রাজস্থান রয়্যালসকে ব্যাখ্যা করা খুব সহজ নয়। টিমে এক জন অবসর নিয়ে ফেলা তারকা আছে। যার ক্রিকেট মননের সঙ্গে টি-টোয়েন্টির কোনও মিল পাওয়া দুষ্কর। টিমের আর এক তারকার নাম শেন ওয়াটসন। যে অনেকটা সেই সব সফল রাজনীতিবিদের মতো, যাঁরা মঞ্চে দাঁড়িয়ে বড় বড় প্রতিশ্রুতি দেন, কিন্তু সব পূরণ করতে পারেন না। ওদের ওপেনার অজিঙ্ক রাহানে এখন জাতীয় নির্বাচকদের পছন্দের তালিকায় তলানিতে রয়েছে। তা ছাড়া দলটায় অনেক না-কাটা হিরে আছে। ঘরোয়া ক্রিকেটে যাদের লোকে প্রায় চেনেই না। কিন্তু রাজস্থানের পতাকার তলায় এরাই প্রায় অপ্রতিরোধ্য।
শুধু ঘরের মাঠেই রাজস্থান খেলতে পারে, এটা বললে কিন্তু ওদের প্রতি সুবিচার করা হবে না। জয়পুরের পিচ কিন্তু খারাপ নয়। ঘরের টিমকে সুবিধে করে দেওয়ার জন্য কোনও কারিকুরি নেই পিচে। ব্যাটসম্যানের মতো বোলারকেও সুবিধা দেয়। আর মাঠে দর্শকদের অন্ধ সমর্থন। কিন্তু পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তেই তো সমর্থকরা প্রিয় দলের ব্যাপারে এ রকমই অন্ধ হয়। তা হলে ঠিক কী জাদুতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা ভিন্ন বয়স আর ক্রিকেটীয় দক্ষতার এই প্লেয়াররা রাজস্থান রয়্যালসের জার্সি গায়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুর্ধর্ষ হয়ে ওঠে? |
এক, এই টিমটার প্রত্যেক সদস্য মনে করে দলটার প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। ওদের বেঞ্চে কেউ ছোট বা কেউ বড় নয়। দুই, প্রত্যেকের মুখে একটাই প্রশ্ন ঘোরে “দলের জন্য আমি কতটা দিতে পারি?” কেউ ব্যক্তিগত নাম কেনার চেষ্টায় নেই। আর ওদের এই একজোট হয়ে চেষ্টা করাটাই দলটার আসল শক্তি। তিন, ওদের টিমে অনেক বৈচিত্র রয়েছে। ওদের বোলার আর ব্যাটসম্যানরা পরিস্থিতি অনুযায়ী খাপ খাওয়াতে পারে। চার, চাপ সামলানোয় ওরা ওস্তাদ। পাঁচ, ভাগ্যের হাতে নিজেদের ছেড়ে না দিয়ে সব সময় চেষ্টা করে যায়। প্রতিপক্ষ কতটা নামী তাতে ওদের কিছু যায় আসে না। ছয়, ওদের কখনও মাঠে স্লেজিং করতে বা মাথা গরম করতে দেখবেন না (ওয়াটসনের ঘটনা একটা ব্যতিক্রম মাত্র)। রাজস্থান রয়্যালসের জন্য ক্রিকেটটা হল অঙ্কের মতো। মাঠেই যার সমাধান করতে হবে। নাটকীয় কাণ্ডকারখানা করে নয়।
সেই কারণেই প্রতিপক্ষের জন্য রাজস্থানের কোনও এক জন ক্রিকেটারকে টার্গেট করাটা খুব চাপের। সেমিফাইনালের লড়াইয়ে চেন্নাই সুপার কিংস যেটা হাড়ে হাড়ে বুঝেছে। শুক্রবার ইনিংসের মাঝামাঝি মনে হয়েছিল ম্যাচটা পুরোপুরি চেন্নাই নিয়ন্ত্রণ করছে। কিন্তু দুই ওপেনারকে রান আউট করিয়ে রাজস্থান রয়্যালস দেখিয়ে দিল চাপের মুখেও ওরা ঠিক কতটা মাথা ঠান্ডা রাখতে পারে। প্রথম সাত ওভারে ছ’জন বোলারকে ব্যবহার করল রাহুল। ৪১ বছরের প্রবীণ তাম্বে কী বোলিংটাই না করল! এই লেগস্পিনার বরাবরই মুম্বই ময়দানের ত্রাস। তবু এত দিন বঞ্চনাই জুটে এসেছে প্রবীণের। কিন্তু আজ আচমকাই স্পটলাইটে।
আসলে রাজস্থান রয়্যালস শেন ওয়ার্ন আর রাহুল দ্রাবিড়ের মতো ক্রিকেটারকে নিজেদের ইচ্ছামতো দলটাকে গড়ার স্বাধীনতা দিয়েছে। আর এই দুই অসাধারণ ক্রিকেটারই দলের বাকিদের মধ্যে ক্ষমতা ভাগ করে দেওয়ার উদারতা দেখিয়েছে। টেকনিক্যাল স্কিলের মতোই ওরা এক জন ক্রিকেটারের মানসিক দৃঢ়তাকেও সমান গুরুত্ব দিয়েছে। টিমের বাকিদের ওরা বোঝাতে পেরেছে, নিজের আগে দলের স্বার্থ দেখ। আর তাতে লাভ কী হয়েছে সেটা তো সবাই দেখতে পাচ্ছে!
|
ফাইনালের আগে ধাক্কা রাজস্থানে |
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টি-টোয়েন্টির ফাইনালের আগে জোড়া ধাক্কা রাজস্থান রয়্যালসে। এক দিকে, চোটের জন্য বড় ভরসা ব্র্যাড হজ খেতাবি লড়াইয়ে নামতে পারবেন না। অন্য দিকে, সেমিফাইনালে চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে ম্যাচে গালিগালাজ করায় জরিমানা হল শেন ওয়াটসনের। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আচরণবিধি ভাঙায় তাঁর ৭৫০ ডলার জরিমানা হয়েছে। শুক্রবার মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের ইনিংসের শেষ ওভারে ফিল্ডিং করতে গিয়ে ওয়াটসন আর হজের সংঘর্ষ হয়। ওয়াটসনের মাথা গিয়ে লাগে হজের হাঁটুতে। তখনই বোঝা গিয়েছিল হজের চোট কতটা গুরুতর। কেননা, সঙ্গে সঙ্গে মাঠ ছেড়ে বাইরে চলে যান অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার। রয়্যালসের কোচ প্যাডি আপটন একটি ওয়েবসাইটকে জানিয়েছেন, ফাইনালের জন্য হজ ফিট নন। হজের জায়গায় রবিবার ফাইনালে খেলতে পারেন শন টেট।
|
আজ টিভিতে
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে মুম্বই বনাম রাজস্থান।
(স্টার স্পোর্টস রাত ৮-০০) |