যথাসময়ে শুরু হতে চলেছে উৎসবের মরসুম। অর্থনৈতিক দুর্যোগের বাজারেও কেনাকাটায় ভরা জোয়ার এসে যাবে আর দিন কয়েকের মধ্যেই।
পুজোর মুখে শাড়ি-জামা-জুতো কিনবেন প্রায় সবাই। নগদে অথবা কিস্তিতে এই উপলক্ষে অনেকে কিনবেন টিভি, ক্যামেরা, এমনকী গাড়িও। দাম যেখানেই পৌঁছে যাক, ধনতেরাসের রাতে লাইন দিয়ে হলেও অবশ্যই কিনতে হবে চাঁদি বা সোনা। অর্থাৎ এই মরসুমে বিক্রিবাটা বাড়বে বহু পণ্যের। স্পন্দন ফিরবে বেশ কয়েকটি শিল্পে। উৎসবের মরসুমে বিক্রিবাটা ভাল হয় বলে অনেক ভোগ্যপণ্য সংস্থার তৃতীয় ত্রৈমাসিক ফলাফল তুলনায় ভাল হয়। এ বার অবশ্য উঁচু পণ্যমূল্য এবং চড়া সুদ খানিকটা কামড় বসাবে চাহিদার উপর। তার অন্যতম কারণ, এ বার বন্ধ হতে চলেছে শূন্য সুদে কেনাকাটা। সুদ বাড়ছে ক্রেডিট কার্ডে। ডলারের দাম বাড়ায় দর বেড়েছে বেশ কিছু পণ্যের। পুজোর মুখে দাম বাড়াতে শুরু করেছে বেশির ভাগ গাড়ি নির্মাতা। ফলে সাধ থাকলেও সাধ্যে কুলোবে না অনেকেরই।
আশার আলো অবশ্য দেখা যাচ্ছে বর্ষা ভাল হওয়ার কারণে। আগের তুলনায় বেশি ফসল ঘরে উঠলে গ্রাম ও ছোট শহরে বহু পণ্যের চাহিদা বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। এই আশায় শক্তি পাচ্ছে ছোট গাড়ি ও দ্বি-চক্রযান সংস্থার শেয়ার। ভাল চাহিদার গন্ধ পাচ্ছে হিন্দুস্তান ইউনিলিভার এবং আইটিসি-র মতো ভোগ্যপণ্য সংস্থা।
খানিকটা হলেও ডলারের দাম কমে ঘোরাফেরা করছে একটি নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে। এতে পেট্রোলের দাম কমার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে আমদানি-নির্ভর বেশ কয়েকটি শিল্প। অন্য দিকে টাকার দাম কমায় ভাল ব্যবসার সম্ভাবনা দেখছে তথ্যপ্রযুক্তি ও ওষুধ সংস্থা। আগামী কয়েক মাস ভারতের রফতানি বাণিজ্য ভালই হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
শেয়ার সূচক এখন বড়ই অস্থির। কিছুতেই নিজের জায়গা ধরে রাখতে পারছে না। একটু উঠলেই আবার নেমে আসছে আগের জায়গায়। সাহস করে তাই লগ্নি করতে পারছেন না অনেকেই। ডিসেম্বরের আগে সুদ কমার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করা হচ্ছে। সেই সময় নাগাদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আর্থিক ত্রাণ কমানো শুরু হবে বলে মনে করা হচ্ছে। আশঙ্কা, এতে ভারতে ডলার- প্রবাহ কমতে পারে। এর পর আসছে সাধারণ নির্বাচন। যথেষ্ট অনিশ্চয়তা আছে নতুন সরকারকে কেন্দ্র করেও। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি আশা জাগানোর মতো নয়। অর্থাৎ সূচকের ওঠা-পড়া এখন চলবে। স্বস্তি একটাই। বড় পতনের বিরুদ্ধে কিন্তু শক্ত প্রতিরোধ আছে এই বাজারে। এই কারণে প্রতিকূল পরিবেশেও সূচক একদম তলিয়ে যাচ্ছে না। খানিকটা পড়লে আবার উঠে আসছে।
শেয়ার-মিউচুয়াল ফান্ডের বাজারে অনিশ্চয়তা থাকায় নতুন বন্ড ইস্যু ভাল সাফল্য পাচ্ছে। বেশ কিছু করমুক্ত এবং করযুক্ত ইস্যু আসছে বাজারে। ছোট থেকে মাঝারি মেয়াদে মানুষের বেশি পছন্দ ব্যাঙ্ক আমানত। সুদও বাড়িয়েছে বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্ক। মন্থর অর্থনীতি এবং চড়া সুদের কারণে বাড়ি-ফ্ল্যাটের চাহিদা কমেছে কয়েক মাসে। বেড়েছে অবিক্রীত ফ্ল্যাটের সংখ্যা। এই পরিস্থিতিতে দামে কিছুটা সংশোধন আসতে পারে।
ডলারের মতো সোনাও রেকর্ড জায়গা থেকে কিছুটা নেমে এসেছে। তবে সামনে উৎসব ও বিয়ের মরসুম থাকায় সোনা আবার তেতে উঠতে পারে। ভাল বৃষ্টি হওয়ায় মাস কয়েকের মধ্যে গ্রামে সোনার চাহিদা বাড়ার সম্ভাবনা।
দেখতে দেখতে আমরা নতুন বছরের ছ’মাস পেরিয়ে এসেছি। এর মধ্যে শুরু করে না-থাকলে এখন থেকেই শুরু করতে হবে কর সাশ্রয়ের জন্য সঞ্চয়। প্রকল্প বাছাই করা না-হয়ে থাকলে ব্যাঙ্কেই টাকা জমাতে শুরু করুন। ডিসেম্বর নাগাদ প্রকল্প আসতে শুরু করবে। সব দেখে শুনে মার্চের মধ্যে লগ্নি সেরে ফেললেই হল। |