অতিরিক্ত ডিফেন্সিভ না খেললে জিততেও পারত
কুয়েত এসসি-৪ (জেমা-২, ওয়ালিদ, হামামি)
ইস্টবেঙ্গল-২ (ওপারা, লালরিন্দিকা)
রাতে ম্যাচটা দেখার পর একটা অদ্ভুত ইচ্ছে হল হঠাৎ। নিজেকে ফালোপার চেয়ারে বসিয়ে দিলাম। দিয়ে ভাবতে শুরু করলাম, আগামী ২২ অক্টোবরের যুবভারতীতে যদি মিস্টার ফালোপার বদলে যদি আমাকে টিম নিয়ে নামতে হত, এই কুয়েত এসসি-র বিরুদ্ধে কী স্ট্র্যাটেজি নিয়ে এগোতাম?
অঙ্কে ঢোকার আগে একটা কথা বলে নেব। আজ দ্বিতীয়ার্ধে যে ইস্টবেঙ্গলকে দেখলাম, ওরা যদি ঠিক একই খেলাটা তুলে আনে যুবভারতীতে, তা হলে ফাইনাল যাওয়ার সম্ভাবনা কিন্তু যথেষ্ট! ইন্টারনেটে দেখছিলাম, ফাইনালে উঠতে গেলে যুবভারতীতে ইস্টবেঙ্গলকে ২-০ কিংবা ৩-১ জিততে হবে। আমার মনে হয়, মেহতাবরা সেটা পারবে। টু নিল দিয়ে ম্যাচ নিয়ে যাওয়াটা মোটেও কঠিন হবে না, যদি কেউ চোট না পায়, যদি কয়েকটা ভুলত্রুটি শুধরে নেওয়া যায়। আমার তো মনে হয়, যাঁরা আজ ম্যাচটা দেখলেন না, তাঁরা ঠকে গেলেন। বিদেশের মাঠে চার গোল খেয়ে পাল্টা একটা ভারতীয় টিম দু’গোল দিয়ে আবার যুদ্ধে ব্যালান্স এনে ফেলছে, এমন ছবি কবে দেখেছে ভারতীয় ফুটবল? আর কাদের বিরুদ্ধে? যে দেশের ফিফা র্যাঙ্কিং একশো নয়। আমাদের (একশো পঞ্চান্ন) চেয়ে ছেচল্লিশ ধাপ এগিয়ে!
ওপারাডিকা
ডিকা
যাক গে। এ বার ফাইনালে ওঠার স্ট্র্যাটেজিতে ঢুকি। অনেকে দেখছি, চতুর্থ গোলটা জঘন্য ভাবে হজম করার পর গুরপ্রীতকে তুলোধোনা করছেন। স্লোগান উঠছে, গুরপ্রীত বসাও, ফাইনালে যাও! পাদাংয়ের বিরুদ্ধেও ওর ভুলেই গোল খেতে হয়েছিল। আমার মনে হয়, মঙ্গলবারের চতুর্থ গোলটা বাদ দিলে গুরপ্রীতের তেমন ভুলভ্রান্তি নেই। এটা ঠিক যে ও আউটিংয়ে গণ্ডগোল আছে। উত্তেজনায় মাঝে মাঝে গোল ছেড়ে বেরিয়েও আসছে। কিন্তু ওর বয়স অল্প, ঠিক করে ম্যাচের গুরুত্ব বোঝালে আশা করছি, নিজেকে ঠিক করে নেবে। কিন্তু সৌমিককে কোনও ভাবেই মাঝমাঠে খেলানো চলবে না। সৌমিক ও রবার্ট দু’জনেই লেফট ব্যাকের প্লেয়ার। কে ভাল, আগে ফালোপা সেটা দেখুন। দেখে, এক জনকে রাখুন।
বরং আমি চাইব দুই স্টপার ওপারা আর অর্ণবের আগে আরও এক জন স্টপারকে রাখা হোক। তা হলে ডিফেন্সে ব্লকিংয়ের কাজটাও হবে, আবার মিডফিল্ডে বল সাপ্লাইটাও হবে। আর সুয়োকা যদি চোট সারিয়ে ফিরে আসে, তা হলে কিন্তু কুয়েতের টিমটার ম্যাচ বার করা প্রবল কঠিন হবে। টিমটার আক্রমণ যতটা ভাল, ডিফেন্স ততটাই খারাপ। আর যুভারতীর এক লক্ষের শব্দব্রহ্ম কুয়েত এসসি কতটা সামলাতে পারবে, সেটাও প্রশ্ন।
