কমিশনকে কাছে পেয়েই ফুঁসে উঠল কেরল সিপিএম
সুখে থাকতে ভূতে কিলোনো! তদন্তের কাজ করতে গিয়ে প্রায় সেই দশাই হল সিপিএমের!
কেরলে দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব খতিয়ে দেখতে পলিটব্যুরোর ৬ সদস্যকে নিয়ে কমিশন গড়ে সিপিএম। যাচ্ছি-যাব করেও সেই কমিশনের এত দিন আর কেরলে যাওয়া হয়ে ওঠেনি। ইতিমধ্যে উম্মেন চান্ডি সরকারের বিরুদ্ধে সৌর কেলেঙ্কারি হাতে পাওয়ায় কোমর বেঁধে মাঠে নামেন সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব। বিবদমান দুই শিবিরের নেতা, রাজ্য সম্পাদক পিনারাই বিজয়ন এবং বিরোধী দলনেতা ভি এস অচ্যুতানন্দন দিব্যি সরকার-বিরোধী আন্দোলনে একসঙ্গে গলা চড়াচ্ছিলেন। এরই মধ্যে হঠাৎ কেরল-সফরে হাজির স্বয়ং প্রকাশ কারাটের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিশন। রাজ্য নেতাদের কাছে তাদের জিজ্ঞাস্য, দু’পক্ষের পারস্পরিক অভিযোগ কতটা সত্যি? আপাতত সন্ধিতে থাকা কেরল সিপিএম এমন প্রশ্নমালা পেয়ে ফের ফিরে গিয়েছে স্বমহিমায়! দু’পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ উজাড় করে দিয়েছে কমিশনের কাছে!
সরেজমিনে তদন্ত করতে গিয়ে যা তথ্য জমা পড়েছে কমিশনের কাছে, তাতে ভি এসের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাল্লাই ভারী। কারণ, কেরল সিপিএমে রাজ্য সম্পাদকের শিবিরই সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং বেশি প্রভাবশালী। সাধারণ সম্পাদক কারাট ঠিক করেছেন, চলতি মাসেই দিল্লিতে কমিশনের বৈঠক বসবে কেরল থেকে পাওয়া তথ্য নিয়ে আলোচনার জন্য। তার আগে কেরল-সফরের প্রাথমিক রিপোর্ট উঠে আসবে চলতি সপ্তাহে দলের পলিটব্যুরো বৈঠকে। তবে সিপিএম সূত্রের ইঙ্গিত, লোকসভা ভোটের আগে ভি এসের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। দলে কোণঠাসা হলেও জনমানসে ভি এসের প্রভাব ভোটের আগে মাথায় রাখতে হচ্ছে কারাটদের।
কমিশন গঠিত হওয়ার পরে কেরলে যাওয়া নিয়ে টালবাহানা চলছিল মাসদুয়েক ধরে। শেষ পর্যন্ত সেপ্টেম্বরের শেষে তিরুঅনন্তপুরমে গিয়ে দু’দিন ধরে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের বক্তব্য শুনেছে কমিশন। সেখানে খোদ ভি এস বাদে প্রায় সকলেরই মত ছিল তাঁর কাজকর্মের বিরুদ্ধে! আবার তার পরে রাজ্য কমিটির দু’দিনের বৈঠকে প্রত্যাঘ্যাত করেছেন ভি এস-পন্থীরা! সংখ্যায় কম হলেও তাঁদের জোরালো সওয়াল, রাজ্য নেতৃত্ব যেন তেন প্রকারে ভি এস-কে ফাঁসাতে চাইছেন! দুই শিবিরের রণং দেহি মনোভাব দেখে রাজ্য কমিটির কিছু সদস্য আবার মধ্যপন্থা নিয়ে প্রস্তাব দিয়েছেন, অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ সরিয়ে রেখে আপাতত দলের মধ্যে ঐক্যের উপরেই জোর দেওয়া হোক।
পলিটব্যুরোর এক সদস্যের কথায়, “এর মধ্যে কোনও অভিযোগই নতুন নয়। সবই আগে উঠেছে এবং তার ফয়সালাও হয়নি। এ বারও দিল্লিতে বৈঠক করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” সাধারণ সম্পাদক-সহ দলের শীর্ষ নেতৃত্বই এ বার স্বকর্ণে যাবতীয় অভিযোগ শুনে আসায় ‘বাস্তবসম্মত’ পদক্ষেপ করতে সুবিধা হবে বলে আশাবাদী দলের একাংশ। আবার দলের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে, কমিশনের তদন্তের জন্য এই সময়টা বেছে নেওয়া হল কেন? কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের বক্তব্য, “দীর্ঘ দিন পরে ভি এস এবং পিনারাই একমঞ্চে এক সুরে আন্দোলন করছিলেন। কমিশনের বিষয়টা সামনে এসে পড়ে সেই ঐক্যের মনোভাবে চিড় ধরে গেল! এখন ঝুলিয়ে রাখা ছাড়া চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্তও নেওয়া মুশকিল।”
সিপিএম সূত্রের খবর, কমিশনের মুখোমুখি হয়ে ভি এসের সামনেই তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বিজয়ন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর দল-বিরোধী কাজের বিবরণ দিতে গিয়ে অভিযোগ করেছেন, লাভালিন মামলায় রাজ্য সম্পাদককে ফাঁসানোর জন্য কী ভাবে সক্রিয় হয়েছিলেন ভি এস! বারবার সতর্কিত হয়ে, শাস্তির মুখে পড়েও প্রকাশ্যে দলের ভাবমূর্তির ক্ষতি করা ছাড়েননি। ভি এস পাল্টা একতাড়া নথি জমা দেন কমিশনের কাছে। লাভালিন মামলায় দুর্নীতি, দলত্যাগী নেতা টি পি চন্দ্রশেখরন খুনের ঘটনায় সিপিএমের যোগসাজশ, ভি এসের ঘনিষ্ঠ লোকজনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এ সব ঘটনা সংক্রান্ত তথ্যই পেশ করা হয়েছে তাঁর নোটে। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে শুনানির পরে তিরুঅনন্তপুরমেই একপ্রস্ত বৈঠক করে কমিশন। সেই আলোচনাসাপেক্ষে আবার একটি নোট তৈরি করে রাজ্য কমিটিতে দিয়েছিলেন কারাট। অনুরোধ করেছিলেন গঠনমূলক সমালোচনা করার জন্য। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে ফের সেই কাদা ছোড়াছুড়ি!
ঐক্য দেখাতে কেরলের বাম নেতৃত্ব আপাতত ঠিক করেছেন, সৌর কেলেঙ্কারিতে মুখ্যমন্ত্রীর ইস্তফার দাবিতে তাঁর বাড়ির সামনে এ বার ধর্নায় যাওয়া হবে। তবু বিড়ম্বনায় পড়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কারও কারও আফশোস, কেন যে সাঁকো নাড়াতে যাওয়া হল!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.