শিল্পীর অভাব, কাঁচামালের দাম বাড়া ও পুজো কমিটিগুলির বাজেট সঙ্কোচনের জেরে গুয়াহাটির প্রতিমা নির্মাণ সংস্থাগুলির অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়েছে। সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি বছরের এই ক’মাসই মাটির কাজের রমরমা। বিশ্বকর্মা থেকে সরস্বতী পুজো অবধিই প্রতিমা তৈরি করে উপার্জনের আশা থাকে। কিন্তু এ বছর দুর্গাপুজোর মতো সময়েও সমস্যায় জর্জরিত কুমোরপাড়া।
পাঁচ দশক ধরে কলেজ হস্টেল রোডে লক্ষ্মী ক্রাফ্ট সেন্টার প্রতিমা তৈরি করছে। প্রবীন শিল্পী চিত্তরঞ্জন পাল জানালেন, আগামী দিনে শহরে প্রতিমাশিল্পের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। তাঁর কথায়, “মাটির দাম একলাফে ট্রাক-প্রতি ৩০০০ থেকে ৬০০০ টাকা হয়ে গিয়েছে। খড়, বাঁশ, কাঠেরও একই অবস্থা। তেমনই বেড়েছে রঙের দামও। দেবীকে সাজানোর কাপড়, অলঙ্কার সবই এখন দামি। একই সঙ্গে ভালো ও দক্ষ শিল্পী ছাড়া দুর্গা প্রতিমা তৈরির ভার দেওয়া যায় না। তেমন শিল্পীও স্থানীয় ভাবে মিলছে না। তাই অর্ডার এলেও বহু কাজ ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে।’’ চিত্তবাবুর আক্ষেপ, “এখন মনে হয়, সময় থাকতে অন্য কোনও ব্যবসা খুললে কাজে দিত।”
শহরের বিভিন্ন স্থানে প্রতিমা রাখা নিয়েও দেখা দিয়েছে সমস্যা। সংকীর্ণ পরিসরে বিরাট দশভূজার সারি সারি প্রতিমা রাখা সম্ভব নয়। আবার রাস্তার ধারে প্রতিমা রাখলে পুরসভাকে দিতে হচ্ছে কর। সঙ্গে রয়েছে মূল্যবৃদ্ধি। পুজো কমিটির বাজেটে টান পড়েছে। প্রতিমার দাম নিয়েও চলছে টানাপোড়েন। নামকরা দুই পুজো কমিটি, বীণাপানি ও নয়নতারার উদ্যোক্তাদের কথায় একই সুর: সুনাম বজায় রাখার তাগিদে গত বারের চেয়ে কয়েক লক্ষ টাকা বেড়ে গিয়েছে বাজেট। যার বড় অংশই যাচ্ছে প্রতিমার জন্য। বীণাপানির প্রতিমা আসছে মালিগাঁও থেকে। তার দাম পড়ছে ৪৫ হাজার। নয়নতারার প্রতিমা লাল গণেশের শিল্পী বানাচ্ছেন। দাম প্রায় ৮০ হাজার টাকা। তার পরেও শিল্পীদের আফশোস থাকছে। জানাচ্ছেন, দু-একটি প্রতিমার দামে এত প্রতিমার লোকসান পোষায় না।
মালিগাঁওয়ের প্রতিমাশিল্পী রঞ্জন পালের ব্যাখ্যা, শিলিগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার থেকে শিল্পীদের আনতে হয়। তাঁদের পারিশ্রমিক, থাকা-খাওয়া মিলিয়েই তো বিশ হাজার টাকা খরচ হয়। তাঁর কথায়, “পরিবারের ঐতিহ্য বলে এই ধারা বজায় রাখলাম। কিন্তু আমার ছেলে অবশ্যই এ কাজে আসবে না।” পাণ্ডু, মালিগাঁও, কলেজ হস্টেল রোড, লাল গণেশ বা লাচিত নগরের প্রতিমা শিল্পীদের অভিযোগ, রাজ্য সরকারের তরফে প্রতিমা শিল্পীদের জন্য কোনও নীতি বা প্রকল্প নেই। এই পরিস্থিতিতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের পক্ষে মূর্তি তৈরির এই ঐতিহ্য বয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। |