বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় প্রস্তাবিত হয়ে আছে বিষ্ণুপুরের নাম। মন্দির নগরী হিসেবেও এই শহরের রয়েছে আন্তর্জাতিক খ্যাতি। আরও বেশি পরিমাণে পর্যটককে এখানে নিয়ে আসার উদ্দেশ্যে বিষ্ণুপুর শহর লাগোয়া বাসুদেবপুরে বিমান বন্দর চালু করার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। বাসুদেবপুরে রয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত ‘এয়ারস্ট্রিপ’। বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান তথা রাজ্যের শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বলেছেন, “আমি ওই এয়ারস্ট্রিপ সম্পর্কে জেলা প্রশাসনের কাছে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়েছি। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বিষ্ণুপুর শহর তো বটেই, বিষ্ণুপুরকে কেন্দ্র করে বাঁকুড়া জেলার মুকুটমণিপুর, শুশুনিয়া, ঝিলিমিলি, বিহারীনাথ, অমরকানন, জয়রামবাটির মতো পর্যটন স্থানেরও যথেষ্ট উন্নতি হবে। অনেক বেশি পরিমাণে পর্যটক আসবেন।”
শুধুই মন্দির নগরী হিসাবে নয়, এক সময়ের মল্লরাজাদের রাজধানী প্রাচীন এই শহরের সংগীত ঘরানা, বালুচরী শাড়ি, দশাবতার তাস, কাঁসা-পিতল শিল্প, লণ্ঠন, পোড়ামাটি ও শঙ্খ শিল্পের পরিচিতিও দেশের গণ্ডী ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে পরিচিতি পেয়েছে। ফি-বছর প্রচুর পর্যটক ভিড় করেন এই শহরে। বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যাও বছর বছর বাড়ছে। এই অবস্থায় বিষ্ণুপুরে বিমানবন্দর চালু হলে এলাকার পর্যটন শিল্পে জোয়ার আসবে বলেই মনে করছেন প্রশাসনিক কর্তারা। |
পর্যটকদের উড়িয়ে আনতে বাসুদেবপুরের এই পরিত্যক্ত বিমানঘাঁটি সাজানোর স্বপ্ন। ছবি: শুভ্র মিত্র। |
প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বাসুদেবপুরের ‘এয়ারস্ট্রিপে’ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ৪৭৫ একরেরও বেশি জমি রয়েছে। সেখানে অনায়াসে বিমান ওঠা-নামা করতে পারবে। এর আগে ২০০৭ সালে বামফ্রন্ট সরকার ওখানে পণ্যবাহী বিমান চালানো ও বিমান মেরামতি কারখানা গড়ার একটি চেষ্টা করেছিল। তৎকালীন রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী, প্রয়াত সুভাষ চক্রবর্তী জেলার বিধায়ক উপেন কিস্কুকে নিয়ে এয়ারস্ট্রিপের পরিত্যক্ত রানওয়েটি পরিদর্শনও করেন। বাঁকুড়ার সাংসদ বাসুদেব আচারিয়া এ বিষয়ে দিল্লিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সঙ্গে একপ্রস্ত আলোচনাও সেরেছিলেন। কিন্তু, পরবর্তীকালে ওই উদ্যোগ ধামাচাপা পড়ে যায়।
তৃণমূলের সরকার আসার পর সেই পরিকল্পনা নিয়ে ফের নড়াচড়া শুরু হয়েছে। বিভিন্ন শিল্পের সঙ্গে জড়িত এলাকার মানুষজনও মনে করছেন, বিমানবন্দর হলে স্থানীয় অর্থনীতির হাল ফিরবে। বালুচরী শিল্পী গুরুদাস লক্ষণ, অমিতাভ পাল বলেন, “বিষ্ণুপুরে বিমান বন্দর হলে আমরা নিশ্চিত, বাইরের পর্যটকের সংখ্যা আরও বাড়বে। আমাদের শিল্পেরও প্রসার ঘটবে।” একই অভিমত দশাবতার তাস শিল্পী বিদ্যুৎ ফৌজদার, বাঁশরী ফৌজদারদের। বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক অদীপকুমার রায় বলেন, “এলাকার পর্যটন উন্নয়নের ক্ষেত্রে এই উদ্যোগ কাজে লাগবে বলে আমরা আশাবাদী। এই সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে।” |