মিশন কুয়েত থেকে সরছেন না মেহতাবরা
অ্যাস্ট্রোটার্ফই ফাইনালে তুলবে ইস্টবেঙ্গলকে, আশায় ফালোপা
কুয়েতে গিয়ে হারলেও ‘মিশন কুয়েত’ থেকে সরছে না ইস্টবেঙ্গল। বরং কোচ মার্কোস ফালোপা মনে করছেন, এএফসি কাপের ফাইনালে যাওয়ার আশা শেষ হয়ে যায়নি।
“কুয়েতে ওরা নরম ঘাসের মাঠে খেলতে অভ্যস্ত। যুবভারতীর অ্যাস্ট্রোটার্ফ ওদের বিপদে ফেলবেই। সেটাই বড় প্লাস পয়েন্ট আমাদের। তা ছাড়া দর্শক সমর্থনও আমাদের দিকে থাকবে। ফলে আমরা ফাইনালে যেতেই পারি,” কুয়েত থেকে ফোনে বলে দিলেন ইস্টবেঙ্গলের ব্রাজিলিয়ান কোচ। মঙ্গলবার রাতে ম্যাচ হেরে ফেরার পর ফালোপা এখনও এতটাই আশাবাদী যে ফাইনালের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী দেখতে বুধবার রাতে ফের স্টেডিয়ামে গেলেন। সেখানে অন্য সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল কুয়েতের আল কাতসিয়া বনাম জর্ডনের আল ফয়জলি। অন্য দিকে কুয়েত এফসি-র কোচ মারিন ইয়ন আবার ম্যাচ জেতার পরও রীতিমতো চিন্তিত। “ইস্টবেঙ্গল যে ভাবে দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়িয়ে দু’ গোল করেছে, তাতে অ্যাওয়ে ম্যাচে আমাদের লড়াই বেশি কঠিন হয়ে গেল,” বলেন দু’বারের এএফসি কাপ জয়ী দলের রোমানিয়ান কোচ।
পরিস্থিতি যা তাতে ইস্টবেঙ্গলকে প্রথম ভারতীয় ক্লাব দল হিসেবে ফাইনালে উঠতে গেলে সহজ অঙ্ক হল---কলকাতায় কুয়েত এফসি-কে দু’ গোলে হারাতেই হবে। এক গোল খেলে দিতে হবে তিন গোল। হোটেল থেকে বেরোনোর আগে ফোনে ফালোপার সঙ্গে কথা বলে মনে হল, তিনি এ সব অঙ্ককে পাত্তাই দিচ্ছেন না। “ওদের দু’টি গোল তো অফসাইডে করা। আমাদের চিডি আর লোবো যদি সহজ গোলগুলো নষ্ট না করত তা হলে তো ম্যাচটা আমরা জিতেই যাই,” বলছিলেন ফুরফুরে মেজাজে থাকা লাল-হলুদের ব্রাজিলিয়ান কোচ।
বুধবার সকাল পর্যন্ত ফালোপার আশঙ্কা ছিল, ২২ অক্টোবর যুবভারতীর হোম ম্যাচে দলের এক নম্বর ডিফেন্ডার উগা ওপারাকে পাবেন না। কারণ গ্রুপ লিগে উগার একটি হলুদ কার্ড ছিল। মঙ্গলবার ফের আর একটি হলুদ কার্ড দেখেছিলেন নাইজিরিয়ান ডিফেন্ডার। কিন্তু এ দিনই এএফসির ম্যানেজার কম্পিটিশন জ্যাক সুপার লাল-হলুদ কর্তাদের জানিয়ে দেন, গ্রুপ লিগের কার্ড সেমিফাইনাল পর্বে গ্রাহ্য নয়। “আমার টিম যা খেলেছে তাতে আমি দারুণ আশাবাদী। দ্বিতীয়ার্ধে তো আমরাই খেললাম। কুয়েতের টিমটাকে বুঝতে একটু সময় লেগেছে। যখন আমরা ওদের খেলার স্টাইল বুঝতে পেরেছি তখনই পালটা আঘাত করেছি। আংশিক সফলও হয়েছি। এটা দেখার পর তাই ফাইনালে যাওয়ার ব্যাপারেও আমি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছি,” বলছিলেন চিডি-মেহতাবদের কোচ।
মঙ্গলবার রাতের ম্যাচে প্রচুর ভারতীয় খেলা দেখতে এসেছিলেন স্টেডিয়ামে। তাঁরা নাগাড়ে ইস্টবেঙ্গলের জন্য চেঁচিয়েছেন। ম্যাচের পর ফুটবলারদের উৎসাহ দিতে টিম বাসের পাশেও ভিড় করেছিলেন অনেকে। এ দিন ইস্টবেঙ্গল হোটেলে এসেছিলেন কুয়েতের এক প্রাক্তন কোচ। চিডি-লালরিন্দিকাদের শুভেচ্ছা জানাতে। টিম সূত্রের খবর তিনি নাকি ফালোপাকে বলে গিয়েছেন, “একটু অঙ্ক করে খেলতে পারলে আপনারা দু’গোলে জিততেই পারেন।”
