পঞ্চাশ হাজার রান!
সত্যি বলতে, টিভিতে ম্যাচটা দেখতে দেখতে সচিন তেন্ডুলকরের নামের পাশে ওই ম্যাজিক ফিগারটা দেখলাম, বিশ্বাস হয়নি। সব ধরনের ক্রিকেট মিলিয়ে একটা লোক কি না পঞ্চাশ হাজার রান করে যাচ্ছে! পরে ইন্টারনেটে দেখলাম, ওর আগে পনেরো জন আছে, যাদের নামের পাশে এই কীর্তি রয়েছে। কিন্তু তবু বলব, তাতে সচিনের কৃতিত্ব কোথাও কমে না। আমার মতো ক্রিকেটারদের কাছে, ফিগারটা বোধহয় বুক ক্রিকেটেও ছোঁয়া সম্ভব নয়।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, লোকে সচিনের দু’শো টেস্ট নিয়ে এতটাই মগ্ন হয়ে রয়েছে যে, এই রেকর্ডটার কথা কারও খেয়ালই ছিল না। কেউ জানতই না সচিন সমস্ত ধরনের ক্রিকেট মিলিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালে পঞ্চাশ হাজারের মাইলস্টোন ছুঁতে চলেছে। এত রাতেও সচিনের মহাকৃতিত্ব নিয়ে অনেক ফোন-টোন পাচ্ছি। কিন্তু আমি বলব, সংখ্যাটা নয়, সংখ্যার পিছনে ওর সাধনাকে দেখুন। সাধনার ‘রান’টা দেখুন।
মনে রাখতে হবে যে, চব্বিশ বছর ধরে লোকটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে চলেছে। আর সব ধরনের ক্রিকেট ধরলে আরও পাঁচ বছর। অর্থাৎ, প্রায় তিরিশ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম। নিষ্ঠা। লেগে থাকার মানসিকতা। নিজেকে রোজ তাতিয়ে তোলা। সব কিছুকে কিন্তু ধরতে হবে। |
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টি টোয়েন্টিতে যখন কমেন্ট্রি করতে গিয়েছিলাম, রবি শাস্ত্রীর সঙ্গে একদিন সচিন নিয়ে কথা হচ্ছিল। শুনলাম, সচিনকে আজও একই রকম খাটতে দেখা যায়, ঠিক যতটা খাটে একজন উঠতি ক্রিকেটার! ভাবতে পারেন, চল্লিশ ছোঁয়া একজন ক্রিকেটার রোজ নিয়ম করে জিমে যাচ্ছে, পুল সেশন করছে, ফিটনেস ট্রেনিং করছে। একটা বয়সের পর শরীরের উপর চাপ পড়বেই। সচিনকেও ফিটনেস নিয়ে ভুগতে হয়েছে। কিন্তু ও সেটাকে ঢেকে দিয়েছে মনের জোর আর মাঠে নেমে পারফর্ম করার অফুরন্ত ইচ্ছে দিয়ে। ক্রিকেটজীবন বলুন বা তার পরবর্তী জীবন, কম ক্রিকেটারকে তো দেখলাম না। অনেক বড় বড় ক্রিকেটারকেও একটা সময়ের পর দেখেছি, ক্রিকেটকে স্রেফ একটা চাকরি হিসেবে ধরে নিতে। মাঠে গিয়ে পারফর্ম করাটা চাকরি, করতে হবে, তাই করছে। কিন্তু সেটা হতে থাকলে ক্রিকেটের সঙ্গে ক্রিকেটারের আত্মার যোগাযোগটা চলে যায়। সচিনের মধ্যে যেটা আজ পর্যন্ত দেখলাম না। কী বাকি আছে ওর? দু’শোটা টেস্ট খেলতে চলেছে, একশোটা সেঞ্চুরি কোনও রেকর্ড তো বাকি নেই। থাকবেও না। কিন্তু তবু এখনও শুনি, ম্যাচ থাকলে আগের দিন নাকি ঘুমোয় না। এখনও এতটা টেনশন করে!
