কলকাতার বিস্ফোরক নষ্ট করা হয়, দাবি ভটকলের
বিহার থেকে কলকাতায় এসে নিয়ে যাওয়া আট কেজি বিস্ফোরক কোনও জঙ্গি হামলায় ব্যবহার করতে পারেনি ইয়াসিন ভটকল। শেষ পর্যন্ত তারই নির্দেশে তার শাগরেদরা সেটা নষ্ট করে ফেলে। ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের ওই চাঁইকে জেরা করে সম্প্রতি জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) এ কথা জেনেছে। গোয়েন্দাদের বক্তব্য, ইয়াসিন কলকাতায় এসে বিস্ফোরক নিয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছে, কিন্তু একই সঙ্গে সে জানিয়েছে, ওই বিস্ফোরক নষ্ট করে ফেলতে হয়েছিল।
কলকাতার সায়েন্স সিটি-র কাছে তিলজলার ভিআইপি নগরে এক নার্সের বাড়িতে ইয়াসিনের হাতে ওই বিস্ফোরক তুলে দেয় নদিয়া জেলায় আইএম-এর লিঙ্কম্যান আনোয়ার হোসেন মল্লিক। সেটা ২০০৯-এর সেপ্টেম্বর মাসের ঘটনা। এর পর ২০১০-এর ১৩ ফেব্রুয়ারি পুণের জার্মান বেকারিতে আইএমের ঘটানো বিস্ফোরণে চার বিদেশি-সহ ১৭ জন নিহত হন, জখম হন আরও প্রায় ৬০ জন। পরে ওই রেস্তোরাঁর ক্যাশিয়ার-এর বসার জায়গার কাছাকাছি রাখা ক্লোজ্ড সার্কিট ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে দেখা গিয়েছিল, ইয়াসিন একটি হ্যাভারস্যাক ওই রেস্তোরাঁয় রেখে সেখান থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে।
ইয়াসিনের হাতে নদিয়ার যে আইএম-লিঙ্কম্যান আট কেজি বিস্ফোরক তুলে দিয়েছিল, সেই আনোয়ার এ বছর ৬ জুলাই বিবাদী বাগ চত্বরে কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সের (এসটিএফ) হাতে ধরা পড়ে যায়। ইয়াসিন যে তিলজলার একটি বাড়িতে এসে আনোয়ারের কাছ থেকে ওই বিস্ফোরক নিয়ে গিয়েছিল, সেটা প্রথম জানায় আনোয়ার-ই। তার কথা থেকে থেকে গোয়েন্দাদের মনে হয়েছিল, কলকাতায় এসে নেওয়া বিস্ফোরক ইয়াসিন জার্মান বেকারি বিস্ফোরণেই কাজে লাগানো হয়।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইবি-র এক অফিসারের কথায়, “২০০৯-এর সেপ্টেম্বর এবং জার্মান বেকারি বিস্ফোরণের মধ্যে কোনও জঙ্গি হামলা হয়নি। তাই, প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম, কলকাতা থেকে নেওয়া বিস্ফোরকই ব্যবহৃত হয়েছে জার্মান বেকারি বিস্ফোরণে। কিন্তু ইয়াসিন ভটকল জেরায় দাবি করেছে, ওই বিস্ফোরক সে জার্মান বেকারি কেন, তার পরবর্তী অন্য কোনও হামলাতেও ব্যবহার করতে পারেনি। ওই বিস্ফোরক নষ্ট করে দিতে হয়েছে।” গোয়েন্দারা জেনেছেন, বাংলাদেশ থেকে নদিয়ার চাপড়া সীমান্ত দিয়ে আনোয়ার হোসেন মল্লিক আট কেজি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট এনে ইয়াসিন ভটকলকে দিয়েছিল।
কিন্তু কেন ওই বিস্ফোরক নষ্ট করে ফেলতে হল?
এনআইএ-র বক্তব্য, ২০০৯-এর সেপ্টেম্বর মাসে কলকাতায় এসে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট নিয়ে যাওয়ার দু’মাসের মধ্যেই, নভেম্বরে ইয়াসিন কলকাতার এসটিএফের হাতে ধরা পড়ে। ইয়াসিন ভটকলকে সেই
সময়ে জাল নোটের কারবারি মহম্মদ আসরফ ভেবে কলুটোলা স্ট্রিট থেকে গ্রেফতার করে এসটিএফ। মাস দুয়েকের মধ্যে আসরফ নামধারী ইয়াসিন জামিনে মুক্তি পায়। কিন্তু তার আগেই কলকাতার জেলে বন্দি অবস্থাতেই ইয়াসিন তার সঙ্গীদের বার্তা পাঠায়, সে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গিয়েছে বলে ওই বিস্ফোরক পুরোটাই নষ্ট করে ফেলতে হবে। বিহারের কোথাও ওই বিস্ফোরক নষ্ট করে ফেলা হয়েছিল বলে গোয়েন্দাদের সন্দেহ। এনআইএ-র এক অফিসার বলেন, “ইয়াসিন বলেছে, পুণের জার্মান বেকারিতে বিস্ফোরণের জন্য সে অন্য থেকে বিস্ফোরক জোগাড় করেছিল।”
অর্থাৎ ২০১০-এর জানুয়ারিতে কলকাতার জেল থেকে বেরোনোর পর অল্প সময়ের মধ্যে ফের বিস্ফোরক জোগাড় করে ইয়াসিন ফেব্রুয়ারি মাসে জার্মান বেকারিতে বিস্ফোরণ ঘটায়। আর এটা জেনেই তাজ্জব গোয়েন্দারা। আইবি-র এক কর্তার বক্তব্য, “জার্মান বেকারি বিস্ফোরণে মূল বিস্ফোরক ছিল অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট। কিন্তু তাকে দ্রুত ও নিশ্চিত ভাবে কার্যকর করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল আরডিএক্স-ও। এই দু’ধরনের বিস্ফোরকই জোগাড় করা হয়েছিল অল্প সময়ের মধ্যে। অর্থাৎ একটি-দু’টি নয়, বিভিন্ন উৎস থেকে অল্প সময়ের মধ্যে বিস্ফোরক জোগাড় করার জন্য কার্যত দেশ জুড়েই নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিল ইয়াসিন।”

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.