তেলঙ্গানা মেনেও সঙ্কটে কংগ্রেস, উজ্জীবিত মোর্চা
তেলঙ্গানা রাজ্য গঠনের ব্যাপারে মন্ত্রিসভার সায়ের পরেও উত্তরোত্তর বিপত্তি বাড়ছে কংগ্রেসের। এক তো ক্রমেই ঘোরালো হচ্ছে অন্ধপ্রদেশের পরিস্থিতি, তার উপরে গোর্খাল্যান্ড-সহ পৃথক রাজ্য গঠনের অন্যান্য দাবি নিয়েও চাপ বাড়ছে মনমোহন সরকারের উপরে।
তেলঙ্গানা রাজ্য গঠনের প্রতিবাদে মনমোহন সিংহ মন্ত্রিসভার ছয় সদস্য ইতিমধ্যেই তাঁদের ইস্তফা পাঠিয়ে দিয়েছেন। অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী কিরণকুমার রেড্ডি কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতার মাত্রা এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন যে তাঁকে সরানোর কথাও এখন বিবেচনা করছেন সনিয়া গাঁধী। এরই মধ্যে ওয়াইএসআর কংগ্রেসের নেতা জগন্মোহন রাজ্য ভাগের বিরুদ্ধে কাল থেকে আমরণ অনশনে বসছেন। পাশে চান চন্দ্রবাবু নায়ডুকে। তিনিও প্রস্তুতি নিচ্ছেন অনশনে বসার। গোটা সীমান্ধ্র জুড়ে বন্ধ তো চলছেই, দোকান-পাট, স্কুল-কলেজ বন্ধ। হিংসাও ছড়িয়ে পড়ছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। তিরুপতি মন্দিরের রাস্তাও আটকে রেখেছে বিক্ষোভকারীরা।
অনশনে বসার আগের দিন শুক্রবার হায়দরাবাদে সাংবাদিক বৈঠকে জগন্মোহন।
কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়ছে পশ্চিমবঙ্গেও। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত কালই কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। এর ২৪ ঘণ্টা না-কাটতেই দার্জিলিঙে সাংবাদিকদের ডেকে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা জানিয়ে দিল, তেলঙ্গানা রাজ্য গঠনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তকে তারা পৃথক গোর্খাল্যান্ড গঠনের পদক্ষেপের সবুজ সঙ্কেত হিসেবেই দেখছে।
মোর্চার সহ সম্পাদক জ্যোতি কুমার রাই আজ বলেন, “এর আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা জানিয়েছিল, পৃথক রাজ্য গঠনের জন্য তাদের কাছে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। তেলঙ্গানা নিয়ে তাদের ঘোষণা প্রমাণ করল, এখন তাদের নতুন রাজ্য ঘোষণা করতে কোনও সমস্যা নেই। আমাদের দাবিকে কেন্দ্রীয় সরকার স্বীকৃতি দেবে, এবং চলতি মাসে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকও সদর্থক হবে।”
যদিও ত্রিপাক্ষিক বৈঠক নিয়ে রাজ্য সরকারের একাংশের মনোভাবের কারণে বৈঠক নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে বলে মোর্চার একটি অংশ মনে করছে। মোর্চার সহ-সম্পাদক বলেন, “কোনও কারণে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক বাতিল হয়ে গেলে ফের আন্দোলন শুরু হবে। আপাতত আগামী ২০ অক্টোবর পর্যন্ত আন্দোলন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সারা বছরের জন্য নয়।”
দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ যশোবন্ত সিংহ এখন পাহাড়ে। এ দিন দার্জিলিঙে তিনি আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেন, “দার্জিলিঙের দাবি তেলঙ্গানার থেকেও পুরোনো। তেলেঙ্গানার সঙ্গে গোর্খাল্যান্ডকে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়। শতাব্দী পুরোনো গোর্খ্যাল্যান্ডের দাবি দ্রুত পূরণ হবে বলেই আমি আশাবাদী।”
হায়দরাবাদে কংগ্রেসের উল্লাস।
