেছে নিতে হবে সেই তালিকা থেকে।
বিশেষ মেনু আগের বারেও ছিল। লোকসানে চলা বিমান সংস্থার এই খাদ্য-বাহুল্য নিয়ে আপত্তিও উঠেছিল একটি মহল থেকে। তবে এয়ার ইন্ডিয়া বলেছিল, প্রতিযোগিতার বাজারে যাত্রীদের আকর্ষণ করার জন্যই এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। খাদ্যের এলাহি আয়োজনের পাশে রাজমহিমার বদলে মহারাজার অঙ্গে ঢাকির পোশাক কেন, তা নিয়ে কিঞ্চিৎ সংশয়ের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। সংস্থারই এক অফিসারের সহাস্য মন্তব্য, “আমাদের (এয়ার ইন্ডিয়ার) অবস্থা তো এখন শোচনীয়! লোকে তো মনে করবে, সেই কারণে এ বার মহারাজকেও তাঁর পোশাক, পাগড়ি, নাগরা বিসর্জন দিতে হল!” তবে অফিসারদেরই একটি অংশ বলছেন, খানিক বৈচিত্রের জন্যই এই বদল। রাজসজ্জা ছেড়ে ঢাকির ছন্দে বোল তোলাটা রাজকীয় খেয়াল!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.