|
|
|
|
গ্রাম থেকে মোবাইলের টাওয়ার সরানোর দাবি
নিজস্ব সংবাদদাতা • দুর্গাপুর |
গ্রামের ভিতর থেকে মোবাইল টাওয়ার সরানোর দাবি তুললেন দুর্গাপুরের ইছাপুর গ্রামের বাসিন্দারা। ওই দু’টি টাওয়ার গ্রামের ভিতর থেকে সরিয়ে অন্যত্র বসানোর আর্জি জানালেন তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, গবেষণায় প্রমাণিত, মোবাইল টাওয়ারের বিকিরণ থেকে নানা ধরনের শারীরিক ক্ষতি হয়ে থাকে। তবে এই সমস্যা শুধু ইছাপুরেই নয়, বহু গ্রামেই একই পরিস্থিতি। রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষ দস্তিদার জানান, ইতিমধ্যেই এই বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। পঞ্চায়েত ও পুরসভাকে সঙ্গে নিয়ে বেশ কিছু পদক্ষেপের কথা ভাবা হয়েছে। খুব শীঘ্র সেগুলি কার্যকর করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর দু’য়েক আগে ইছাপুর গ্রামের এক কিলোমিটারের মধ্যে দু’টি মোবাইল টাওয়ার বসিয়েছে দু’টি টেলি যোগাযোগ সংস্থা। তার মধ্যে একটি বসানো ইছাপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র লাগোয়া। এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শিশু ও প্রসূতিদের যাতায়াত নিয়মিত। অন্যটি জনবহুল কর্মকার পাড়ায় বসানো হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ওই টাওয়ারগুলি বসানোর সময় তাঁরা আপত্তি করেছিলেন। কিন্তু তখন বজ্রপাত হলে বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে এই যুক্তি দেখিয়ে গ্রামবাসীদের বুঝিয়ে রাজি করেছিল সংস্থা দু’টি। স্থানীয় বাসিন্দা প্রদীপকুমার সামন্ত, সুকুমার গড়াই, চন্দন সোমদের অভিযোগ, এই ধরনের টাওয়ারের বিকিরণ থেকে নানা সমস্যা তৈরি হয়। তাই দ্রুত ওই টাওয়ার দু’টি অন্যত্র সরানো হোক। |
|
এই দু’টি টাওয়ার নিয়েই আপত্তি দুর্গাপুরের ইছাপুরে। —নিজস্ব চিত্র। |
কেন্দ্রীয় টেলি-যোগাযোগ মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে দেশে মোবাইল টাওয়ারের সংখ্যা কয়েক লক্ষ। এগুলি থেকে তড়িত্ চুম্বকীয় তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে। টাওয়ার বসানোর পর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের বাসিন্দাদের নানা রকম শারীরিক অস্তস্তিতে পড়তে হচ্ছে এমন অভিযোগ উঠছে প্রথম থেকেই। এই পরিস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে সমীক্ষার জন্য টেলিকম, পরিবেশ এবং জৈব-প্রযুক্তি মন্ত্রকের কর্তাদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় সরকার। এই কমিটিতে সামিল করা হয় বিশেষজ্ঞদেরও। ২০১২ সালের মাঝামাঝি প্রকাশিত কমিটির রিপোর্ট বলছে, জনবসতির মধ্যে টাওয়ারগুলি যে বিকিরণ ছড়াচ্ছে তার প্রভাব পড়ছে মস্তিষ্ক ও হৃদযন্ত্রে। অবসাদ, ঘুমের ব্যাঘাত, ঝিমুনি ভাব বেড়ে যাওয়া, মনসংযোগে সমস্যা, স্মৃতিশক্তি বিলোপ, মাথাব্যাথা, হজমের ক্ষমতা কমে যাওয়া, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়ার মতো নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ফলে মোবাইল ব্যবহার না করেও বিকিরণের শিকার হচ্ছে শিশু, বৃদ্ধ, গর্ভবতীরা। বাদ যাচ্ছে না পশুপাখিরাও। ইতিমধ্যেই চড়াই পাখি, মৌমাছি-সহ অন্যান্য পতঙ্গের উপরে এর প্রভাব লক্ষ্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
পরিস্থিতি বদলাতে আন্তঃমন্ত্রক কমিটির রিপোর্টে সুপারিশ করা হয়, এই বিকিরণের কুপ্রভাব নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আরও সক্রিয় হতে হবে। হয় ওই টাওয়ারগুলির শক্তি কমাতে হবে। নয়তো সেগুলি সরিয়ে দেওয়াই বাঞ্ছনীয়। বাস্তব পরিস্থিতিতে টাওয়ারগুলি একেবারে সরিয়ে দেওয়া কার্যত অসম্ভব। কারণ দিন দিন বাড়ছে মোবাইল ফোনের সংখ্যা। ভালো পরিষেবা দিতে গেলে টাওয়ারের সংখ্যাও বাড়াতে হবে। কাজেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টাওয়ারের বিকিরণের মাত্রা কমানোই বাস্তবোচিত, জানিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত টেলি যোগাযোগ সংস্থা বিএসএনএলের দুর্গাপুরের এক আধিকারিক। তিনি বলেন, “সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির প্রয়োজনীয় অনুমোদন নিয়েই টাওয়ার বসায় টেলি যোগাযোগ সংস্থাগুলি। কাজেই বাসিন্দাদের আর্জি মেনে সেগুলি সরিয়ে ফেলা সম্ভব নয়।” একই কথা জানিয়েছেন একাধিক বেসরকারি টেলি যোগাযোগ সংস্থার আধিকারিকেরাও। |
|
|
|
|
|