সপরিবার ‘অর্ধাহারে’ ৭৬-এর সুখী সরেন
চার নাতি নাতনি নিয়ে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন ৭৬ বছরের আদিবাসী বৃদ্ধা সুখী সরেন। দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট শহর লাগোয়া ভাটপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের খিদিরপুর ঘোষপাড়া এলাকার ঘটনা। বাসিন্দারা জানান, ওই বৃদ্ধা, তার নাবালক নাতি নাতনির খাবার বলে এলাকার প্রাথমিক স্কুলের মিডডে মিল। তবে স্কুল খোলা থাকলে একবেলা ভাত জোটে আর, স্কুল বন্ধ হলে সকলকে ‘অনাহারে’ দিন কাটাতে হয়। আবার কোনও সময় প্রতিবেশীরা খাবার দিয়ে সাহায্য করেন। তবে তাঁদের অনেকে বলেন, এ ভাবে ক’দিন সম্ভব। স্থানীয় তৃণমূলের গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তারা ওই অসহায় পরিবারের দুরাবস্থার কথা জেনেও উদাসীন বলে অভিযোগ।
নাতনিদের সঙ্গে। খিদিরপুরের ঘোষপাড়ায় অমিত মোহান্তের তোলা ছবি।
দীর্ঘদিন ঠিকমত খেতে না পেয়ে অসহায় ওই বৃদ্ধা ঠিকমত হাঁটাচলা করতে পারেন না। অথচ বিপিএল তালিকাভুক্ত ওই বৃদ্ধার দাবি, গত এক বছর ধরে বার্ধক্য ভাতার পান না। গত তিন মাস সহায় প্রকল্পের রান্না করা খাবারও বন্ধ। পঞ্চায়েতে জানিয়েও সুরাহা হয়নি। শুক্রবার বিষয়টি জানার পর বালুরঘাটের বিডিও পঙ্কজ তামাঙ্গ বলেন, “গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানকে পাঠিয়ে সাহায্যের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।” ভাটপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান লগিন দাস বলেন, “এলাকায় দ্রুত লোক পাঠিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।” বৃদ্ধার হাল ফিরবে জেনে আশ্বস্ত বাসিন্দারা এদিন দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে থাকলেও এলাকায় প্রধান কিংবা তাঁর কোনও প্রতিনিধির দেখা মেলেনি। জেলাশাসক তাপস চৌধুরীর নির্দেশে দুপুর দেড়টা নাগাদ আসেন সদর মহকুমাশাসক সুদীপ মুখোপাধ্যায়। বৃদ্ধা ও চার জন একরকম না খেয়ে আছেন জানতে পারে তিনি তাঁদের দোকান থেকে চিঁড়ে কিনে দেন। নগদ টাকা এবং চালের বন্দোবস্ত করেন। জেলাশাসক তাপস চৌধুরী বলেন, “ওই পরিবারকে সাহায্য করা হবে। বৃদ্ধার বার্ধক্যভাতা কেন বন্ধ হয়ে আছে, খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।” বাসিন্দারা জানান, বহুদিন আগে ভিন রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতে চলে গিয়েছেন বৃদ্ধার ছেলে সুনীল মার্ডি। স্ত্রী অন্যত্র চলে যাওয়ায় তিনি মা’র কাছে রেখে গিয়েছেন ১৪ বছরের ছেলে শিবনাথকে। বৃদ্ধার মেয়ে বুধিন ভবঘুরে। বুধিনের মেয়ে মউশিলাদেবী বৃদ্ধার কাছেই থাকতেন। দুই বছর আগে তার স্বামীর মৃত্যুর পর মউশিলা ৮ বছরের মেয়ে সোনালি, ৬ বছরের ছেলে জিৎ ও ৩ বছরের প্রসেনজিতকে বৃদ্ধার কাছে রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করে ভিন রাজ্যে চলে গিয়েছেন। তার পর থেকে নাতি নাতনিদের নিয়েই থাকেন বৃদ্ধা। ভাঙাচোরা মাটির ঘরে এদিন সকাল থেকে দুই খুদে নাতিকে নিয়ে গালে হাত দিয়ে শুকনো মুখে বসে ছিলেন বৃদ্ধা। মহালয়া দেবীর আগমনী বার্তায় তখন চার দিকে উৎসবের ছোঁয়া। এ দিন প্রাথমিক স্কুল ছুটি। মিডডের ভাত এদিন জুটবে না জেনে রাস্তার দিকে তাকিয়ে বসেছিলেন বৃদ্ধা। তিনি বলেন, “নাতিপুতিদের আমার কাছে রেখে ছেলে, মেয়েরা ছেড়ে গিয়েছে। বাচ্চা দুটো দুপুরে স্কুলের ভাত আনে। সকলে ভাগ করে খাই। স্কুল বন্ধ থাকলে না খেয়ে থাকি। বাচ্চাগুলো অপুষ্টিতে ভুগছে। কতদিন পারব জানি না।” বৃদ্ধার প্রতিবেশী চন্দনা সাহা, সুখু টুডুরা বলেন, “বেশিরভাগ দিন বাচ্চাগুলিকে নিয়ে বৃদ্ধা অর্ধাহারে থাকেন। খাবার জোটানোর কেউ নেই। এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দা দুঃস্থ দিনমজুর। তার মধ্যেও অনেকে ভাত, মুড়ি দিয়ে সাহায্য করেন। গ্রাম পঞ্চায়েত ও প্রশাসনের কর্তাদের উচিত দ্রুত বৃদ্ধার পাশে দাঁড়ানো।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.