দার্জিলিং পাহাড়ে গিয়ে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা প্রভাবিত গাড়ির মালিকদের সংগঠনের ডাকা ‘পরিবহণ বন্ধ’-এর মুখে পাহাড়ে গিয়ে সভা করে মোর্চার উপরে চাপ তৈরি করলেন তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের কোর কমিটির চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। বুধবার দার্জিলিঙের বিজনবাড়ির ব্লক অফিসের হলঘর ভাড়া করে দলীয় কর্মিসভায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী সরাসরি বলেন, “পাহাড় অচল করার কোনও চেষ্টা রাজ্য সরকার বরদাস্ত করবে না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সে কথা বারবারেই জানিয়েছেন। তবুও হুটহাট বন্ধ ডাকার চেষ্টা হচ্ছে। পরিবহণ বন্ধ ডাকা হয়েছে। আমরা এ সব হতে দেব না। পাহাড়ের যানবাহন স্বাভাবিক থাকবে।”
এর পরেই উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী সরাসরি বিমল গুরুঙ্গের নাম করে হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, “পাহাড়ের উন্নয়ন থমকে দিতে চাইলেও বিমল গুরুঙ্গকে তা করতে দেবে না রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী উন্নয়ন বিরোধী সকলের বিরুদ্ধেই কড়া পদক্ষেপ করে থাকেন। তাই পাহাড়কে স্তব্ধ করার রাস্তায় না ছাড়লে বিমল গুরুঙ্গও কোনও ছাড় পাবেন না।”
প্রসঙ্গত, সংগঠনের দুই নেতার মুক্তির দাবিতে ১২ ঘণ্টার পরিবহণ বন্ধ ডেকেছে মোর্চা প্রভাবিত গাড়ি মালিকদের সংগঠনের কো-অর্ডিনেশন কমিটি। |
পাশাপাশি, রাজনৈতিক ভাবে মোর্চাকে মোকাবিলা করতে তাঁরা যে পাহাড়ের সর্বত্র সভা-সমাবেশ করবেন সে কথাও তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের কোর কমিটির চেয়ারম্যান জানিয়ে দেন। এতদিন তৃণমূল পাহাড়ের পাদদেশের এলাকায় দলীয় সংগঠন বাড়ানোর জন্য সভা-সমাবেশ করেছে।
কিন্তু, দার্জিলিং সদর লাগোয়া এলাকায় তৃণমূল কর্মিসভা করেনি। এদিন দার্জিলিং থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে বিজনবাড়িতে গিয়ে দলীয় কর্মিসভা করেছে তৃণমূল।
যে খবর পৌঁছেছে মোর্চার সদর দফতরেও। মোর্চার প্রচার সচিব হরকাবাহাদুর ছেত্রী অবশ্য দাবি করেছেন, “তৃণমূল যতই চেষ্টা করুক, পাহাড়ের বেশির ভাগ মানুষ আলাদা গোর্খাল্যান্ডের দাবি থেকে সরবেন না। সে জন্য তৃণমূলের কর্মিসভা নিয়ে আমরা ভাবছি না।” পাশাপাশি, মোর্চার প্রচার সচিবের পরামর্শ, “সমতলের নানা এলাকায় বিস্তর দুর্নীতি হচ্ছে। সে দিকে খেয়াল রাখুন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী।”
সেই সঙ্গে মোর্চার তরফে রাজ্য সরকারের কাজকর্ম নিয়েও সমালোচনা করা হয়েছে। মোর্চার প্রচার সচিবের অভিযোগ, “জনতার দেওয়া করের টাকায় সারদা-কান্ডের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে।”
এই দিন বেলা ২টো নাগাদ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বিজনবাড়িতে পৌঁছন। সেখানে গিয়ে ২০১১ সালের ২২ অক্টোবর যে ঝুলন্ত সেতু ভেঙে পড়েছিল তা নতুন করে নির্মাণ কেমন হয়েছে সেটা খতিয়ে দেখেন। এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের তরফে অভিযোগ করা হয়, নতুন সেতুর নির্মাণে ত্রুটি রয়েছে।
তাতে সেতু ফের ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে ভুক্তভোগী বাসিন্দাদের অনেকেরই দাবি। সেতু পরিদর্শনের পরে মন্ত্রী সেখানে দাঁড়িয়েই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মন্ত্রী বলেন, “সেতুর নির্মাণ ঠিকঠাক হয়নি বলে যে অভিযোগ উঠেছে তা পূর্ত দফতরকে খতিয়ে দেখতে বলেছি। ওই কাজের জন্য উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর ৩ কোটি টাকা দিয়েছে। সেখানে এমন ত্রুটিপূর্ণ কাজ হওয়ায় আমি লজ্জিত।” এর পরেই তিনি জানিয়ে দেন, তদন্তের পরে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সংস্থাকে কালো তালিকা ভুক্ত করা হতে পারে। যদিও মোর্চার তরফে জানানো হয়েছে, সব কাজই নিয়ম মেনে হয়েছে। মোর্চার প্রচার সচিব বলেন, “রাজ্য সরকার চাইলে যে কোনও বিষয়ে তদন্ত করাতে পারে। তা নিয়ে কিছু বলার নেই।”
এদিকে, আজ, থেকে পাহাড়েও সারদা-কান্ডের ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে টাকা বিলি হবে। মন্ত্রী জানান, বৃহস্পতিবার কার্শিয়াঙে দার্জিলিঙের জেলাশাসকের মাধ্যমে তালিকা ভুক্তদের মধ্যে টাকা বিলি হবে।
|