এর পাশাপাশি তেলঙ্গানা প্রশ্নেও কংগ্রেসকে যথাসম্ভব অস্বস্তিতে রাখারই রণকৌশল নিয়েছে বিজেপি। পৃথক তেলঙ্গানা রাজ্য গঠনের দাবিকে এত দিন সমর্থনই করে এসেছে বিজেপি। কিন্তু তার জোরে ভোটের ময়দানে বিশেষ কোনও লাভের আশা তারা দেখছে না। তেলঙ্গানা গঠন হয়ে গেলে টিআরএস নেতা চন্দ্রশেখর রাও যাবেন কংগ্রেসের সঙ্গেই। সে কারণে বিজেপি এখন সুকৌশলে সীমান্ধ্র এলাকায় কংগ্রেস-বিরোধী আবেগকে পুঁজি করার চেষ্টা করছে। বিজেপি সূত্রের মতে, তেলঙ্গানার সপক্ষে এত দিন বলার পর সেই অবস্থান থেকে সরে আসার প্রশ্ন উঠছে না। কিন্তু জগন্মোহন, চন্দ্রবাবু যে ভাবে রাজ্য ভাগের বিরোধিতার রাজনীতি করছেন, তাঁদের সঙ্গে থাকলে বিজেপি ভবিষ্যতে নতুন শরিক পেতে পারে অন্ধ্রে।
বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী হায়দরাবাদে সভা করতে গিয়েই বিজেপি-র এই নতুন অবস্থানের ইঙ্গিত দিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘তেলঙ্গানা-সীমান্ধ্র ভাই-ভাই। দুই প্রান্তেরই সমান উন্নয়ন প্রয়োজন।” বিজেপি নেতৃত্বের লক্ষ্য হল, অন্ধ্র-ভাগ নিয়ে বিল পেশ যত দিন সম্ভব ঠেকিয়ে রাখা। কারণ, যত দিন যাবে, রাজ্য ভাগের পক্ষে ও বিপক্ষে অন্ধ্রের রাজনীতি চাপে ফেলবে কংগ্রেসকে। তার সঙ্গে বিজেপি-ও আক্রমণ শানানোর সুযোগ পাবে আরও বেশি। এই রণকৌশল অনুযায়ীই বিজেপি নেতা যশবন্ত সিন্হা আজ কংগ্রেসকে বিঁধে বলেন, “অটলবিহারী বাজপেয়ীর সময়েও তিনটি রাজ্য ভাগ হয়েছিল। কিন্তু কখনও এত সঙ্কট তৈরি হয়নি। অথচ কংগ্রেস রীতিমতো হাবুডুবু খাচ্ছে। এতেই বোঝা যাচ্ছে, প্রশাসক হিসেবে কংগ্রেস কত দুর্বল।”
বিশাখাপত্তনমে তেলুগু দেশমের বিক্ষোভ।
অন্ধ্রের দায়িত্বে থাকা কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহের অবশ্য দাবি, “তেলঙ্গানা রাজ্য গঠন নিয়ে সকলের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। আর সেই সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হঠা সম্ভব নয়। জগন্মোহন, চন্দ্রবাবুও আগে তেলঙ্গানা গঠনের পক্ষে ছিলেন। তাঁরা এখন পিছু হঠতে পারেন, আমরা নয়।” কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে বলেন, “সকলকে বোঝানোর চেষ্টা করা হবে। সংসদের শীতকালীন অধিবেশনেই এই বিলটি পাশ করানো হবে।” তেলঙ্গানা নিয়ে কংগ্রেসের এই সঙ্কটের মধ্যে আশার আলো একটাই, সীমান্ধ্রের কংগ্রেস বিধায়করা আজ মুখ্যমন্ত্রী কিরণকুমার রেড্ডির সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁরা ইস্তফা দেবেন না। তবে বিধানসভায় এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করবেন।
তেলঙ্গানার থেকে সীমান্ধ্রের বিধায়ক-সংখ্যা বেশি, তবু বিধানসভার মত মানতে বাধ্য নয় কেন্দ্র। কিন্তু কেন্দ্রে এই বিলটি পাশ করানোর জন্য অন্য দলগুলির সমর্থন প্রয়োজন। তার আগে অন্ধ্রে সঙ্কট মেটাতে হবে কংগ্রেসকে। কংগ্রেস মনে করছে, যে ভাবে কিরণকুমার কংগ্রেস-বিরোধী অবস্থান নিচ্ছেন, তাঁকে সরিয়ে অন্য আর এক রেড্ডিকে সেই পদে বসাতে হতে পারে। শোনা যাচ্ছে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অনম রামনায়ারণ রেড্ডির নাম। তবে তেলঙ্গানা ভাগ হলে ভোটে বহুমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা। কংগ্রেসের ধারণা, ফায়দা হবে তাঁদেরই।

ছবি: পিটিআই।
পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.