ধোনিদের হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে রাজস্থান
দ্রাবিড় বনাম গোলিয়াথে জিতল ক্রিকেট
মাঝরাতে টিভিতে যখন হাত মুঠো করে দৌড়তে দেখছিলাম রাহুল দ্রাবিড়কে বুঝে পাচ্ছিলাম না, ম্যাচ রিপোর্টের শুরুটা কী করা উচিত। আচমকা মাথায় এল, ছোটবেলায় ডেভিড বনাম গোলিয়াথের গল্প পড়েছি, মনে আছে ডেভিড কী ভাবে গোলিয়াথকে হারিয়ে দিয়েছিল। মনে হল, দ্রাবিড়ের ক্ষেত্রেও তো ব্যাপারটা এক। শুধু একটু পাল্টাতে হবে।
ডেভিড নয়। শুক্রবারের সোয়াই মান সিংহ স্টেডিয়ামের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালে যা হল, সেটা দ্রাবিড় বনাম গোলিয়াথ!
চেন্নাই সুপার কিংসকে গোলিয়াথ বলব না তো কী বলব? ৭২-৭ অবস্থা থেকে কেউ যদি এ ভাবে ম্যাচে ফিরতে পারে, তা হলে বোধহয় সেটা চেন্নাই সুপার কিংস। কিন্তু ওরা গোটা ম্যাচে এতগুলো ভুলত্রুটি করেছে যে, শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা বার করা যায়নি। হারতে হল ১৪ রানে। তবে তাতে টিম দ্রাবিড়ের কৃতিত্ব এতটুকু কমে না। অধিনায়ক যেমন, টিমও তেমন!
ভাবুন তো, গত তিনটে মাস রাজস্থান রয়্যালসের ঠিক কী রকম গিয়েছে? স্পট ফিক্সিং কাণ্ডে টিমটা ছিন্নভিন্ন। যে রাহুল দ্রাবিড়কে নিয়ে আজ পর্যন্ত কেউ একটা টুঁ শব্দ করতে পারেনি, সেই দ্রাবিড়কেই দেখতে হল ওর নিজের টিমে গড়াপেটা কেলেঙ্কারি। একটা কেলেঙ্কারি শ্রীসন্ত সহ টিমের অর্ধেক বোলিং লাইন আপ সাফ করে দিয়েছে। ওই অবস্থা থেকে একটা টিম মহেন্দ্র সিংহ ধোনির চেন্নাইকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে উঠছে! রূপকথা বললেও বোধহয় কম বলা হয়।
ফাইনালে ওঠার হুঙ্কার। ছবি সিএল টি-টোয়েন্টি।
রাজস্থানের একটা ব্যাপার দেখলে খুব অবাক লাগে। কাগজে-কলমে ওদের টিমে তারকা বলতে মাত্র তিন জন। দ্রাবিড় নিজে। শেন ওয়াটসন। আর ব্র্যাড হজ। কিন্তু আজ দেখুন। তারকা হয়ে গেল অজিঙ্ক রাহানে। তারকা হয়ে গেল প্রবীণ তাম্বে। প্রথম জনকে লোকে চেনে। আমার কাছে রাহানে ভারতের সবচেয়ে আন্ডাররেটেড ক্রিকেটার। যার প্রতিভা আছে, পারফরম্যান্স আছে, কিন্তু যোগ্য মর্যাদা নেই। আর তাম্বের নাম ক’জন শুনেছে সন্দেহ আছে। একচল্লিশ বছর বয়স। মুম্বইয়ের হয়ে একটাও প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেনি। অফিস লিগ খেলে ক্লাবের হয়ে। মুম্বইয়ে ওকে নিয়ে বলা হয়, যোগ্য হয়েও রঞ্জি না খেলার সেরা উদাহরণ। আজও মুম্বই ওকে চেনেনি, দ্রাবিড় চিনেছে। আর ঠিক যে চিনেছে, সেটা বলছে ওর পারফরম্যান্স। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে দশ উইকেট নিয়ে এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ উইকেট ওর। সুনীল নারিনেরও আগে। শুক্রবার বদ্রীনাথ, সুরেশ রায়না সমেত চার ওভারে তিনটে উইকেট! খরচ? মোটে দশ রান!
ম্যাচ শুরুর আগে নেটে ধোনি। ছবি: পিটিআই।
রাজস্থানের সবচেয়ে বড় সুবিধে, ওরা যে জিততে পারে, সেটা কেউ ভাবে না। তাই চাপটাও নেই। দ্রাবিড়েরও ঠিক সেটাই পছন্দ। ও রাজস্থানে এমন একটা টিম পেয়েছে, যাদের কাছে ও রোলমডেল। তা ছাড়া দ্রাবিড় ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ ক্যাপ্টেন। এত দিন বিক্রমজিৎ মালিক এত ভাল বল করছিল, আজ ওকে বসিয়ে দিল। শুক্রবার চেন্নাই ইনিংসের সময় দেখলাম প্রথম সাত ওভারের মধ্যে ছ’জন বোলারকে আনল, বোলিং শুরু করল স্টুয়ার্ট বিনিকে দিয়ে! তার আগে ব্যাটিংয়ে তিন নম্বরে নামিয়েছিল কেভিন কুপারকে। দ্রুত রান তুলতে।
জয়পুরে শেষ ইনিংস দ্রাবিড়ের। ছবি: পিটিআই।
ধোনি যে জায়গাটায় হেরে গেল। কয়েকটা ব্যাপারে ধোনি কিছুটা হলেও নির্দিষ্ট নিয়মে চলতে পছন্দ করে। যেমন স্লগে ডোয়েন ব্রাভোকে দেখবেনই। অধিনায়ক ধোনি আজ খুব ভুল করেছে বলব না, বলব ওকে ডুবিয়েছে ব্যাটিং। ১৬০ এই উইকেটে তাড়া করা যেত। কিন্তু টপ অর্ডারের প্রথম তিনের মধ্যে যদি দু’জন রান আউট হয়, কিছু বলার থাকে না। অনেকে এর পর ধরে নেবেন, ফাইনালটাও দ্রাবিড়ই জিতবে এ বার। আমি অতটা এখনই বলব না। কারণ ফাইনাল জয়পুরে নয়, কোটলায়। মরসুমের শুরুতে কোটলার উইকেট কেমন হবে, ঈশ্বর জানেন। তা ছাড়া ‘ঘরের মাঠে নামলেই জিতব’ ব্যাপারটা আর দ্রাবিড়দের জন্য থাকছে না।
তবে ফাইনালে যা-ই হোক, দ্রাবিড় জিতে গিয়েছে। ক্রিকেটকেও জিতিয়েছে। আর ওই কলঙ্কের পর এমন উত্তরণ বোধহয় শুধু দ্রাবিড়ের পক্ষেই সম্ভব।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
রাজস্থান রয়্যালস: ১৫৯-৮ (২০ ওভারে)। রাহানে ৭০। ব্র্যাভো ৩-২৬।
চেন্নাই সুপার কিংস: ১৪৫-৮ (২০ ওভারে)। অশ্বিন ৪৬। তাম্বে ৩-১০।

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.