|
|
|
|
বিডিওর উদ্যোগে বাস চালিয়ে লাভ ১৫ হাজার |
কিংশুক গুপ্ত • ঝাড়গ্রাম |
লোকসানের জন্য যে বাস চালানো বন্ধ করে দিয়েছিল দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থা, বিডিও-র হাতে পড়ে সেই বাস থেকেই মাসে লাভ হল ১৫ হাজার টাকা! ঝাড়গ্রামের সাঁকরাইল ব্লকের মেদিনীপুর-রোহিণী রুটের বাসের ক্ষেত্রে এমনটাই ঘটেছে। দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার (এসবিএসটিসি) ম্যানেজিং ডিরেক্টর নবকুমার বর্মনও মানছেন, “ওই বিডিও অসাধ্য সাধন করেছেন। এই প্রথম আমরা কোনও বিডিওকে বাস চালানোর দায়িত্ব দিয়েছিলাম। এ বার ‘সাঁকরাইল মডেলে’ জঙ্গলমহলে ব্লক প্রশাসনের মাধ্যমে আমরা আরও বাস চালাতে চাই। অন্য বিডিওরা আগ্রহী হলে আমরা বাস দিতে রাজি আছি।”
তাঁর উদ্যোগ ফলপ্রসূ হওয়ায় খুশি সাঁকরাইলের বিডিও সৌরভ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “নিত্যযাত্রীরা যাতে সময়মতো কর্মস্থলে পৌঁছতে পারেন, সেই লক্ষ্যেই বাসটি চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। অলাভজনক বাসটিকে লাভজনক করে দেখানোটাই আমার কাছে ‘চ্যালেঞ্জ’ ছিল। সেটা করে দেখাতে পেরেছি, এটাই বড় কথা।”
গত ২ অগস্ট মেদিনীপুর-রোহিণী রুটের বাসটি ‘অলাভজনক’ বলে চালানো বন্ধ করে দেন এসবিএসটিসি কর্তৃপক্ষ। জেলা সদর মেদিনীপুর এবং সাঁকরাইলের ব্লক সদর রোহিণীর মধ্যে যাতায়াতকারী বাসটির উপর বহু মানুষ নির্ভরশীল। তাই নিত্যযাত্রীদের কথা ভেবে বাস চালানোর দায়িত্ব নেন সাঁকরাইলের বিডিও সৌরভ চট্টোপাধ্যায়। স্থানীয় বেকার যুবকদের দিয়ে পিপিপি মডেলে (প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশিপ) বাস চালানোর ব্যবস্থা হয়। ১৪ অগস্ট থেকে ফের পথে নামে মেদিনীপুর-রোহিণী রুটের বাসটি। এক মাস বাদে ওই যুবকেরা লভ্যাংশ রেখে উদ্বৃত্ত নগদ ১৫ হাজার টাকা বিডিও-র হাতে তুলে দিয়েছেন। সেই টাকা এসবিএসটিসি কর্তৃপক্ষকে পাঠিয়েও দিয়েছেন বিডিও। |
|
লোকসানের বাস এখন লাভজনক। সাঁকরাইলের রোহিণীতে দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি। |
এখন প্রশ্ন যে বাস চালিয়ে তেলের খরচও উঠছিল না, রাতারাতি সেই বাস থেকেই মাসে ১৫ হাজার টাকা লাভ হল কী করে? সরাসরি জবাব না দিয়ে এসবিএসটিসি’র এমডি নবকুমারবাবু বলেন, “আমরা বাসটি চালানোর সময় চালক-কর্মীদের বেতন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মাসে ৫০ হাজার টাকা খরচ হত। সরকারি নথি অনুযায়ী ওই বাস চালিয়ে তেলের খরচও উঠছিল না।” এখন তাহলে সাফল্যের মন্ত্রটা কী? স্থানীয় যে যুবকেরা বাস চালানোর দায়িত্ব পেয়েছেন, সেই স্বপন দাস, পঞ্চানন দাস, রামচন্দ্র গিরিরা বলেন, “আলাদা কোনও মন্ত্র নেই। আমরা ঠিকা চালক ও কর্মী দিয়েই বাস চালাচ্ছি। তাতে নিজেদের লাভ রেখে বিডিও সাহেবকে ১৫ হাজার টাকা দিতে পেরেছি।” এই বাসে রোজ যাতায়াত করেন এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের রোহিণী শাখার ম্যানেজার গৌতম বসু। তিনি বলেন, “এই বাসের এত চাহিদা। আগের বাসকর্মীরা কেন লাভ করতে পারতেন না, বুঝতে পারছি না।”
‘অফিস টাইম’-এর এই বাসে রোজ ঠাসা ভিড় হয়। ভোর সাড়ে ছ’টায় মেদিনীপুর ছেড়ে ৯টা নাগাদ রোহিণী পৌঁছয় বাসটি। আবার বিকেল পাঁচটায় রোহিণী থেকে রওনা হয়। দু’বারই শতাধিক করে যাত্রী হয়। বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকে বিপাকে পড়েছিলেন। নিত্যযাত্রীদের থেকে বিষয়টি জেনে বিডিও এসবিএসটিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। গত ৭ অগস্ট সরকারি অর্ডার করে বাসটি (নম্বর: ডব্লিউবি-৩৯এ/০৬১২) সাঁকরাইলের বিডিও’কে চালাতে দেন এসবিএসটিসি কর্তৃপক্ষ। জানিয়ে দেওয়া হয়, এসবিএসটিসি কর্তৃপক্ষ বাসের কোনও খরচ দেবে না। তবে বাসটিকে এসবিিএসটিসি-র ডিপোতে রাখা যাবে। তারপরই বিডিও-র উদ্যোগে শুরু হয় বাস চলাচল। রোহিণীর এক সাইকেল দোকানি নবকুমার মিশ্র বলছিলেন, “এই বাসটি আমাকের ব্লকের ‘লাইফ লাইন’। স্কুলের দিদিমণি থেকে অফিসযাত্রী, সকলেই এতে যাতায়াত করেন। ফের বাস চলায় সবাই হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে।” |
|
|
|
|
|