বুধবার ইস্টবেঙ্গলের অনুশীলন ছিল না। ফুটবলাররা হোটেলেই জিম করেন। ফালোপার মতো তাঁর দলের ফুটবলাররাও মনে করছেন, যুবভারতীতে একটু ভাল খেলতে পারলেই দু’গোলের ব্যবধান মুছে ফেলা সম্ভব। দলের অধিনায়ক মেহতাব হোসেন বলছিলেন, “অনেকে ভেবেছিলেন গত বারের এএফসি চ্যাম্পিয়নদের কাছে আমরা সাত-আট গোল খেয়ে ফিরব। কিন্তু চার গোল খাওয়ার পরও আমাদের টিম যে ভাবে দু’ গোল শোধ করেছে, তাতে যুবভারতীতে আমরাই এগিয়ে থাকব।” তাঁর রুম-মেট আর এক বঙ্গসন্তান সৌমিক দে-ও বললেন, “নিজেদের ভুলের জন্যই গোল খেয়ে গিয়েছি। না হলে ম্যাচটা আমরা জিততেই পারতাম।” মেহতাবও যোগ করেন, “কারও একার দোষে আমরা গোল খাইনি। শুধু ডিফেন্ডাররাই দায়ী নয়, আমাদের সবারই দোষ ছিল।”
কুয়েত এফসি-র বিরুদ্ধে আরও আক্রমণাত্মক হলে ইস্টবেঙ্গল জিতত, তাঁর স্ট্র্যাটেজি নিয়ে ওঠা এই সমালোচনাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ ইস্টবেঙ্গল কোচ। “আগে বিপক্ষ টিমকে আমরা দেখে নিতে চেয়েছিলাম। সেটা দেখতেই হয়। কারণ টিমটা গত বারের চ্যাম্পিয়ন। আমি স্বীকার করছি প্রথমার্ধটা ওরাই খেলেছে। কিন্তু বিরতির পর আমরা যখন ওদের স্ট্র্যাটেজি বুঝে আক্রমণে যাই তখন কিন্তু ম্যাচ আমাদের মুঠোয় চলে আসে।” ঠিক এই কথাই কুয়েতের সাংবাদিকদের কাছে ম্যাচের পর বলেছেন ফালোপা। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধে সাড়ে সাতটায় শহরে পৌঁছবে ফালোপা ব্রিগেড। তার চব্বিশ ঘণ্টা আগে কুয়েতের হোটেল থেকে মেহতাবের অনুরোধ, “আমাদের ফাইনালে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। যেতে পারলে সেটা ভারতীয় ফুটবলের পক্ষে বড় ঘটনা হবে। সবাইকে আমি অনুরোধ করব, সমালোচনা না করে আমাদের পাশে থাকার জন্য।” ইস্টবেঙ্গলের এএফসি কাপে টানা নয় ম্যাচে অপরাজিত থাকার রেকর্ড বুধবার রাতে থেমে গেলেও, এ দিন একটি রেকর্ড ছুঁয়ে ফেললেন লালরিন্দিকা। এএফসি কাপে এত দিন ভারতীয় ফুটবলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন ভাইচুং ভুটিয়া। পাহাড়ি বিছের চার গোলের রেকর্ড ছুঁয়ে ফেললেন আর এক পাহাড়ি। কুয়েতের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার গোল করে।
ফুটবলারদের আত্মবিশ্বাস, লালরিন্দিকার রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলা, ওপারাকে নিয়ে নিঃশেষ হওয়া উদ্বেগ--- ফালোপাকে শুধু নয়, পুরো লাল-হলুদ শিবিরকেই বাড়তি মনোবল জোগাচ্ছে। আর সেটাই কুড়ি দিন পর ঝড় হয়ে আছড়ে পড়বে এই ধারণা নিয়েই যুবভারতীতে ভিড় করবেন লাল-হলুদ সমর্থকরা। ফাইনালে ওঠার ইতিহাস দেখার জন্য।

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.