শনিবার সচিনের ব্যাটিং দেখতে বেশ ভালও লাগছিল। ত্রিনিদাদের বাঁ হাতি স্পিানরকে দু’বার তুলে ফেলে দিল। ৩৫ করল। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সও (১৫৭-৪) ৬ উইকেটে ত্রিনিদাদ ও টোবাগোকে (১৫৩-৫) হারিয়ে ফাইনালে উঠে গেল। সচিনের দু’টো ছক্কা গ্যালারিতে পড়তে দেখলাম, কোটলার দর্শক মোটামুটি উন্মত্ত হয়ে পড়েছে। ভেবে দেখুন, এই চাপটা সচিনকে নিতে হচ্ছে গত চব্বিশ বছর ধরে। একশো কোটি লোকের প্রত্যাশার চাপ। রোজ। ক্রিকেটকে আমরা বলি, টিমগেম। কিন্তু সৌরভ-দ্রাবিড়-সহবাগরা আসার আগে ওটা তো ওয়ান ম্যান শো ছিল ভারতের জন্য। সচিন খেললে ভারত আছে। নইলে নেই।
তাই যখন লোককে বলতে শুনি সর্বকালের সেরা ক্রীড়াবিদ কে, রজার ফেডেরার না মহম্মদ আলি, কখনও একমত হতে পারি না। এদের কাউকে একই সঙ্গে টিমগেম ও ইন্ডিভিজুয়াল স্পোর্টের অদ্ভুত মিশেলের সামনে পড়তে হয়নি। কাউকে রোজ একশো কোটির চাপ নিয়ে মাঠে নামতে হয়নি। কাউকে খেলার কথা ভেবে জীবনকে নিয়ন্ত্রণে আনতেই হবে, এমন ভাবনা ভাবতে হয়নি। কী করা যাবে, ক্রিকেট লাইফস্টাইল স্পোর্ট তো! আর সর্বকালের সেরা বাছা নিয়েও বোধহয় কিছু করার নেই। ওটা একজনই। আমার কাছে অন্তত।
সচিন রমেশ তেন্ডুলকর।
|
• জানতাম না আমি ৫০ হাজার রানের এত কাছে এসে গিয়েছি। জায়ান্ট স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখি, আর মাত্র দু’ রান দূরে। খুব ভাল একটা অনুভূতি।
• এখন পর্যন্ত আমার শরীরটা ঠিকঠাকই আছে। কোনও সমস্যা হচ্ছে না। ক্রিকেটটা উপভোগও করছি।
• আমি একটু কুসংস্কারগ্রস্ত। ফাইনালের আগে নিজের দল নিয়ে কিছু বলতে চাই না। যে ভাবে খেলছি, সে ভাবেই খেলতে চাই।
সচিন তেন্ডুলকর |
• বিশ্বে ১৬তম ব্যাটসম্যান হিসেবে সমস্ত ধরনের স্বীকৃত ক্রিকেট মিলিয়ে ৫০ হাজার রান করলেন সচিন। প্রথম শ্রেণি ২৫২২৮, লিস্ট-এ ২১৯৯৯, টি-টোয়েন্টি ২৭৭৩। তালিকায় শীর্ষে গ্রাহাম গুচ। মোট রান ৬৭০৫৭। ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে দ্রাবিড় ৩২ নম্বরে (৪১৬৫০)। |
• পাজি, ৫০ হাজার রানননন। তোমার পায়ে মাথা ঠেকাই।
যুবরাজ সিংহ
• ভারতীয় ভক্তদের জন্য কাল খুব কঠিন একটা দিন। সচিন বনাম দ্রাবিড়। কী করে একটা ম্যাচে দু’জনকে সমর্থন করব, জানি না।
রবীন্দ্র জাডেজা |
|