ফালোপা আজই জিততে পারতেন। কিংবা ম্যাচ ড্র রেখে কুয়েত ছাড়তে পারতেন। অবিশ্বাস্য মনে হলেও দু’টোর একটাও অসম্ভব ছিল না। দু’টো ব্যাপার ভোগাল ফালোপাকে। এক, কুয়েত এসসি-কে অফসাইড ট্র্যাপে ফেলতে গিয়ে প্রথম গোল খেয়ে যাওয়া। অফসাইড ট্র্যাপ, আমাদের যুগে চলত। আধুনিক ফুটবলে চলে না। দুই, প্রথম থেকেই আল্ট্রা ডিফেন্সিভ স্ট্র্যাটেজিতে ঢুকে পড়া। ফালোপা কেন প্রথমেই ৪-৪-১-১ ছকে যাবেন? ওদের তো হারানোর কিছু ছিল না। প্রদীপদা একটা কথা বারবার বলতেন আমাদেরমাঠে নেমে প্রতিপক্ষকে নিয়ে ভেবো না, আর হারার আগে হেরে যেও না। ফালোপার বিদেশে কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও দেখলাম, ভুলটা করল। তার উপর স্ট্র্যাটেজির ভুলে প্রথম গোলটা খেয়ে যেতে মাঝমাঠটাও কেমন যেন দাঁড়িয়ে পড়ল। জানি না ফালোপা কেন মোগা-চিডিকে টিমে রেখেও ৪-৩-৩ গেলেন না? আর একটা ভুল হতে দেখলাম এ দিন। গত মঙ্গলবারেও পাদাংয়ের উইলসনরা বেছে নিয়েছিল লাল-হলুদ রক্ষণের ডান দিকটাকে। কুয়েত এএসিও দেখলাম প্রথম মিনিট থেকেই নিশানা বানিয়ে ফেলল নওবা সিংহের প্রান্তটাকে। ওদিক থেকেই জেমা, আলি বাবা, রোজেরিনহোরা ঢুকে পড়ছিল।
দ্বিতীয় পর্বে ইস্টবেঙ্গলকে অন্তত ২-০ জিততে হবে।
কোনও ভাবে ড্র হলেই ইস্টবেঙ্গল ছিটকে যাবে।
কুয়েত এক গোল করলে ইস্টবেঙ্গলকে ২ গোলের
ব্যবধানে (৩-১) রেখে জিততে হবে।
ফালোপা ব্যাপারটা ধরতে পারলেন শেষ পর্যন্ত ঠিকই। কিন্তু ততক্ষণে অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে। বিশেষ করে খাবরার জায়গায় লালরিন্দিকাকে নামানোটা ফালোপার মাস্টারস্ট্রোক। ওর কর্নার থেকেই ওপারার হেডে ৪-১ করা। তার পর খেলার একদম শেষ দিকে কুয়েত এএসি-র রাইট ব্যাককে কাটিয়ে ডিকার জোরালো শটে গোলটা মনে রাখার মতো। লোবোকে শুরু থেকে এ দিন যদি কোচ মাঠে রাখতেন তা হলেও অন্য রকম কোনও ফল হতেই পারত বলে আমার ধারণা।
সে যাই হোক, এএফসি কাপের ফাইনাল খেলার স্বপ্ন এখনও দূরে সরে যায়নি। যুবভারতীর শেষ পর্বটাও এ বার মনে রাখার মতো হয় কি না, সেটাই এখন দেখার।

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.