একজন চাইছেন মালদহ শহরের মধ্যে পুরাতন বিমানবন্দরকেই বিমান চলাচলের যোগ্য করে তোলা হোক। অপরজন শহরের বাইরে ৬০০ একর জমি অধিগ্রহণ করে নতুন করে বিমানবন্দর গড়ার জন্য দরবার শুরু করেছেন। প্রথম জন মালদহের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আবুহাসেম খান চৌধুরী আর, দ্বিতীয় জন স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের পযর্টন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী। এই দুই জনের বিরোধের জেরে মালদহে বিমানবন্দরের কাজ বিশবাঁও জলে বলে অভিযোগ। এমন কী, এই অবস্থায় পুরাতন বিমানবন্দরের জমি বেদখল হতে শুরু করেছে বলেও অভিযোগ।
বিষয়টি নিয়ে জেলার ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। মালদহ মার্চেন্ট চেম্বার অব কমার্সের সম্পাদক উজ্জল সাহা বলেন, “কখন শুনছি পুরাতন বিমানবন্দরেই পরিষেবা চালু করা হবে। আবার শুনছি নতুন করে জমি অধিগ্রহণ করে নতুন বিমানবন্দর গড়ে তোলা হবে। দুই মন্ত্রীর কেউ দিশা দেখাতে পারছেন না। শিলিগুড়ির বাগডোগরায় রাতের বিমানও চলাচল করছে। আর এখানে কিছুই হচ্ছে না।” |
তিনি জানান, বিমানবন্দর চালু না হওয়া মালদহের অগ্রগতি থমকে গিয়েছে। বড় শিল্পপতিরা আসছেন না। আমরা চাই দলমত নির্বিশেষে সবাই বসে বিমান বন্দর চালুর উদ্যোগ নিক। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, পুরাতন বিমানবন্দরে পরিষেবা চালু করার জন্য বেশ কয়েক বছর আগে উদ্যোগী হয়েছিলেন জেলার সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আবু হাসেম খান চৌধুরী। তাঁরই উদ্যোগে এয়ারপোর্ট অথারিটি অব ইন্ডিয়া পুরাতন বিমানবন্দরে বিমান পরিষেবা চালু করার জন্য অতিরিক্ত ৫১ একর জমি অধিগ্রহণ করার প্রক্রিয়া শুরু করে। জেলা প্রশাসনের তরফে জমি অধিগ্রহণ করাও আশ্বাস দেওয়া হয়। এর পরে এয়ারপোর্ট অথারিটি অব ইন্ডিয়া বিমানবন্দরে সীমানা পাঁচিলও দেয়। তাদের এক প্রতিনিধি দল মালদহেও আসেন। তাঁরা জানান, অতিরিক্ত ৫১ একর জমি এবং এলাকায় থাকা বিভিন্ন টাওয়ার ও বিদ্যুতের হাইটেনশন লাইন সরানো হলে ছোট বিমান পরিষেবা চালু করা সম্ভব। কিন্তু জমি না মেলায় কিছুই কাজ এগোয়নি বলে অভিযোগ। আবুহাসেম খান চৌধুরী বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার পুরানো জায়গায় পরিকাঠামোর ঠিক করে পরিষেবা চালু করতে সাহায্য করবে। কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর অজিত সিংহ জানিয়েছেন, টাকার অভাব হবে না। কিন্তু জমি না মেলায় কাজ হচ্ছে না। স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যে পর্যটন মন্ত্রীর বাধায় তা হচ্ছে না। রাজ্য সরকারও এগিয়ে আসছে না। এতে বিমানবন্দরের সংস্কারের কাজ থমকে গিয়েছে।” তাঁর আপত্তির কথা সাফ জানিয়েছেন রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুবাবু। তাঁর যুক্তি, “বড় বড় শহরে বিমানবন্দর অনেকটাই বাইরে থাকে। যে এলাকার ৫১ একরের কথা বলা হচ্ছে, সেখানে প্রচুর বসতি। বহুতল, টাওয়ার রয়েছে। এ সব উচ্ছেদ ভাঙচুর করা সম্ভব নয়। এতে কিছু কাজ হলেও ছোট বিমান ছাড়া সেখানে কিছুই নামাওঠা করা সম্ভব হবে না।” তিনি জানান, এইসব বিবেচনা করেই মালদহ শহর লাগোয়া নারায়ণপুরে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে ৬০০ একর জমির উপর বিমানবন্দর গড়ে তোলার জন্য এয়ারপোর্ট অথারিটিকে প্রস্তাব দিয়েছিলাম। সেখানে ৪০০ একর জমিতে বিমানবন্দর হতে পারে। আর বাকি জমিতে শপিংমল, রেস্তোরাঁ, বাজার গড়া যাবে। কিন্তু মালদহের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর জন্যই তা হচ্ছে না।
|