জেলবন্দি ঘরের ছেলে। তাই শোকে স্তব্ধ ফুলওয়াড়ি। লালু প্রসাদ দোষী সাব্যস্ত হওয়ার দিনে গ্রামে রান্না চাপেনি কারও। আর সাজা ঘোষণার পরে কথা বলার অবস্থায় নেই গ্রামের কেউই।
আজ সেই গ্রামে ঢুকে পিপুল গাছের নীচে দেখা গেল বিমর্ষ কিছু যুবককে। তাঁদের সকলেরই ধারণা, লালু প্রসাদকে চক্রান্ত করে ফাঁসানো হয়েছে। লালুর আত্মীয় রামচন্দ্র যাদব বললেন, “ও সহজেই মানুষকে বিশ্বাস করে। কোনও কাগজ দিলে না পড়েই সই করে দিত। সেই সুযোগ নিয়েই ওর ক্ষতি করা হয়েছে।”
লালুর আত্মীয়দের মতোই ফুলওয়াড়ির মানুষেরও আশা ছিল অনেক। কী সেই আশা? গ্রামের বাসিন্দা পারশনাথ যাদব বলেন, “লালু প্রসাদ বা রাবড়ী দেবী মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন আমাদের গ্রামের কোনও ছেলের চাকরি হয়নি। এমনকী, রেলেও নয়।’’ কিন্তু তাঁর অকপট স্বীকারোক্তি, গ্রামের উন্নয়নে কোনও কার্পণ্য করেননি লালু। রাস্তাঘাট, হাসপাতাল, ব্লক অফিস থেকে শুরু করে জমি নথিভুক্তিকরণের অফিস-সবই তৈরি হয়েছে তাঁর জমানায়। গ্রামে ঢুকতেই চোখে পড়ে ঝকঝকে সেই ব্লক অফিস। তার একটু দূরে লালুর মা মারছিয়া দেবীর নামে হাসপাতাল।
গ্রামের আশি বছরের বৃদ্ধা ফুলঝারো দেবীর আক্ষেপ, “দুর্গাপুজোর দশমীর দিন প্রতি বছর আমাদের ছেলে গ্রামে আসত। পিপুল গাছের নীচে চাতালে বসত, সময় কাটাতো, সকলের সাথে কথা বলত। এ বার ওর আসা হবে না।” লালুর নাতি লবকুশ যাদবের মুখও থমথমে। তার কথায় “লালুদাদু প্রতি দশমীতেই মন্দিরে পুজো দিয়ে এখানেই আসতেন। ঘরে ঘরে গিয়ে খোঁজ নিতেন।” গ্রামের আর এক যুবক শচীন্দ্র মাঝির কথায়, “আমাদের গ্রাম এখন অভিভাবকহীন। বড় সমস্যা হলে আমরা পটনায় ছুটে যেতাম ওঁর কাছে।”
শুধু ফুলওয়াড়ি নয়, একই পরিবেশ রাবড়ীর গ্রাম সেলারেও। ফুলওয়াড়ি থেকে দূরত্ব মাত্র তিন কিলোমিটার। বিয়ের আগে লালু যেতেন পান খেতে। রাবড়ীর গ্রামের মানুষও তাঁদের জামাইয়ে সঙ্গে দেখা করার জন্য রাঁচি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। রাবড়ীর দোতলা বাড়িতে তালা ঝুলছে। তাঁর বাবা শিবপ্রসাদ যাদব এবং মা মহারাজো দেবী এখন পটনায়। রাবড়ীর কাকিমা রামপতি দেবী বললেন, “মাঝে মধ্যেই জামাই এখানে আসত। শুনেছি সে জেলে। আমাদের মন খারাপ।”
লালুর এই জেলে যাওয়া নিয়ে রাজনীতির কচকচানি নেই এই দুই গ্রামে, আছে শুধু আবেগ।
|