ঘন্টা চারেকের প্রবল বর্ষণে ডুবে গেল দুর্গাপুরের বহু এলাকা। ভেঙে গিয়েছে বহু মাটির বাড়ি, বাড়ির ভিতরে জল ঢুকে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন বাসিন্দারা। পানীয় জলের আকালও দেখা দিয়েছে অনেক জায়গায়। এমনকী কয়েক জায়গায় রাতেই স্কুল খুলিয়ে আশপাশের মানুষজনের থাকার বন্দোবস্তো করা হয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যার এই প্রবল বর্ষণের পরে রবিবার সকালে কাউন্সিলরদের অনেকেই ক্ষতিগ্রস্তদের পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে এলাকায় যান। ত্রাণ হিসাবে কয়েকটা জায়গায় ত্রিপল, গুড় ও চিঁড়ে বিলি করা হয়। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বেনাচিতির বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড এবং মেনগেট এলাকায় তামলা নালার দু’ধার বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেনাচিতির ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকাতেও জল জমে গিয়েছে। ফলে সারা রাত কার্যত ঘরবন্দি হয়েছিলেন সেখানকার বাসিন্দারা। সকালে জল নেমে গিলেও বহু বাড়িই থাকার অনুপযুক্ত হয়ে গিয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি। |
পালপাড়ার বিনয় হালদার, মন্টু দাসেরা জানান, বাড়ির উঠোন ও রাস্তা প্রায় ৪ ফুট জলের গভীরে চলে গিয়েছিল। এতটাই জলের তোড় ছিল যে দড়ি ধরে পারাপার করতে হয় বাসিন্দাদের। স্থানীয় কাউন্সিলর অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় রবিবার সকালে এলাকায় যান। তাঁর অভিযোগ, জাতীয় সড়কের আন্ডার পাস দীর্ঘদিন সারানো হয়নি। ফলে জল জমে যাচ্ছে। ডিএসপি টাউনশিপের জলও এলাকায় ঢুকছে বলে অনিন্দিতাদেবীর দাবি। তবে সংশ্লিষ্ট দফতরে যোগাযোগ করে সমস্যার সুরাহা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। একই পরিস্থিতি ৫৪ ফুট এলাকা, রাঁচি কলোনিতেও। ১৯ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকাও প্লাবিত হয়েছে। রামকৃষ্ণ পল্লি, শ্রীনগর পল্লি, বিদ্যাসাগর পল্লি, আনন্দ পল্লি-সহ বিভিন্ন এলাকাও জলের নীচে। মাইকেল সরণী এলাকার প্রায় হাজার খানেক বাড়ি জলমগ্ন হয়ে গিয়েছে বলে দাবি বাসিন্দাদের। স্থানীয় কাউন্সিলর নিমাই গড়াই জানান, মানুষজন যাতে আশ্রয় নিতে পারেন সে জন্য রাতেই বিবেকানন্দ হাইস্কুল, নেতাজি হিন্দি হাইস্কুল, ও ভারতী হিন্দি হাইস্কুল খুলে দেওয়া হয়।
টানা বৃষ্টিতে ফুঁসে ওঠে তামলা নালাও। এমনিতেই দু’পাড়ে অবৈধ নির্মাণের জেরে নালাটি অনেক জায়গায় সঙ্কুচিত হয়েছে বলে অভিযোগ। এ দিন তামলা প্লাবিত হয়ে ভাসিয়ে দেয় দু’পাড়ের ঘরবাড়ি। মেনগেটের তামলা বস্তি, খাটাল এলাকা জলমগ্ন হয়ে যায়। ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাদা রোডের বাসিন্দা শিবু পূর্তি জানান, এলাকায় শ’পাঁচেক ঘরে জল ঢুকেছিল। প্রায় দশটি মাটির ঘর ভেঙে গিয়েছে। জলের কল ডুবে যাওয়ায় খাওয়ার জলের অভাব দেখা দিয়েছে। বাদ্যকর পাড়া, ডোম পাড়া, সিমলি ঝুপড়ি, ডাকবাংলা এলাকাতেও জল জমে যায়। বাদ্যকর পাড়ার শেফালি মাজি, সৃষ্টিধর মাজি জানান, ঘর ভেঙে গিয়েছে। ডাকবাংলায় জিতেন্দ্র কুমার পাসোয়ানেরও বাড়ি ভেঙেছে। তাঁরা জানান, স্থানীয় বোরো চেয়ারম্যান ধর্মেন্দ্র যাদব এলাকা ঘুরে গিয়েছেন। শহরের অঙ্গদপুর ডাঙাল পাড়া, রায়ডাঙা, অর্জুনপুরের বিভিন্ন এলাকাও প্রায় পুকুরের চেহারা নিয়েছে। অর্জুনপুরের বাসিন্দা নটরাজ চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, বেশ কিছু কারখানা পাঁচিল দিয়ে ঘিরে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পাশে কোনও নিকাশি ব্যবস্থা গড়া হয়নি। ফলে জল বয়ে না যেতে পেরে জমে গিয়েছে।
বৃষ্টিতে হতাশা নেমেছে বেনাচিতি, বিসি রায় রোড, এমএএমসি ও পলাশডিহার কুমোরপাড়াতেও। মৃৎশিল্পীরা জানান, প্লাস্টিকের আচ্ছাদনে বৃষ্টির তোড় সামলানো যায়নি। ফলে বহু কারখানাতেই প্রতিমার অংশ বিশেষ গলে গিয়েছে। তাছাড়া এমনিই রোজ চড়া রোদ উঠছে না। তারপর এই বৃষ্টি। ফলে সময়ে কাজ শেষ হবে না বলেও আশঙ্কা করছেন তাঁরা। তাঁদের আশঙ্কা বাড়িয়ে রবিবারও বিকেল থেকে আবার বৃষ্টি নামে। তবে ঘণ্টা দেড়েক পরে তা কমে যায়।
মেয়র অপূর্ব মুখোপাধ্যায় জানান, পুরসভায় জরুরি ভিত্তিতে এ দিন একটি বৈঠক ডাকা হয়। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। পুরসভার পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ত্রাণ পাঠানোরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রশাসনের কাছে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা পাঠিয়ে সাহায্য চাওয়া হবে বলেও পুরসভার তরফে জানা গিয়েছে। |