ভারতীয় ক্রিকেট রাজনীতির টালমাটাল পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দিতে বোর্ড প্রেসিডেন্ট নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের হাতে এখন অন্যতম অস্ত্র সচিন তেন্ডুলকরের দুশোতম টেস্ট। সুপ্রিম কোর্টে তাঁর ভাগ্য নির্ধারণ হওয়ার পরই এই তাস ফেলতে চান শ্রীনি। যার ফলে, আজ বৃহস্পতিবার বোর্ডের ক্রীড়াসূচি কমিটির বৈঠকও পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে বৈঠকেই ঠিক হওয়ার কথা ছিল সচিনের দুশোতম টেস্টের কেন্দ্র। সিএবি কর্তারাও তাকিয়ে এই বৈঠকের দিকে। সচিনের দুশোতম টেস্ট কোথায় হয়, তা দেখেই নিজেদের চূড়ান্ত স্টান্স ঠিক করবেন তাঁরা।
বৈঠক যে পিছিয়ে গিয়েছে, তা স্বীকার করে নিচ্ছেন কমিটির নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান রাজীব শুক্ল। বুধবার দিল্লি থেকে ফোনে এ কথা জানিয়ে শুক্ল বলেন, “আগে মার্কেটিং কমিটির মিটিং হোক। তার পর আগামী সপ্তাহে আমরা বসব।” শুক্লর বৈঠক পিছনোর কারণ অবশ্য বিশেষ পাত্তা পাচ্ছে না ভারতীয় ক্রিকেট রাজনীতির ওয়াকিবহাল মহলে। বরং সেখানে ঘোরাফেরা করছে অন্য কথা। সেখানে খবর, কোন সংস্থাকে এই টেস্ট ‘উপহার’ দিলে ক্রিকেট রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি ফায়দা তোলা যাবে, এই জটিল অঙ্কের সমাধান শ্রীনিবাসন এখনও করে উঠতে পারেননি। তাই পিছিয়ে গেল বৈঠক।
সুপ্রিম কোর্টে তাঁর ভাগ্য ঠিক না হওয়া পর্যন্ত ঠিক মতো ঘুঁটিই সাজাতে পারছেন না আপাতত নিষ্ক্রিয় বোর্ড প্রেসিডেন্ট। ও দিকে শ্রীনি-বিরোধীরা এককাট্টা হওয়ার তোড়জোড় শুরু করেছেন। ১০ অক্টোবর রাজকোটে ভারত-অস্ট্রেলিয়া টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। সেই ম্যাচে বিরোধীদের জমায়েত করার চেষ্টা শুরু করেছেন সৌরাষ্ট্র ক্রিকেট প্রধান নিরঞ্জন শাহ। শ্রীনি-বিরোধী বলে পরিচিত সংস্থার কর্তাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন তিনি। সব থেকে তাৎপর্যপূর্ণ হল, সিএবি কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে-র মুখে শ্রীনিবাসন বিরোধী কথাবার্তা শুনে সেই বৈঠকে সিএবি কর্তাদেরও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন নিরঞ্জন।
১৮ অক্টোবর মুম্বই ক্রিকেট সংস্থার নির্বাচন। এমসিএ-তে শরদ পওয়ারের ক্ষমতায় ফিরে আসার মঞ্চও তৈরি করে দিয়েছে বর্তমান ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী। ১০ অক্টোবর বিরোধীদের জমায়েত সফল হলে এবং তার আট দিন পর পওয়ার ক্ষমতায় এলে বোর্ডে শ্রীনি-বিরোধীদের বিদ্রোহ ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। সচিন-তাস তাই খুব অঙ্ক কষে খেলতে চান শ্রীনি। সোমবার বিশ্বরূপ দে-র ‘গাঁধীগিরি-বিস্ফোরণের’ পর শ্রীনি বিরোধীরা অনেকেই ধরে নিয়েছেন সিএবি এ বার থেকে তাঁদের দিকেই। সে জন্যই এতটা উৎসাহী নিরঞ্জনরা। নিমন্ত্রণ করার পাশাপাশি ফোনে কবেকার বিমান টিকিট পাঠাতে হবে, তাও খোঁজ নেওয়া হয়েছে। সিএবি কর্তারা অবশ্য এখনও নিজেদের স্টান্স ঠিক করেননি। সচিনের টেস্ট কোথায় যায়, তা দেখেই সিদ্ধান্ত নেবেন তাঁরা। বিশ্বরূপ বুধবার বলেন, “সিদ্ধান্তটা নিতে সময় লাগবে। তাড়াহুড়ো করতে চাই না। পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে সিএবি।”
শ্রীনিবাসন অবশ্য একটা চেষ্টা চালাচ্ছেন সিএবি-কে ঠেকিয়ে রাখার। মঙ্গলবার জগমোহন ডালমিয়াকে ফোন করেছিলেন শ্রীনি। যেখানে বোর্ড প্রেসিডেন্ট নাকি আশ্বাস দেন, “নিজেদের বঞ্চিত মনে করবেন না। আমরা আপনাদের পাশেই থাকব।” |